দেশ শান্তিতে আছে এটা কারো হয়ত পছন্দ হচ্ছে না: শিক্ষামন্ত্রী

দেশ শান্তিতে আছে এটা কারো হয়ত পছন্দ হচ্ছে না: শিক্ষামন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদন : গত ২০ মার্চ মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রাম কুমার উচ্চবিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ও গণিতের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল দশম শ্রেণিতে বিজ্ঞান পড়ানোর সময় প্রসঙ্গক্রমে শিক্ষার্থীর প্রশ্নে ধর্ম নিয়ে কথা বলেন। ওই সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী তার কথাগুলো রেকর্ড করে। পরে ধর্ম নিয়ে ‘আপত্তিকর’ কথা বলার অভিযোগ তুলে এলাকায় শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের বিক্ষোভ শুরু করা হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশ তাদের নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়।

২২ মার্চ হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ এনে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী (ইলেক্ট্রশিয়ান) মো. আসাদ বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। ২৩ মার্চ হৃদয় মণ্ডলকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করলে তাকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন বিচারক।

এ ঘটনায় নিজের অভিমত তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘আমার কাছে এটা মনে হচ্ছে যে আমাদের আশপাশের অনেক দেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে। বাংলাদেশ শান্তিতে আছে এই শান্তিটা কারো কারো হয়ত পছন্দ হচ্ছে না।’

শনিবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী দুঃখ প্রকাশ করে এমন অবস্থার নিরসনে যা করণীয় তা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কোনোভাবেই যেন কেউ হয়রানির শিকার না হয়।’

সবাইকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একটু বোধ হয় ধৈর্য ধরার প্রয়োজন রয়েছে। যে কোনো সময় যে কোনো ছুতায় আমাদের শান্তি-শৃঙ্খলা, আমাদের সম্প্রীতি নষ্ট করা ও সেগুলো উসকে দেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়।’

তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অজুহাতে একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে যা করা হয়েছে- তা দুঃখজনক। আমরা আমাদের পদ্ধতিতে বিষয়টি দেখছি।’

হৃদয় মণ্ডলের মুক্তির বিষয়ে কী করা হচ্ছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এ অবস্থাটি নিরসনে আমাদের দিক থেকে যা করণীয় সে চেষ্টা আমরা করব।’

দীপু মনি বলেন, ‘আমাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য ধর্মীয় সম্প্রীতি ধরে রাখা দরকার একইসঙ্গে আমাদের শিক্ষকদের নিরাপত্তা দরকার। আমাদের বিজ্ঞান প্রযুক্তি নিয়েও এগিয়ে যেতে হবে।সেখানে শিক্ষকের মর্যাদার ও নিরাপত্তার দিকও আমার দেখতে হবে। শিক্ষায় এগিয়ে যেতে হলে শিক্ষকের সামাজিক এবং আর্থিক নিরাপত্তাও দিতে হবে।’

এ সময় কাউকে হয়রানি করার বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছেন মন্ত্রী। বলেন, ‘কোনোভাবেই যেন কেউ হয়রানির শিকার না হয়। যে কোনো ধরনের অভিযোগ আসতেই পারে। অভিযোগ আসলে তদন্ত হবে। কিন্তু কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয়।ধর্ম আমার ব্যক্তিগত বিষয়। ধর্মীয় বোধ আমি আমার মতো করে ধর্মকে পালন করব। যে যার ধর্ম পালন করবে তার বিশ্বাস নিয়ে। সেটাই তার অধিকার।’

শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের সেদিনের ক্লাশের বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘একজন শিক্ষক তিনি বিজ্ঞান পড়াবেন। আমরা তো বিজ্ঞান বিবর্জিত হতে পারি না। তবে আমাদের সবার জীবনে ধর্ম একটি বড় ভূমিকা পালন করে। ধর্মটা যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। ধর্ম শিক্ষার ক্লাশ হলে সেখানে ধর্ম শেখাবে। বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মের সংঘর্ষের তো জায়গা নেই আসলে। যদি কোথাও সংঘর্ষ হয়, তাহলে সেখানে আমি কোনো মন্তব্য করতে পারি না। কিন্তু একজন শিক্ষক হয়রানি মধ্যে পড়া উচিত নয়। তিনি কী বলেছেন, কীভাবে বলেছেন- এ বিষয়গুলো তদন্ত হতে পারে। কিন্তু পুরো ঘটনাটাই আমার কাছে মনে হয়েছে খুবই দুঃখজনক।’

More News...

কুষ্টিয়ায় নকল আকিজ বিড়িসহ বিড়ি তৈরির উপকরণ জব্দ

মার্কেন্টাইল ব্যাংকের দুর্নীতি মামলা: স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক এমডির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা