লোকবল সংকটে যশোরের মণিরামপুরের বিএডিসি অফিস, চরম বিপাকে পড়েছে গ্রাহকরা

লোকবল সংকটে যশোরের মণিরামপুরের বিএডিসি অফিস, চরম বিপাকে পড়েছে গ্রাহকরা

হাফিজুর শেখ মণিরামপুর, (যশোর) : সেচ সংক্রান্ত অভিযোগ দিতে সোমবার (১০ জানুয়ারি) দুপুর পৌনে একটায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) মণিরামপুর শাখায় আসেন কেশবপুরের বুড়িহাঁটি এলাকার মিজানুর রহমান। অফিসে এসে প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখে চরম বিপাকে পড়ে যান তিনি। মোবাইল নম্বর না থাকায় এ দফতরের কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারেননি মিজানুর। জানতে পারেননি কখন তালা খোলা হবে। কখন তার অভিযোগ নেয়া হবে।

একই অভিযোগ নিয়ে সোমবার সকাল ১০টায় বিএডিসির এ শাখায় আসেন মণিরামপুর উপজেলার কাশিপুর গ্রামের সেচ মালিক সালাউদ্দিন। দুপুর একটা পর্যন্ত তিনি কারো দেখা না পেয়ে অপেক্ষায় থেকেছেন।

বিএডিসির ভুলে ১২ বছরের সেচ সংযোগ হারিয়ে বিভিন্ন দফতরে ঘুরে হয়রানির শিকার হচ্ছেন আম্রঝুটা গ্রামের হাফিজুর রহমান। সোমবার দুপুরে কাগজপত্র নিয়ে মণিরামপুর অফিসে এসে কাউকে পাননি তিনি। প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখে হতাশ এ কৃষক।

একই সময়ে সেবা না পেয়ে ফিরে গেছেন বালিদা গ্রামের আফজাল হোসেন ও লক্ষ্মণপুর গ্রামের মিজানুর রহমান।
সোমবার দুপুরে সরেজমিন মণিরামপুর বিএডিসি অফিসের সামনে সেবা নিতে আসা অপেক্ষমাণ ৫-৭ জনের সাথে দেখা হয় এ প্রতিবেদকের। এ সময় তিনজন ভিডিও সাক্ষাতকার দিলেও বাকিরা এ দফতরের হয়রানির ভয়ে ভিডিও সাক্ষাতকারে মুখ খুলতে চাননি।তারা বলেন, বহুদিন ধরে এ অফিসে হাঁটছি। কাজ হচ্ছে না।

এখন সাক্ষাতকার দিলে যদি অফিস কাজ না করে দেয় তাহলে আরো বিপদে পড়বো। তবে দিনদুপুরে অফিসে তালা ঝোলার বিষয়ে বিএডিসি কর্মকর্তাদের দাবি, প্রয়োজনীয় লোকবলের সংকটে এ সমস্যা হচ্ছে।আম্রঝুটা গ্রামের হাফিজুর রহমান বলেন, ২০০৯ সালে কয়েকটি জমির দাগ নম্বর দিয়ে আমি সেচ সংযোগের আবেদন করি। তখন আবেদন করা দাগগুলোর মধ্যে ৭৩৭ দাগে আমি পাম্প স্থাপন করি। ১২ বছর সে ভাবে আমার সেচের কাজ চলেছে। হঠাৎ দেড় মাস আগে আমার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।তিনি বলেন, বিএডিসি অফিস ভুল করে আমার সেচপাম্প স্থাপনের জমির দাগ ৭৩৭ এর স্থানে ৬৬৫ উল্লেখ করে। সংযোগ বিচ্ছিন্নর পর অফিসে আসলে যে দাগে আমার অনুমোদন সে দাগে গিয়ে সেচপাম্প বসাতে বলে।

তিনি আরো বলেন, যে দাগে আমাকে তারা যেতে বলছে সেখানে মাত্র ১০ কাঠা জমি। যে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করেছে সেখানে ২০ বিঘা জমিতে আমিসহ অন্য কৃষকরা চাষাবাদ করছি। এখন বোরো মৌসুম। দেড় মাস ধরে এ অফিসে হাঁটাহাঁটি করলেও তারা আমার কাগজপত্র ঠিক করে দিচ্ছে না।হাফিজুর বলেন, আমি বলেছি আবেদন করার সমায়কার কাগজপত্র উল্টিয়ে দেখতে। তারা সেটা করছে না। তাদের ভুলের জন্য আজ আমার এত ভোগান্তি।

তিনি বলেন, একবার যশোর অফিস আবার মণিরামপুর অফিস এভাবে দৌঁড়াচ্ছি তারা আমার কাজ করে দিচ্ছে না। সোমবার এসে দেখলাম অফিসে তালা ঝুলছে।

কেশবপুর এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, আমরাও মণিরামপুর অফিসের আওতায়। ১৫ বছর ধরে সেচ সংযোগ চালাচ্ছি। নিয়মে আছে এক প্রকল্পের চারদিকে ৮১০ ফুট দূরত্বের মধ্যে কেউ নতুন সংযোগ পাবে না। এখন আমার থেকে ১০০ ফুট দূরে একজন নতুন লাইনের জন্য আবেদন করেছে।

‘রবিবার নতুন আবেদনকারীর পক্ষে অফিসের লোক গেছে। তাই দেখে সোমবার আমি এ অফিসে অভিযোগ দিতে এসেছি। দেখছি দুপুর বেলায় গেটে তালা ঝুলছে।’

কাশিপুর গ্রামের সেচ মালিক সালাউদ্দিন বলেন, একটা অভিযোগ নিয়ে ১০ টার দিকে বিএডিসি অফিসে এসেছি। তালা দেখে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষায় রয়েছি। কাউকে অফিসে পাইনি।এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএডিসি মণিরামপুর শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী অন্তু সাহা বলেন, ১১ টার পরে অফিসে তালা দিয়ে বাইরে কাজে এসেছি। কখন ফিরতে পারবো জানি না।তিনি বলেন, এ অফিসে একজন কার্যসহকারীসহ আমরা দুজন আছি। লোকবল কম থাকায় বাইরে কাজে গেলে অফিসে তালা দিয়ে আসতে হয়।বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী ও মণিরামপুর সেচ কমিটির সদস্য সচিব সোহেল রানা বলেন, মণিরামপুর অফিসে অন্তত ৬ জন স্টাফ থাকার কথা। মাত্র দুজন আছেন। লোকবল কম থাকায় এ সমস্যা হচ্ছে।তিনি বলেন, আম্রঝুটার হাফিজুর রহমান রবিবার আমার যশোর অফিসে এসেছিলেন। আমরা তাকে লাইসেন্সে উল্লেখ করা দাগ নম্বরে সরে যেতে বলেছি।আপনাদের ভুলের দায় কৃষক নেবেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অফিসের ভুল হওয়ার কথা না। তার সংযোগটি পুরনো হওয়ায় সঠিকটা দেখতে গেলে অনেক কাগজপত্র ঘাটাঘাটি করতে হবে। তারপরও আমরা চেষ্টা করে দেখছি।

More News...

বিড়ির শুল্ক ও অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের দাবিতে রংপুরে জনসভা

বিড়ি শিল্পের শুল্ক প্রত্যাহারসহ পাঁচ দাবিতে বগুড়ায় মানববন্ধন