বিধিনিষেধের বালাই নেই সদরঘাটে

বিধিনিষেধের বালাই নেই সদরঘাটে
নিজস্ব প্রতিবেদক : সেই চিরচেনা রূপ। হাঁকডাক-শোরগোল। ঠেলাঠেলি করে ভেতরে প্রবেশের প্রতিযোগিতা। গাদাগাদি করে বসা। মাস্ক পরার বাধ্যবাধকতা থাকলে তাতে খেয়াল নেই কারো। লঞ্চ স্টাফ যাত্রী সবারই একই অবস্থা। দেখে বোঝার উপায় নেই, করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন মোকাবিলায় দেশে চলছে বিধিনিষেধ।

শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেল এমন চিত্র। কোথাও কোনো স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। শুধুমাত্র কয়েকটি মাইকে মাস্ক পরার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু তা কেউ কানেই নিচ্ছে না।

অথচ দেশে নতুন করে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় চার হাজার ৩৭৮ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। শনাক্তের হার ১৫ শতাংশের কাছাকাছি। এ পরিস্থিতিতে দেশে বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। তার মধ্যে রয়েছে সবাইকে মাস্ক পরার নির্দেশনা। অন্যথায় তাকে সম্মুখীন হতে হবে শাস্তির। একই সঙ্গে ট্রেন, বাস এবং লঞ্চে সক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নেওয়া। কিন্তু লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেল তার উল্টো চিত্র।

সদরঘাট মূল টার্মিনাল হতে দক্ষিণাঞ্চলের পথে দেড় শতাধিক লঞ্চে ৩০ হাজারের মতো যাত্রী প্রতিদিন চলাফেরা করছে। হিসাব করে যদি দেখা হয়, এরমধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ যাত্রী কোনো ধরনের স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছে না।

 

একই পরিস্থিতি লঞ্চ টার্মিনালে কর্তব্যরতদের। মাস্ক ও স্যানিটাইজারের ব্যবস্থান নেই লঞ্চগুলোতে। লঞ্চের স্টাফ যারা যাত্রীদের ওঠানোর জন্য তোড়জোড় করছেন তারাও পরেননি মাস্ক।

যদিও এ বক্তব্য দেওয়ার কয়েক মিনিট আগে তিনি মাস্ক ছাড়া আরও তিনজন সহযোগীকে নিয়ে যাত্রী ডাকছিলেন।

 

এদিকে যারা বিধিনিষেধ মেনে চলতে চাচ্ছেন, তারা সদরঘাটের এ পরিস্থিতিতে খুবই হতাশ। সুজাউদ্দৌলা নামের এক যাত্রী বলেন, টার্মিনালে ঢোকার পথে মাস্ক পরার নির্দেশনাটুকুই কেবল আছে। কেউ মানছে কি না তা দেখার কেউ নেই। শরীরের তাপমাত্রা মাপার যন্ত্রও নেই।

তিনি বলেন, ভিআইপি গেটে একটিমাত্র জীবাণুনাশক টানেল দেখলাম। নষ্ট কি না তা জানি না। স্যানিটাইজারও দিচ্ছে না কেউ। আসলে বিধিনিষেধের কিছুই হচ্ছে না।

এদিকে লঞ্চঘাটে ঢোকার পথে হাত ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা চোখে পরেনি। সেখানে স্থায়ী বেসিনের মধ্যে সাধারণ টার্মিনালগুলোর বেশিভাগ এখন ব্যবহার উপযোগী নয়। কিছুটা ভালো পরিস্থিতি ভিআইপি টার্মিনালে।

কয়েকটি লঞ্চের ডেক ঘুরে দেখা গেছে, গাদাগাদি করে বসে আছেন করোনাভাইরাস সংক্রমণের সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা শিশু আর বয়স্করা। তাদের মধ্যে মাস্ক পরেননি এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে সবাই ‘নিশ্বাস নিতে সমস্যা’র অজুহাত দেখান। অনেকেই পকেটে থাকা মাস্ক চট করে পরে নেন। অনেকে বলেন ‘ভুলে রেখে আসা’র কথা।

সোবহান নামের ভোলার এক যাত্রী বলেন, মুখেই ছিল। এখন গরমের জন্য খুলে ফেলছি। একটু সময় খোলা থাকলে কোনো সমস্যা হবে না।

রাসেল নামের এক যাত্রী বলেন, মাস্ক পকেটেই রয়েছে। পরলে নিশ্বাস নিতে পারি না। তাই পরিনি।

কয়েকজন তো আবার করোনাকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। তারা বলছেন, অবস্থা যখন খারাপ ছিল, তখনই তাদের করোনা হয়নি। এখন আর হবে না।

এদিকে ঘাটের কাউন্টারগুলো থেকে মাইকিং করা হচ্ছে, মাস্ক ছাড়া কেউ যে লঞ্চে না ওঠে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। বেশির ভাগ যাত্রী মাস্ক ছাড়াই কাউন্টার থেকে টিকিট নিচ্ছেন। ঘাট কর্মকর্তাদের সে টিকিট দেখিয়ে পেরিয়ে যাচ্ছেন। এসময় কাউকে বাধা বা মাস্ক পরতে তাগাদা দিতে দেখা যায়নি।

চার নম্বর ঘাটে ফরিদ হোসেন নামের এক কর্মকর্তা বলেন, মাইকিং হচ্ছে। তারপরও মানুষ মানে না। করা যায় না সচেতন।

এদিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বলছে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে জোরালো নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে নতুন নির্দেশনা আসার সঙ্গে সঙ্গে তা মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয় সবাইকে।

More News...

জাতীয় প্রেসক্লাবে বিড়ি শ্রমিকদের সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন

কৃষকদের টাকা দিলে ফেরত দেয়, কোটিপতিরা দেয় না’