সকাল ১১:১১, ১১ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:

প্রাসাদ-দামী গাড়ি-মেগা প্রমোদ তরী : কাতারের আমিরের বিলাসবহুল জীবন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি বর্তমানে ভারতে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে আজ সোমবার ভারত সফরে এসেছেন তিনি। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, জ্বালানি এবং বিনিয়োগ নিয়ে এ সফরে কথা বলবেন দুই সরকারপ্রধান। কূটনীতিকদের মতে, ভারত এবং কাতারের মধ্যকার অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক বন্ধন দৃঢ় করাই শেখ তামিমের ভারত সফরের প্রধান কারণ।

কাতার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর মধ্যে একটি এবং দেশটির প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানি তেলের ভাণ্ডারও বিশাল। গত প্রায় ২শ’ বছর আগে স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে কাতারের উত্থানের পর থেকেই দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতায় রয়েছে আল-থানি পরিবার এবং কাতারের আমির শেখ তামিম এই আল-থানি পরিবারের সদস্য। ফলে তেল-গ্যাস রপ্তানি ও কৌশলগত বিনিয়োগের জেরে গত ২০০ বছরে এ পরিবারের প্রত্যেক সদস্যকে রীতিমতো ধনকুবের করে তুলেছে।

কাতারের সাবেক আমির বা রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান শেখ হামাদ বিন খলিফা আল থানির বড় ছেলে শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি কাতারের আমির হন ২০১৩ সালে। তিনি কাতারের ১১ তম আমির; তার আগে আরও ১০ জন কাতারের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের তথ্য অনুযায়ী, আল-থানি পরিবারের সদস্যদের মোট সম্পত্তির পরিামাণ ৩৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি। এই মুহূর্তে আল-থানি পরিবার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাজবংশ। সেই হিসেবে শেখ তামিমের ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ তেমন নয়; ধারণা করা হয়, তার সম্পত্তির পরিমাণ ২০০ কোটি ডলারের কিছু বেশি।

তবে তার অর্থ-সম্পদের পরিমাণ কতো— সে সম্পর্কে সঠিক এবং সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। রাষ্ট্রীয়ভাবে এ তথ্য গোপন রাখা হয়। তবে আমিরের বিলাস-বহুল জীবনযাপন দেখলে তার সম্পদের সম্পর্কে খানিকটা হলেও আঁচ পাওয়া যায়। একাধিক প্রাসাদ, অত্যাধুনিক সুপার কারের সংগ্রহ, বিমান পরিষেবা সংস্থা, দামি পেইন্টিংয়ের সংগ্রহ, ফুটবল ক্লাব প্রভৃতি প্রতিনিয়ত শেখ তামিমের বিপুল বিত্ত-বৈভবের কথা জানান দেয়।

প্রাসাদ
আল-থানি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে যারা দেশে আছেন, তারা বসবাস করেন রাজধানী দোহায় রাজকীয় প্রাসাদে। বিশাল এই প্রাসাদের অন্তত ১৫টি স্থানে স্বর্ণের কারুকাজ রয়েছে এবং এর গ্যারেজে ৫০০টি গাড়ি রাখা যায়। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দেশ ওমানে আমিরের নিজস্ব একটি প্রাসাদ রয়েছে।

বিলাসী প্রমোদতরী
শেখ তামিমের প্রমোদতরী ‘কাতারা’ বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও বিলাসবহুল প্রমোদতরীগুলোর মধ্যে একটি। ১২৪ মিটার লম্বা এই তরীটির দাম ৪০ কোটি ডলার। একটি হেলিপ্যাড এবং যাত্রীদের জন্য বেশ কয়েকটি ডেক রয়েছে কাতারায়।

কাতারের আমিরের অবশ্য মোট চারটি প্রমোদতরী ছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে কাতার শিপ ইয়ার্ডে আগুন লেগে ৩টি প্রমোদতরী ভস্মিভূত হয়। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া প্রতিটি প্রমোদতরীর দাম ছিল কয়েক কোটি ডলার।

নিজস্ব বিমান পরিষেবা সংস্থা
‘কাতার আমিরি ফ্লাইট’ নামের একটি নিজস্ব বিমান পরিষেবা সংস্থা রয়েছে কাতারের আমিরের। শুধু রাজপরিবারের সদস্য এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাই কেবল এই পরিষেবা নিতে পারবেন। কাতার আমিরি ফ্লাইটের উড়োজাহাজের সংখ্যা মোট ১৪টি। এসব উড়োজহাজের মধ্যে তিনটি বোয়িং ৭৪৭-৮ বিমান রয়েছে। প্রতিটির দাম ৪০ কোটি ডলারের বেশি। বাকি ১১টি এয়ারবাস বিমান। এগুলোর প্রতিটির দাম ১০ কোটি থেকে ৫০ কোটি ডলার।

গাড়ির সংগ্রহ
বুগাতি দিভো, ভেইরন, শিরন, লা ফেরারি অ্যাটার্তা, ল্যাম্বরগিনি সেনটেনারিও, মার্সিডিজ এএমজি সিক্স ইনটু সিক্স, রোলস-রয়েস ফ্যান্টমসেহ বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বেশ কিছু গাড়ি রয়েছে শেখ তামিমের সংগ্রহশালায়।

চিত্রকর্ম
চিত্রকর্ম বা পেইন্টিংয়ের প্রতি দুর্বলতা রয়েছে কাতারের আমিরের। তার সংগ্রহশালায় বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে দামী কিছু চিত্রকর্ম রয়েছে। এগুলোর মধ্যে পল কেজান্নের ‘দ্য কার্ড প্লেয়ার্স’ (দাম ২৫ কোটি ডলার), মার্ক রোথকো’র ‘হোয়াইট সেন্টার’ (দাম ৭ কোটি ২৮ লাখ ডলার), অ্যান্ডি ওয়ারহোলের ‘মেন ইন হার লাইফ’ (দাম ৬ কোটি ৩৪ লাখ ডলার) উল্লেখযোগ্য।

ফুটবল ক্লাব
২০০৩ সালে ক্ষমতা নেওয়ার পরের বছর থেকে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বিনিয়োগ করা শুরু করেন শেখ তামিম। বর্তমানে প্যারিসভিত্তিক ফুটবল ক্লাব সেইন্ট-জার্মেই’র মালিক তিনি। এছাড়া পর্তুগালের এসসি ব্রাগা, স্পেনের মালাগা সিএফে শেয়ার রয়েছে তার পরিবারের সদস্যদের। ২০২২ সালে বিশ্বকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে কাতার। এই টুর্নামেন্টকে সফল করতে গত ১২ বছরে ৩০ কোটি রুপি বিনিয়োগ করেছে দেশটি।

বৈশ্বিক বিনিয়োগ
কাতারের বৈশ্বিক বিনিয়োগ সংক্রান্ত কর্তৃপক্ষে নাম কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি (কিউআইএ)। বর্তমানে কিউআইএ’র তহবিলে রয়েছে ৪ হাজার ৫০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। বার্কলে, ভোক্স ওয়াগনসহ বিশ্বের কয়েকটি প্রথম সারির কোম্পানিতে শেয়ার রয়েছে কিউআইএ’র। লন্ডনের হিথ্রো বিমান বন্দর ও যুক্তরাষ্ট্রের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়েও শেয়ার রয়েছে। এছাড়া লন্ডনের বিলাসবহুল ডিপার্টমেন্টাল স্টোর হ্যারোডসের মালিকও কিউআইএ। রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান হিসেবে কিউআইএ’র এসব বিদেশি বিনিয়োগ দেখাশোনা করেন শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি।