পুলিশের ওপর জঙ্গি হামলা, বিচার শুরু হয়নি ১৮ বছরেও

পুলিশের ওপর জঙ্গি হামলা, বিচার শুরু হয়নি ১৮ বছরেও

জয়পুরহাট প্রতিনিধি : ২০০৩ সালের আজকের এই দিনে (১৪ আগস্ট) জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার উত্তর মহেশপুর গ্রামে পুলিশের ওপর জেএমবি সদস্যদের সশস্ত্র হামলার বিচার কাজ শুরু হয়নি দীর্ঘ ১৮ বছরেও। মামলার ৫৯ জন আসামির মধ্যে জয়পুরহাট জেলা কারাগারে ৮ জন আটক থাকলেও শীর্ষ ১৩ জঙ্গি জামিন নিয়ে আদালতে হাজির না হওয়ায় বিচার কাজ শুরু হচ্ছে না। তারা অন্য মামলায় দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক থাকায় রাষ্ট্রপক্ষও তাদের মামলার তারিখ দিয়েও হাজির করতে পারছে না। ফলে এ মামলায় জামিনে থাকা স্থানীয় ৩৮ জন আসামির মধ্যে অনেকেই ১৮ বছর ধরে আদালতে হাজিরা দিতে দিতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।

আইনি বিধান মতে, মামলার তারিখে আটক ও জামিনে থাকা সব আসামিকে হাজির করা না গেলে আদালতে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন অর্থাৎ বিচারকাজ শুরু করতে পারবেন না। আইনি এই বিধিনিষেধের কারণে দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে তারিখের পর তারিখ পড়লেও বিচার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, এ ঘটনায় দায়ের করা ৩টি মামলায় ২০০৮ ও ২০১০ সালে ৬১ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর মধ্যে সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে একজনকে অব্যাহতি ও আরেক আসামি মারা যাওয়ায় এখন মামলায় মোট আসামি ৫৯ জন।

জয়পুরহাট আদালত থেকে জামিন নেয়ার পর থেকে হাজির না হওয়া আসামিরা হলেন- ঠাকুরগাঁও জেলার আনোয়ার হোসেন ওরফে খোকা, তারিকুল ইসলাম ওরফে তারেক ওরফে শহীদ ওরফে ভাগ্নে শহীদ, রংপুরের জয়নাল আবেদীন, গাইবান্ধার মামুনুর রশিদ, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছরোয়ার জাহান, শহিদুল ইসলাম ওরফে রানা ও তুফান ওরফে আবুল কাশেম, রাজশাহীর শহীদুল্লাহ ফারুক ওরফে সেলিন ও আদনান ছামি ওরফে আম্বর ওরফে জাহাঙ্গীর আলম ওরফে মোখলেছার, নওগাঁর সাইফুল ইসলাম ওরফে খোকন ও আব্দুল কুদ্দুস, বগুড়ার আরিফুর রহমান ওরফে আসাদুল্লাহ এবং নারায়ণগঞ্জের সালাউদ্দিন ওরফে ছালেহীন।

জয়পুরহাট কারাগারে গ্রেপ্তার থাকা আসামিরা হলেন- জয়পুরহাটের মন্তেজার রহমান, সালাউদ্দিন, আজিজুল বারী ও গোলাম মোস্তফা, দিনাজপুরের আনোয়ার সাদাত, বগুড়ার মাইনুল ইসলাম ওরফে রাঙ্গা ওরফে মারুফ ও আব্দুর রাজ্জাক এবং টাঙ্গাইলের ইউনুস আলী।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের ১৪ আগস্ট রাতে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবির আঞ্চলিক নেতা জয়পুরহাটের ক্ষেতলালের উত্তর মহেশপুরে মন্তেজার রহমানের বাড়িতে গোপন বৈঠক চলছিল। সেই বৈঠকে যোগ দেন দেশের শীর্ষ জঙ্গি নেতারাও। খবর পেয়ে জয়পুরহাট সদর ও ক্ষেতলাল থানার পুলিশ উত্তর মহেশপুর গ্রামের জঙ্গি নেতা মন্তেজার রহমানের (জয়পুরহাট কারাগারে আটক ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি) বাড়ি ঘেরাও করে। এ সময় টের পেয়ে রাত প্রায় আড়াইটার দিকে তারা পালানোর চেষ্টা করলে পুলিশের সাথে গোলাগুলি হয়। এতে জয়পুরহাট সদর থানার তৎকালীন ওসি ইকবাল শফিসহ ৬ পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত হন। এ সময় জঙ্গি সদস্যরা পুলিশের ৩টি শর্টগান, ৪৫টি গুলি, ১টি ম্যাগাজিন ও ১ ওয়াকিটকি লুট করে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় ১৫ আগস্ট সদর থানার পুলিশের এসআই শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ক্ষেতলাল থানায় ৩৩ জনসহ অজ্ঞাত ৭০ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। মামলার সেই রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে গ্রেপ্তার করে। ঘটনার দুইদিন পর ঘটনাস্থল ও আশেপাশের এলাকা থেকে পুলিশ অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার করলেও লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারে ব্যর্থ হয়।

পরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দিনাজপুর জোনের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পুলিশ পরিদর্শক জালাল উদ্দীন তদন্ত করে ২০০৮ সালের ৩০ জানুয়ারি ৬১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে সংশ্লিষ্টতা না পেয়ে একজনকে অব্যাহতি ও অন্য এক আসামি মৃত্যুবরণ করায় মামলাটির আসামি সংখ্যা উল্লেখ রয়েছে ৫৯ জন।

অপরদিকে একই ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধার হওয়ায় পরবর্তীতে আরো দুটি মামলা দায়ের করা হয়। দিনাজপুর জোনের সিআইডির তৎকালীন সহকারি পুলিশ সুপার আহসান উল কবীর মামলা দুটি তদন্ত করে গত ২০১০ সালের ২৫ মে ওই ৬১ জন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালের ১৫ আগস্ট মামলা দায়ের হওয়ার পর বিভিন্ন সময় উচ্চ আদালত থেকে ১৩ জন আসামি জামিন নিলেও পরবর্তীতে তারা আদালতে হাজির হননি। তারা পলাতক রয়েছেন। পুলিশের দেয়া অভিযোগপত্রে দেখা গেছে, ওইসব পলাতক জঙ্গিদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন জেলায় তাদের নামে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। ওইসব মামলায় তারা দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক রয়েছেন।

আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, সরকারের কাস্টডিতে থাকা আসামি আইনের বিধান হচ্ছে, তার উপস্থিতি ব্যতিরেকে অভিযোগ গঠন করা সমিচিন নয়। আর সঙ্গত কারণেই প্রতি তারিখে কোন না কোন আসামি ভিন্ন একটি জেলায় কোন একটি কারাগারে আটক থাকায় আদালতে উপস্থিত হতে পারছে না। তাই এই মামলার কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয় না। যার ফলেই মামলাটির বিচারকাজ দীর্ঘ বছর থেকে বিলম্বিত হচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁশলী নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল জানান, আসামিদের যথা সময়ে আদালতে উপস্থিত করা সম্ভব হয় না বলেই মামলাটির বিচার কাজে দেরি হচ্ছে। অন্য যে কোন কারাগারে আটক আসামিদের বাদ রেখে বিচারকাজ শুরু করতে গেলে আইনের ব্যত্যয় ঘটবে।

 

More News...

র‍্যাবের নতুন মুখপাত্র হলেন কমান্ডার আরাফাত

৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া