আফগানিস্তানের নতুন সরকারের নেতৃত্বে আসছেন বেরাদারই

আফগানিস্তানের নতুন সরকারের নেতৃত্বে আসছেন বেরাদারই

অনলাইন ডেস্ক : আফগানিস্তানের নতুন সরকারের নেতৃত্ব তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের কাছেই যাচ্ছে। শুক্রবার তালেবান গোষ্ঠীর একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স এ তথ্য জানিয়েছে।

আফগানিস্তানের নতুন সরকারের ঘোষণা শিগগিরই আসছে। কাবুলের উত্তরে পাঞ্জশির উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের মধ্যেই এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে নেতৃত্বের বিষয়টি।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ শুক্রবারই তালেবানের পক্ষ থেকে নতুন সরকার গঠনের ঘোষণা আসতে পারে। বিকেলের দিকে এই ঘোষণা দেওয়ার কথা থাকলেও এ বিষয়ে এখনো সুস্পষ্ট কিছু জানা যায়নি।

এর আগে তালেবানের দুটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছিল, শুক্রবার বিকেলে আছরের নামাজের পর নতুন প্রশাসন গঠনের ঘোষণা দিতে পারে তালেবান। পাঞ্জশির উপত্যকায় এখনো যুদ্ধ চললেও কাবুলে একটি প্রশাসন প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত তারা নিয়ে নিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে তাদের সহনশীলতা, বিশেষ করে নারী প্রশ্নে তাদের অবস্থান কী হয়, সেদিকে তাকিয়ে আছে পশ্চিমা বিশ্ব।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, ভঙ্গুর অর্থনীতিকে ঠিক করাটাই হবে তালেবানের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। গত ৩০ আগস্ট রাতে মার্কিন সেনারা সব চলে যাওয়ার পরও কিছু অঞ্চলে যুদ্ধ চলছে। এটি একটি চ্যালেঞ্জ হলে মূল সংকট অর্থনীতি। সঙ্গে রয়েছে দুই দশকের যুদ্ধে ২ লাখ ৪০ হাজার লোকক্ষয় ও সামগ্রিক অবকাঠামো ভেঙে পড়ার প্রেক্ষাপট। ফলে অর্থনীতির পাশাপাশি মানবিক বিপর্যয় মোকাবিলাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সঙ্গে রয়েছে ইসলামিক স্টেট-খোরাসানের (আইএস-কে) দিক থেকে আসা চ্যালেঞ্জ।

তিনটি পৃথক সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, তালেবান সরকারের নেতৃত্বে মোল্লা আবদুল গনি বারাদার থাকছেন। তাঁর সঙ্গে থাকছেন তালেবানের সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা ওমরের ছেলে মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুব ও শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই। তাঁদের প্রত্যেকেরই সরকারের উচ্চপর্যায়ে থাকার সম্ভাবনা প্রবল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তালেবান কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ‘সব শীর্ষ নেতা কাবুলে এসে পৌঁছেছেন। নতুন সরকার ঘোষণার সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।’

সে ক্ষেত্রে শীর্ষ ধর্মীয় নেতা হায়বাতুল্লা আখুন্দজাদার অবস্থান কী হবে? অন্য একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, তিনি ধর্মীয় বিষয়াদি ও ইসলামি কাঠামোর মধ্যে সুশাসন নিশ্চিতে বিষয়টি দেখবেন।

গত ১৫ আগস্ট কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার মধ্য দিয়ে তালেবান গোটা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিলেও পাঞ্জশির উপত্যকায় এখনো তারা যুদ্ধ করতে হচ্ছে। সাবেক মুজাহিদীন কমান্ডার আহমাদ শাহ মাসুদের ছেলে আহমাদ মাসুদের নেতৃত্বে সেখানে আফগানিস্তানের সাবেক সরকারের নিরাপত্তাবাহিনী ও মিলিশিয়া সদস্যরা যুদ্ধ করে যাচ্ছে এখনো।

কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার তালেবান সব পক্ষকে সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছিল। কিন্তু এখনো সে চেষ্টায় তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। এ অবস্থায় একটি অন্তর্বর্তী সরকার তারা গঠন করতে যাচ্ছে, যেখানে সরকারে শুধু তালেবানই থাকবে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।

সূত্রটি জানায়, তালেবানের এই অন্তর্বর্তী সরকারে থাকছে ২৫টি মন্ত্রণালয়। সঙ্গে একটি পরামর্শক পরিষদ থাকবে, যেখানে থাকবেন ১২ জন মুসলিম পণ্ডিত। একই সঙ্গে আফগান সমাজের বিভিন্ন অংশের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি লয়া জিরগা বা মহাপরিষদ গঠন করা হবে। এই মহাপরিষদ আগামী ছয়-আট মাস সময়ের মধ্যে ভবিষ্যৎ আফগান সরকার ও সম্ভাব্য সংবিধানের বিষয়ে নিজেদের মত দেবেন।

আল-জাজিরার প্রতিবেদনে আজই সরকার গঠনের ঘোষণার কথা বলা হলেও রয়টার্স বলছে, এ নিয়ে একেক সূত্র একেক কথা বলছে। কেউ বলছে আজই এ সম্পর্কিত ঘোষণা আসবে। আবার কেউ বলছে আগামী সপ্তাহের মাঝামাঝির আগে বিষয়টি চূড়ান্ত নাও হতে পারে।

তবে শুধু তালেবান সদস্যদের নিয়ে গঠিত সরকারের স্বীকৃতি নিয়ে কিছুটা সংকট পোহাতে হবে তালেবানকে। দেশটির অর্থনীতির অবস্থা এতটাই সঙিন যে, বিভিন্ন দেশের সরকারের স্বীকৃতির বিষয়টি তাদের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে হওয়া মানবিক বিপর্যয় সামাল দিতে হলে বিভিন্ন দেশের সহায়তা তাদের লাগবে। আর সে ক্ষেত্রে কাবুল বিমানবন্দর চালু থাকাটা খুবই জরুরি। অথচ বিস্তর আলোচনার পরও এই বিমানবন্দর চালু রাখার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আসতে পারেনি তালেবান।

তালেবান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অনেক আগে থেকেই আফগানিস্তানের অর্থনীতির নাজুক অবস্থা। ভয়াবহ খরার কারণে বহু পরিবারের পক্ষে খাবার জোটানোই কঠিন হয়ে পড়েছিল। এখন এই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এদিকে তালেবানের কাবুল দখলের পরপর মার্কিন সরকার কর্তৃক স্থগিত আফগানিস্তানের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছাড়ের বিষয়ে এখনো জো বাইডেন প্রশাসন কিছুই বলেনি। ফলে দ্রুতই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার তেমন আশাও নেই। তবে ওয়াশিংটনের চেষ্টায় ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের পক্ষ থেকে একটি সুসংবাদ এসেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ আবার চালুর বিষয়ে তারা উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছে।

এদিকে মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে পশ্চিমা দেশগুলো একটু একটু করে এগিয়ে আসবে বলে মনে করা হলেও দ্রুতই বিদেশি বিনিয়োগের দরজা খুলছে না। জাতিসংঘ এরই মধ্যে দেশটিতে মানবিক সহায়তা পাঠান শুরু করেছে। পশ্চিমা দেশগুলো মূলত অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণের নীতি নিয়েছে।

More News...

কোন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল?

সোনার দাম আবার বাড়লো, ভরি ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২৮ টাকা