বাস্তবতার প্রেক্ষিতে মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাস্তবতার প্রেক্ষিতে মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কূটনৈতিক প্রতিবেদক : বাস্তবতার প্রেক্ষিতে মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণ করেনি বাংলাদেশ। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের নাগরিকদের বিষয়ে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশকে, তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যদি ক্ষমতা থাকত তবে এ প্রস্তাব গ্রহণ করত বাংলাদেশ বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ১৫ই আগস্ট শহীদদের স্মরণ বিষয়ক এক অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ১৪ আগস্ট ওয়াশিংটন বাংলাদেশ মিশনে জানানো হয় আফগানিস্তানে অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। আফগানিস্তানে অনেক মার্কিন বন্ধু রয়েছে। মার্কিনিরা তাদের অন্য জায়গায় সরানো চিন্তা করছে। এ ক্ষেত্রে এ মানুষগুলোকে বাংলাদেশে অল্প সময়ের জন্য আশ্রয় দিতে বলা হয়েছে। তাদের প্রস্তাবটি আফগান নাগরিকদের জন্য ছিল।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ জিজ্ঞেস করেছে অন্য কোন দেশকে মার্কিনিরা আফগানদের আশ্রয় দিতে বলেছে, কত জনকে আশ্রয় দিতে হবে এবং কত দিনের জন্য আশ্রয় দিতে হবে। শুধু প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার জন্য অল্প দিনের জন্য আশ্রয় দিতে হবে বলে জানিয়েছে। তবে বাকি প্রশ্ন দুটির উত্তর দেয়নি। তোমরা যেহেতু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছ, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র মিলে তাদের দেখভাল করছে। আফগানিস্তানের দুর্দিনের সময়ে সাহায্য করলে আমরা খুশি হব।

বাংলাদেশ পর্যালোচনা করে জানিয়েছে বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা ১১ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে খুব হিমশিম খাচ্ছি। আমাদের দেশে এমন পরিস্থিতি নাই যে কোন মানুষকে আমরা আশ্রয় দিতে পারব, এমনকি স্বল্পকালীন সময়ে জন্য। বাংলাদেশ মার্কিন প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে পারেনি।

শুধু কি আফগান নাগরিকদের আশ্রয় দিতে বলা হয়েছে? এর উত্তরে তিনি বলেন, আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম কোন দেশের নাগরিক। তখন মার্কিনিরা জানিয়েছে শুধু আফগান নাগরিকদের কথা। কত সংখ্যায় আসবে, সে তথ্য দেওয়া হয়নি। আর কত দিন থাকবে সেই সময়ও বলেনি।

এ কে আবদুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশ বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে যে, বাইডেন সরকার বাংলাদেশকে আস্থায় নিয়েছে। তবে আমাদের অবস্থার প্রেক্ষিতে আফগানদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষমতা নেই। যদি নেওয়ার ক্ষমতা থাকত, তবে অবশ্যই আমরা এ প্রস্তাব গ্রহণ করতাম। আমরা বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বলেছি।

আফগানিস্তান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যদি কোন সরকার গঠিত হয়, তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ নেই। আমরা চাই সব সার্ক দেশগুলোর উন্নয়ন হোক। এখনো বাংলাদেশ সেখানকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

জঙ্গিবাদ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে এ কে আবদুল মোমেন বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ সতর্ক থাকবে।

আটকে পরা বাংলাদেশিদের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, বিভিন্ন মাধ্যমে সেখানে থাকা বাংলাদেশিদের জানানো হয়েছে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সেখানে বাংলাদেশের দূতাবাস নেই। ফলে সরকার সেখানে খুব একটা সাহায্য করতে পারবে না।

বিদেশে থাকা বাংলাদেশিদের পাসপোর্ট নবায়ন বন্ধ থাকা নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, অনেক বাংলাদেশির পাসপোর্ট নবায়ন হচ্ছে না। এর মূল কারণ ছাপা হচ্ছে না। আমরাও এখানে বহু পাসপোর্টর জন্য বসে আছি। ছাপা যন্ত্রের গন্ডগোল। পাসপোর্ট তো আমরা ইস্যু করি না। এটি স্বরাষ্ট্রের কাজ। তারা বলেছে ব্যবস্থা নিয়েছে। এখন ছাপা শুরু হবে। তারা আগে থেকে এটি নিয়ে চিন্তা করেনি কেন জানি না।

রোহিঙ্গা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ৪ বছর হয়ে গেল, মিয়ানমার বলেছিল যাচাই বাছাই শেষে তাদের নিয়ে যাবে। মিয়ানমার রাখাইনে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির কথাও বলেছিল। কিন্তু গত ৪ বছরে রাখাইনে কোনো ধরনের সহিংসতা নেই। সেখানে শান্তি বজায় রয়েছে। সুতরাং রোহিঙ্গারা এখন তাদের দেশে যেতে পারে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কানাডার মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় রোহিঙ্গাদের শিক্ষা সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। বাংলাদেশ বলেছে যে এ সুবিধা মিয়ানমারের পাঠ্যসূচিতে দিতে। আর রাখাইন থেকে এ প্রকল্প চালাতে। কারণ এখনও সেখানে ৬ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে।

More News...

র‍্যাবের নতুন মুখপাত্র হলেন কমান্ডার আরাফাত

৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া