মশায় কুপোকাত ঢাকা কলেজ

মশায় কুপোকাত ঢাকা কলেজ

নিজস্ব প্রতিবেদক : শ্রেণিকক্ষে দাঁড়িয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পাঠদান করছেন শিক্ষক। কিন্তু মশার কামড়ে মনোযোগ ধরে রাখতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে দিনের বেলায় ধরাতে হচ্ছে কয়েল! রাজধানীর ঢাকা কলেজে এমন চিত্র ছাত্র-শিক্ষক উভয়ের কাছে বেশ পরিচিত।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে শীতের সময় মশা কিছুটা কম থাকলেও গরম আসার পর থেকে মশার কামড়ে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। বৃষ্টির মৌসুম শুরুর আগেই কলেজজুড়ে মশা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রাতে ও দিনে সমানতালে সহ্য করতে হচ্ছে মশার কামড়। দিনের বেলায় উপদ্রব কিছুটা কম থাকলেও বিকাল শুরু হতেই ক্যাম্পাসজুড়ে শুরু হয় মশার একক রাজত্ব। মাঠে বা পুকুরপাড়ে দাঁড়ালেই ঘিরে ধরছে মশার ঝাঁক। কলেজের ছাত্রাবাস এলাকার অবস্থা আরও বেশি খারাপ। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, বিশ্রাম, ঘুম সবকিছুতেই ঘটছে ব্যাঘাত।

এমন অবস্থায় ডেঙ্গুর মৌসুম শুরুর আগেই মশা নিধনে কলেজ প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে ঢাকা কলেজ ঘুরে দেখা যায়, প্রশাসনিক ভবনের চারপাশের প্রায় সবগুলো ড্রেনই ঢাকনাবিহীন ও উন্মুক্ত। এসব ড্রেনের পচা পানিতে খালি চোখেই দেখা যায় মশার লার্ভার উপস্থিতি। প্রশাসনিক ভবনের ক্লাসরুমগুলো পুরোনো ধাঁচের হওয়ায় পর্যাপ্ত আলো বাতাসের অনুপস্থিতিতে শ্রেণীকক্ষগুলো মশার নিরাপদ আবাসস্থল হয়ে উঠেছে।

একই দৃশ্য আবাসিক এলাকায়ও। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে মশার প্রজনন ঘটানোর সকল উপাদানের উপস্থিতি দেখা গেছে সেখানে। এমন অবস্থায় মশাবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এর প্রজননক্ষেত্র নষ্ট করতে হবে। নিয়মিত মশা মারা যায় এমন ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় সপ্তাহে মাত্র দুইদিন ওষুধ প্রয়োগ করা হয় যা একেবারেই যথেষ্ট নয়। শুধু সিটি কর্পোরেশনের উপর নির্ভর না করে মশার প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

মাহমুদুল হাসান নাম এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, পরিবেশের অবনতি, ময়লা আবর্জনা নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং মশা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে মশার উপদ্রব বেড়েছে। প্রতিবছরই ডেঙ্গুর মৌসুমে একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে। এ বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে দেখার কোনো অবকাশ নেই। এখানে অবশ্যই কলেজ প্রশাসনের দায়বদ্ধতা রয়েছে। কলেজ প্রশাসন সিটি কর্পোরেশনের উপর দায় চাপালেই চলবে না। নিজেদেরও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাজধানীর মূল পয়েন্টে এত বড় প্রতিষ্ঠান, এত শিক্ষার্থীর আবাসস্থল অথচ নিজস্ব ফগার মেশিন নেই বা মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাপনা নেই এটি মেনে নেওয়া যায় না। নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা করা উচিত কলেজ প্রশাসনের।

ফাহিম হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, শীতে মশার কামড় কিছুটা কম ছিল। কিন্তু গরম আসার পর থেকেই মশার অত্যাচার অনেক বেড়েছে। আমরা দিনের বেলায় ক্লাসে বসলেও মশার কামড় খেতে হয়। বারবার হাত-পা নাড়াতে হয়। এতে ক্লাসে মনোযোগ দিতে পারি না। তারপর মশার কামড়ে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা তো রয়েছেই। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে সিটি কর্পোরেশন, কলেজ প্রশাসন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য দপ্তরের সমন্বিত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। যেন নিয়মিত মশা নিধনের ব্যবস্থা করা হয়।

এ বিষয়ে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, মশার সমস্যা নিরসনে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখাসহ আনুষঙ্গিক বিষয় নিশ্চিত করতে কলেজ প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। আসলে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ফগার মেশিন ক্রয়ের বাজেট সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় না। তবে পরিবেশ সুন্দর রেখে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সুন্দর ব্যবস্থা তৈরিতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি।

জমানো পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাসহ ছাত্রাবাসগুলোতে মশার প্রকোপ যেন না বাড়ে সে বিষয়টি খেয়াল রাখতে ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়কসহ অন্যান্যদের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানান অধ্যক্ষ।

More News...

কুষ্টিয়ায় নকল আকিজ বিড়িসহ বিড়ি তৈরির উপকরণ জব্দ

মে দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিড়ি শ্রমিকদের র‌্যালি ও সমাবেশ