কার্টুনিস্ট কিশোরকে নির্যাতনের প্রমাণ পায়নি পিবিআই

কার্টুনিস্ট কিশোরকে নির্যাতনের প্রমাণ পায়নি পিবিআই

আদালত প্রতিবেদক : কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরকে শারীরিক নির্যাতনের কোনো প্রমাণ পায়নি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআাই)। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান সম্প্রতি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে দাখিল করেছেন। যার ওপর আগামী ২৪ নভেম্বর শুনানি হবে। আজ বুধবার আদালত সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

গত ১০ মার্চ কিশোর বাদী হয়ে এ মামলা করেন। এরপর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কেএম ইমরুল কায়েশ পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন। আদেশে ৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে কিশোরের স্বাস্থ্য পরীক্ষার আদেশ দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আদালতের আদেশ অনুযায়ী গত ২০ মার্চ কিশোরের শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে (কান, পা ও শরীরে) আঘাতের চিহ্ন পায়নি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড।

মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা হলেন- নাক-কান-গলা (ইএনটি) বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. শেখ নুরুল ফাত্তাহ রুমী, অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ফখরুল আমিন খান এবং মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মো. হাফিজ সর্দার।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অজ্ঞাত ১৬-১৭ জনের বিরুদ্ধে আনা কিশোরকে শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়নি।

মামলায় বলা হয়, ‘রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, মহামারি করোনা, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কিশোর গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের পর তাকে অজ্ঞাত স্থানে রেখে ২০২০ সালের ২ মে থেকে ৫ মে পর্যন্ত তার ওপর নির্যাতন করা হয় বলে মামলা অভিযোগ করেছেন কিশোর। নির্যাতনের পর নিজেকে র‌্যাব কার্যালয়ে দেখতে পান বলে তিনি উল্লেখ করেন। গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকে কারাগারে থাকা কিশোরকে গত ৩ মার্চ হাইকোর্ট জামিন দিলে তিনি মুক্ত হন। এরপর তিনি মামলা করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০২০ সালের ২ মে বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে ১৬-১৭ জন সাদা পোশাকধারী লোক কাকরাইলের বাসা থেকে জোর করে কিশোরকে হাতকড়াসহ মুখোশ পরিয়ে নির্জন একটি জায়গায় নিয়ে যান। আটকের আগে বিকেলে বাসার কলিংবেল বাজার শব্দ শুনে তার ঘুম ভাঙ্গে। দরজা খুলতেই অপরিচিত একজন বলেন দরজা খোলেন না কেন? পরনের লুঙ্গি পরিবর্তন করে প্যান্ট পড়ে নেন, সঙ্গে একটা ভালো শার্ট। কিশোর তাদের পরিচয় জানতে চাইলে কিছুই বলেননি। ঘরে ঢুকেই তারা তল্লাশি শুরু করেন।

অভিযোগে কিশোর বলেন, ‘আমাকে কিছু গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় দেখাতে পারেননি। আমার বাসা থেকে মোবাইল, সিপিইউ, পোর্টেবল হার্ডডিস্কসহ যত ডিজিটাল ডিভাইস ছিল সবই তারা অবৈধভাবে নিয়ে যান। আমাকে যখন হাতকড়া পরিয়ে বাসার নিচে নামিয়ে আনেন তখন বাসার সামনে ৬-৭ টি গাড়ি অপেক্ষা করছিল। এরপর আমাকে একটি গাড়িতে ওঠানো হয়। আমার বাসার সামনে অনেক মানুষ জড়ো হয়েছিলেন। আমি তখন প্রচণ্ড জোরে জোরে চিৎকার করি। কিন্তু গাড়িতে উচ্চসরে গান বাজানো হচ্ছিল তাই হয়তো আমার চিৎকারের শব্দ বাইরে শোনা যায়নি। পরবর্তীতে আমি বুঝতে পারলাম আমাকে একটি পুরানো এবং স্যাঁতস্যাঁতে বাড়ির ভেতরে নেওয়া হয়েছে। গাড়ির হর্নের শব্দ পাচ্ছিলাম কিছুক্ষণ পর প্রজেক্টরে একের পর এক কার্টুন দেখিয়ে সেগুলোর মর্মার্থ জানতে চাওয়া হয়। করোনা নিয়ে আমার আঁকা কিছু কার্টুন দেখিয়ে কেন আকছি এবং কার্টুনের চরিত্রগুলো কারা প্রশ্ন করে। এক পর্যায়ে প্রচণ্ড জোরে আমার কানে থাপ্পড় মারে। কিছুক্ষণের জন্য আমি বোধশক্তিহীন হয়ে পড়ি। বুঝতে পারছিলাম আমার কান দিয়ে রক্ত পড়ছে। তারপর স্টিলের পাত বসানো লাঠি দিয়ে পায়ে পেটাতে থাকে। যন্ত্রণা এবং ব্যথায় সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলাম। এভাবে কয়েক দফা ২ থেকে ৪ মে পর্যন্ত আমার ওপর শারীরিক এবং মানসিক টর্চার চলার পরবর্তীতে আমি নিজেকে র‌্যাব কার্যালয়ে দেখতে পাই। সেখানে মোস্তাক আহমেদের সঙ্গে দেখা হয়। মোস্তাক আলাপ-আলোচনায় আমাকে জানায় তাকে বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছিল। এরপর গত ৬ মে আমাদের রমনা থানায় পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ, কান দিয়ে পুঁজ পড়ে, হাঁটতে পারি না হঠাৎ করে পড়ে যাই এবং শরীরে আরও নানাবিধ রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে।’

গত বছরের ৫ মে র‌্যাব-৩ এর ওয়ারেন্ট অফিসার মো. আবু বকর সিদ্দিক রমনা থানায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, মোস্তাক আহমেদ, দিদারুল ইসলাম ভূঁইয়া ও মিনহাজ মান্নানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন। মামলায় তাদের বিরুদ্ধে পরস্পর যোগসাজশে দীর্ঘ দিন ধরে বিভিন্ন ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে জাতির পিতা, মুক্তিযুদ্ধ, করোনাভাইরাস সম্পর্কে গুজব, রাষ্ট্র ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে অপপ্রচার এবং বিভ্রান্তি ছড়িয়ে তারা রাষ্ট্রের জনগণের মধ্যে অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়।

More News...

র‍্যাবের নতুন মুখপাত্র হলেন কমান্ডার আরাফাত

৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া