ছুটিতে গেলেন সহকর্মীকে ধর্ষণ মামলার আসামি সেই এসপি

ছুটিতে গেলেন সহকর্মীকে ধর্ষণ মামলার আসামি সেই এসপি

নিজস্ব প্রতিবেদক : নারী পরিদর্শকের করা ধর্ষণের মামলা আসামি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) বাগেরহাটের পুলিশ সুপার মোক্তার হোসেন ছুটি নিয়েছেন। অভিযোগ দায়েরের দিনই তিনি শহর ছেড়েছেন। শুক্রবার রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পিবিআই প্রধান পুলিশের উপ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার।

গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–৭–এ ধর্ষণ মামলার আবেদন করেন ভুক্তভোগী এক নারী পুলিশ কর্মকর্তা। আলাদত মামলাটি তদন্ত করতে ডিএমপির উত্তরা (পূর্ব) থানাকে নির্দেশ দেন। মামলার তদন্ত বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাইফুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ঘটনা অনেক আগের। তাই অভিযোগ এবং তথ্য যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। বাদী ঢাকার বাইরে আছেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলার পর তদন্তের পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে। তদন্তের প্রয়োজনে অভিযুক্ত পুলিশ সুপারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মামলাটি এফআইআর হিসেবে উত্তরা (পূর্ব) থানায় লিপিবদ্ধ হয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পূর্ব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর গাজী।

এদিকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আজ ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, পুলিশ বাহিনীর দু’একজন সদস্য অন্যায় করতে পারে। আইন অনুযায়ী তাঁদের শাস্তি হচ্ছে। যারা সাম্প্রতিক সময়ে অন্যায় করছেন, তাঁদেরও শাস্তি হবে। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।

ওই নারী পুলিশ পরিদর্শক অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছে, ২০১৮ সালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুদানে যান। সেখানে তাঁকে দারফুর সদর দপ্তরে পদায়ন করা হয়। আর অভিযুক্ত মোক্তার হোসেনকে পুলিশ সুপার (এসপি) ও বাংলাদেশ পুলিশ কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে ২০১৯ সালের মে মাসে জাতিসংঘ মিশনে সুদানে পাঠানো হয়। একই বছরের অক্টোবরে তিনি দারফুরে যোগ দেন। বাদী আগে থেকে মিশনে থাকায় তাঁর অভিজ্ঞতা থেকে বিভিন্ন সহযোগিতা নিতেন এসপি মোক্তার। ওই নারী পুলিশ পরিদর্শক বাসায় নিজে রান্না করে খেতেন। মোক্তার হোসেন একদিন তাঁকে বলেন, তিনি হোটেলে খেতে খেতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বাদীর সঙ্গে তিনি খাওয়া দাওয়া করতে চান। এরপর থেকে খাওয়ার জন্য প্রতিদিন দুপুরে ও রাতে বাদীর বাসায় এসপি মোক্তার আসা–যাওয়া করেন। ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর দুপুরে খাওয়ার পর অভিযুক্ত মোক্তার চলে যান। তবে কিছুক্ষণ পর বাদীর কাছে গাড়ির চাবি চাইতে আসেন। তা দেওয়ার একপর্যায়ে ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাঁকে ধর্ষণ করেন। দুই দিন পর তাঁকে আবার ধর্ষণ করেন মোক্তার হোসেন। সেই সঙ্গে তাঁকে হুমকি দেন, এই ঘটনা জানালে চাকরি থাকবে না। দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

মামলার আবেদনে বলা হয়, গত বছরের ৩ জানুয়ারি মিশনে থাকা অবস্থায় ‘কলেমা পড়ে’ দুজনের বিয়ের কথা বলে প্রতারণার আশ্রয় নেন পুলিশ সুপার মোক্তার। আশ্বাস দেন দেশে ফিরে বিয়ে নিবন্ধন করবেন। সেই আশ্বাসে ওই বছরের ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি দেশে ছুটিতে আসার পর দুজন উত্তরার একটি হোটেলে অবস্থান করেন। নারী পুলিশ পরিদর্শকের মিশন শেষ হয় ২০২০ সালের ২৬ জুলাই। এরপর ৩০ জুলাই পর্যন্ত চার দিন সুদানের খার্তুম বিমানবন্দরের পাশের একটি হোটেলে অবস্থান করেন তাঁরা। দেশে ফিরে আসেন ভুক্তভোগী। অভিযুক্ত এসপি গত বছর নভেম্বরে ছুটিতে দেশে আসার পর ১০ থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত বাদীকে উত্তরার সেই হোটেলেই রাখেন। প্রতিবার বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি মিশন শেষ করে দেশে আসার পর মোক্তার হোসেন বাদীকে নিয়ে ২১ থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি শান্তিনগরের একটি হোটেলে ওঠেন। গত ১২ এপ্রিল বাদী অভিযুক্তের বাসায় গেলে (রাজারবাগ মধুমতি অফিসার্স কোয়ার্টার) তাঁকে মারধর ও গালাগালি করে তাড়িয়ে দেন।

নারী পুলিশ পরিদর্শক আরও অভিযোগ করেছেন, এসপি মোক্তারের কথামতো তিনি তাঁর স্বামীকে তালাক দিয়েছেন। কিন্তু এরপর বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

More News...

মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিড়ি শ্রমিকদের র‌্যালি ও সমাবেশ

র‍্যাবের নতুন মুখপাত্র হলেন কমান্ডার আরাফাত