প্রকাশ্যে গম গবেষণার সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে খুন

প্রকাশ্যে গম গবেষণার সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাকে খুন

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাসা থেকে ডেকে নিয়ে রাজধানীর আদাবরে প্রকাশ্যে গম গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ার সাহিদকে (৭২) ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আদাবরের হলিল্যান্ড গলিতে (চিপা গলি) এক যুবক মাত্র দুই মিনিটের মধ্যে ওই বৃদ্ধকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। আজ শুক্রবার রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

নিহতের ভাগনি সাবিহা নাহিদ জানান, আনোয়ার সাহিদের গ্রামের বাড়ি নীলফামারীর ডোমারে। দিনাজপুরের দশ মাইল এলাকায় গম গবেষণা ইনস্টিটিউটে প্রায় ১৫ বছর চাকরি করেন তিনি। সর্বশেষ জয়দেবপুরে কর্মরত অবস্থায় ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে অবসরে যান।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জরুরি একটি ফোন পেয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় আনোয়ার সাহিদ সাবিহাদের বলেন, দিনাজপুর থেকে কেউ একজন তার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। তার সঙ্গে দেখা করতেই শ্যামলী যাচ্ছেন। তবে ওই ব্যক্তির বিষয়ে কিছুই বলে যাননি আনোয়ার সাহিদ। রাতে নিহতের মুঠোফোন থেকে কল করে সাবিহাদের সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে যেতে বলা হয়। তারা সেখানে গিয়ে দেখতে পান আনোয়ার সাহিদের নিথর দেহ পড়ে আছে হাসপাতালের স্টেচারে।

আনোয়ার সাহিদকে কল্যাণপুরের বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে সাবিহা নাহিদ বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা এই ঘটনা ঘটালে আমার মামার সঙ্গে থাকা মুঠোফোন ও মানিব্যাগও নিয়ে যেত। কিন্তু সেটা হয়নি।’ দ্রুত সময়ের মধ্যে মামার খুনিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

হলিল্যান্ড গলির একটি বাসার নিরাপত্তাকর্মী মো. বাদশা মিয়া জানান, সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাস্তায় চেঁচামেচি শুনে বাইরে গিয়ে তারা দেখেন- রাস্তায় পড়ে থাকা রক্তাক্ত একজনকে ঘিরে আছে কয়েকজন রিকশাচালক। এসময় রাস্তার উপরেই একটি ছুরি পড়ে ছিল।

আদাবর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেলিম হোসেন জানান, কয়েক বছর আগে স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয় আনোয়ার সাহিদের। এরপর থেকে ভাগনির সঙ্গে মিরপুরের কল্যাণপুর এলাকায় থাকতেন তিনি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কোনো এক ব্যক্তির ফোন পেয়ে তিনি শ্যামলীর হানিফ কাউন্টারে যাওয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন।

তিনি জানান, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে শ্যামলীর হানিফ পরিবহনের বাস কাউন্টারের পাশেই হলিল্যান্ড গলিতে অচেনা একজন তাকে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাত ১১টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আদাবর থানার পরিদর্শক জানান, ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, হত্যাকাণ্ডটি ঘটে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ১৩ থেকে ৭টা ১৫ মিনিটের মধ্যে। এই সময়ের আগে অচেনা এক যুবককে পকেটে হাত ঢুকিয়ে তিন-চার মিনিট ধরে ওই গলিতে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। শ্যামলী রিং রোডের দিক থেকে আনোয়ার সাহিদ ওই গলিতে ঢোকার পর যুবকটি সামনের দিক থেকে এসে মুহূর্তের মধ্যে পকেট থেকে ছুরি বের করে তার পেটে আঘাত করে পালিয়ে যায়।

তিনি জানান, ছুরিকাঘাতে ওই বৃদ্ধের ভুঁড়ি বেরিয়ে গেলে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি। ঘটনাস্থল থেকে একটি ছুরি জব্দ করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে- বাসা থেকে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে আনোয়ার সাহিদকে হত্যা করা হয়েছে। যে ছুরিটি জব্দ করা হয়েছে সেটি দিয়েই হত্যা করা হয়েছে ওই বয়বৃদ্ধকে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান,এ ঘটনায় এক বা একাধিক মানুষ জড়িত। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। কে বা কারা তাকে হত্যা করেছে, তা জানার চেষ্টা চলছে। হত্যার কারণ জানার পাশাপাশি হত্যাকারীকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

More News...

কোন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল?

সোনার দাম আবার বাড়লো, ভরি ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২৮ টাকা