দ. কোরিয়ার নির্বাচনে পেঁয়াজের দামই হারিয়ে দিলো ক্ষমতাসীনদের?

দ. কোরিয়ার নির্বাচনে পেঁয়াজের দামই হারিয়ে দিলো ক্ষমতাসীনদের?

স্বাধীনমত ডেস্ক
দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদ নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে বিজয়ী হয়েছে উদারপন্থি বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি (ডিপিকে)। ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টিকে (পিপিপি) বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে তারা। এবারের নির্বাচনে ডিপিকে’র সঙ্গে জোট বেঁধেছিল কয়েকটি ছোট দল। তারা যৌথভাবে জাতীয় পরিষদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৯২টিতে জিতেছে।

এবারের সাধারণ নির্বাচনকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের জন্য গণভোট হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও, আরও তিন বছর মেয়াদ বাকি রয়েছে তার। ফলাফলের জেরে এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হান দুক-সু। দলের অন্যতম নেতা হান ডং-হুনসহ আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও পদ ছেড়েছেন।

ইউন এবং তার দল পিপিপি’র জন্য রীতিমতো বিপর্যয় ডেকে এনেছে এই পরাজয়। আইনসভায় বিরোধী দলের আধিপত্যের কারণে আগে থেকেই কোনো এজেন্ডা বাস্তবায়নে হিমশিম খেতে হতো ক্ষমতাসীনদের। এখন বুধবারের নির্বাচনে বিজয়ের ফলে ডিপিকে পার্লামেন্টে যেকোনো আইন দ্রুত প্রণয়ন করতে সক্ষম হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার নির্বাচনে ছোট দলগুলোর ভূমিকাও লক্ষণীয়। ডিপিকে এবং পিপিপি দুই দলের কাছেই তাদের কদর রয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার নির্বাচনী ব্যবস্থায় পার্লামেন্টেটর ৩০০ আসনের মধ্যে ৪৭টি আসন প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে দলগুলোর মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়। এই প্রক্রিয়ায় ছোট দলগুলোও কিছু আসন পেয়ে থাকে। এই আসনগুলোর জন্যই বড় দলগুলো তাদের সঙ্গে রাখতে চায়।

ভোটারদের ওপর মূল্যস্ফীতির প্রভাব নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই, এমন অভিযোগে কয়েক সপ্তাহ ধরে সমালোচনার মুখে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল।

গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ার অভিজাত ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে একেকটি আপেলের দাম উঠেছিল সাত ডলার পর্যন্ত। এতটা না হলেও সাধারণ মানুষ যেসব জায়গায় কেনাকাটা করেন, সেখানেও ফলের দাম তাদের ক্রয়ক্ষমতাকে ছাপিয়ে যায়। নিত্যপণ্যের দামের উর্ধ্বগতিতে হাঁসফাঁস করতে থাকে মানুষ।

প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল তখন একটি খাদ্যপণ্যের বাজার পরিদর্শনে যান। উদ্বেগ দূর করতে এমন পরিদর্শন কতটা কাজে আসবে তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল জনসাধারণের মধ্যে।

এ অবস্থায় স্প্রিং ওনিয়ন (বসন্তকালীন পেঁয়াজ)-এর দাম ‘রিজনেবল’ (যৌক্তিক) দেখে তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ইউন। তিনি বলেছিলেন, এক প্যাকেট বা এক আঁটি সবুজ পেঁয়াজের দাম ৮৭৫ ওন (দক্ষিণ কোরীয় মুদ্রা) হওয়া ‘যুক্তিসঙ্গত’। ৮৭৫ দক্ষিণ কোরীয় ওন বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭১ টাকার মতো।

মূল্যছাড়ে দিয়ে পণ্যটি এই দামে বিক্রি করা হচ্ছিল। ভর্তুকির কারণে ওই ছাড়টুকু দেওয়া সম্ভব হয়েছিল। নাহলে, সাধারণত তিন থেকে চার হাজার ওনের মতো খরচ করতে হতো।

ফলে, প্রেসিডেন্টের মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা। সবুজ পেঁয়াজ নিয়ে বিক্ষোভে নামেন কৃষকরা। ডিপিকে’র নির্বাচনী সমাবেশেও পেঁয়াজকে ‘প্রপস’ (উপকরণ) হিসেবে ব্যবহার করা হয়। তখন এক বিরোধী দলীয় নেতা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিলেন, স্প্রিং ওনিয়নই প্রেসিডেন্টকে ধরাশায়ী করবে। তবে, দক্ষিণ কোরিয়ার সংসদীয় নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট ইউনের দল হেরে যাওয়ার পেছনে দ্রব্যমূল্য একটি কারণ মাত্র। বাস্তবে তালিকাটা আরও দীর্ঘ।

যে কারণে হারলো ক্ষমতাসীনরা
ইউন দক্ষিণ কোরীয় নাগরিকদের কাছে বরাবরই অজনপ্রিয়। দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে কম, মাত্র ০.৭ শতাংশ ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তার জনসমর্থন ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের মধ্যে ঘুরপাঁক খেয়েছে। গত মাসের একটি জরিপে দেখা যায়, অর্ধেক অংশগ্রহণকারীই প্রেসিডেন্টের প্রতি অসন্তুষ্ট।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ড. লি সানসিন বলেন, অনেকগুলো ঘটনায় তার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে গেছে। প্রথমত, কূটনৈতিক শিষ্টাচারের ঘাটতি, যা তাকে আন্তর্জাতিক শিরোনামে পরিণত করেছিল।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে দেখা করার পর মার্কিন আইনপ্রণেতাদের নিয়ে বেখেয়ালে করা ইউনের কিছু কটু মন্তব্য মাইকে শোনা গিয়েছিল। এটি বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে বলে মনে করেন কোরীয়রা। এরপর রয়েছেন ফার্স্ট লেডি কিম কিওন হি। অধ্যাপক লির মতে, মানুষ প্রেসিডেন্টের চেয়েও বেশি অপছন্দ করেন তার স্ত্রীকে।

তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণামূলক প্রবন্ধে চৌর্যবৃত্তি এবং পুঁজিবাজারে কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। গত বছর, অভিযোগ ওঠে, তিনি একটি দামি হাতব্যাগ ঘুস নিয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ফার্স্ট লেডি হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করলেও কিমকে পরে আর তার স্বামীর সঙ্গে জনসমক্ষে দেখা যায়নি।

একই সময়ে, ফার্স্ট লেডির পাশাপাশি দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিরুদ্ধেও আলাদা আলাদা দুর্নীতির অভিযোগ আসতে থাকে। তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন বলে দাবি করেন বিরোধীরা।

রাজনৈতিক বিতর্কও বাড়ছিল পিপিপির মধ্যে। এর ফলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ছিল দলটি। তার ওপর দুর্নীতির অভিযোগ নাস্তানাবুদ করে ফেলে তাদের।

ফলাফলের পর বৃহস্পতিবার ডিপিকে নেতা লি জায়ে-মিউং বলেছেন, এই বিজয় শুধু ডেমোক্রেটিক পার্টির বিজয় নয়, বরং জনগণের জন্যই এক মহান অর্জন। তিনি বলেন, চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় দুই পক্ষের রাজনীতিবিদদেরই সর্বশক্তি প্রয়োগ করে নামতে হবে।

লি ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইউনের কাছে অল্প ব্যবধানে হেরে গিয়েছিলেন। বুধবারের ফলাফল হয়তো তাকে আরেকবার প্রেসিডেন্ট পদের দৌড়ে নামতে সাহস জোগাবে।

More News...

কুষ্টিয়ায় নকল আকিজ বিড়িসহ বিড়ি তৈরির উপকরণ জব্দ

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দুর্নীতি মামলা: স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এমডির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা