দোয়া কবুলের মাস রমজান

দোয়া কবুলের মাস রমজান

মাওলানা মুহাম্মদ সালমান : মুমিন বান্দার জন্য রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে আসে রমজানুল মোবারক। আল্লাহ যাদের তাওফিক দান করেন তারা পবিত্র এ সময়গুলোয় সিয়ামব্রত পালনের পাশাপাশি কুরআন তেলাওয়াত, জিকির-আজকার ও মোনাজাতের মাধ্যমে খোদার সন্তুষ্টি অর্জন করেন।

তওবা-ইসতিগফার ও নফল নামাজের পর খোদার কাছে কেঁদে কেঁদে জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও জান্নাতের আবেদন করেন।

হজরত উবাদাহ ইবনে সাবেত (রা.) বলেন, একবার রমজানের কিছুদিন আগে রাসুল (সা.) আমাদের বললেন, রমজান মাস সমাগত প্রায়। এটা বড়ই বরকতের মাস। আল্লাহতায়ালা এ মাসে তোমাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন এবং রহমত বর্ষণ করেন। গোনাহ মাফ করেন, দোয়া কবুল করেন। ইবাদতের প্রতি তোমাদের আগ্রহ লক্ষ করেন এবং তা নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন। সুতরাং আল্লাহকে সৎকাজ দেখাও। হতভাগা ওই ব্যক্তি, যে এ মাসে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত থেকে গেল। (তবরানি শরিফ)

অন্য হাদিসে এসেছে রাসুল (সা.) বলেছেন, রমজানের প্রতিটি দিবা-রজনিতে অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং প্রতিদিন প্রতিটি মুসলমানের একটি করে দোয়া কবুল হয় (আত্তারগিব ওয়াত্তারহিব)। এ হাদিস দুটি দিয়ে প্রমাণিত হয় রহমতের এ মাসে মাওলার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া মুমিনের দায়িত্ব। দুনিয়া আখিরাতের কল্যাণের জন্য বেশি বেশি দোয়ার আমল করা প্রকৃত রোজাদারের কাজ। অত্যন্ত আফসোসের সঙ্গে বলতে হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে পবিত্র এ মাসে এতসব ফজিলতের ঘোষণা থাকার পরও দিনের-পর-দিন চলে যায় কিন্তু খোদার দরবারে কায়মনে প্রার্থনা করার সুযোগ আমাদের অনেকেরই হয় না।

যারা আগ্রহ নিয়ে দোয়া করি, আমরা ক’জনই-বা দোয়ার সব শর্ত পালন করি! এ প্রসঙ্গে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনের সুরা আরাফের ৫৫ ও ৫৬ নম্বর আয়াতে বলেন, তোমরা তোমাদের রবকে ডাক বিনয়ের সঙ্গে গোপনে। নিশ্চয়ই তিনি ভালোবাসেন না সীমা লঙ্ঘনকারীদের। আর জমিনে সংস্কার আসার পর তাতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না এবং তাকে ডাক ভয় ও আশা নিয়ে। নিশ্চয়ই আল্লাহর রহমত ইহসানকারীদের অতি নিকটে।

উল্লিখিত আয়াত দুটি থেকে দোয়ার চারটি পদ্ধতি জানা যায়। যেমন : বিনয়, গোপনীয়তা, ভয় ও আশা। অর্থাৎ, আল্লাহকে ডাকতে হবে বিনয়ের সঙ্গে গোপনে ভয় ও আশা নিয়ে। এগুলো দোয়ার সাধারণ আদব। তবে প্রকাশ্যেও দোয়া করা যায়, যা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত।

রাসুল (সা.) বৃষ্টির জন্য দোয়া করেছিলেন প্রকাশ্যে (বুখারি মুসলিম)। তা ছাড়া দোয়ার আরও কিছু আদব হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। যেমন : ১. আল্লাহর প্রশংসা ও রাসুলের ওপর দরুদ পড়ার মাধ্যমে দোয়া শুরু ও শেষ করা (তিরমিজি, আবু দাউদ, হাকেম); ২. আল্লাহর কাছে চাওয়ার ক্ষেত্রে মনে দৃঢ়তা রাখা অর্থাৎ এভাবে না-বলা: ‘হে আল্লাহ তোমার ইচ্ছা হলে দাও’ (বুখারি মুসলিম)। হাদিসে এসেছে, তোমরা আল্লাহর কাছে দোয়া কর কবুল হওয়ার দৃঢ়বিশ্বাস নিয়ে (তিরমিজি); ৩. দোয়ার মধ্যে ছন্দ না-থাকা। ইবনে আব্বাস (রা.) ইকরিমাহকে (রহ.) বলেন, দোয়ার সময় ছন্দ পরিহার কর। কেননা, রাসুল ও সাহাবারা এরূপ করেননি (বুখারি); ৪. দোয়ায় বাড়াবাড়ি তথা অতিরঞ্জিত কিছু না-বলা।

আমরা অনেকেই দোয়া করি; কিন্তু কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত দোয়ার এসব শর্ত অনুসরণ করি না। আল্লাহর কাছে দোয়া কবুল করানোর জন্য রমজানের এ গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বিনয় বিশ্বাস ও আন্তরিকতার সঙ্গে নবিজির দেখানো পন্থায় দোয়া করলে নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করবেন।

ইহকাল ও পরকালের সফলতার জন্য কীভাবে দোয়া করতে হবে, এ মর্মে আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে শিক্ষা দিয়েছেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাদের ইহকালে কল্যাণ দাও এবং পরকালেও কল্যাণ দাও এবং আমাদের আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করো (সুরা বাকারা ২০১)।’ প্রতিদিন ইফতারের সময়, শেষ রাতে ও তাহাজ্জুদ নামাজের পর দোয়া কবুলের বিশেষ মুহূর্ত। বেশি করে দোয়া, ক্ষমা প্রার্থনা, তওবা, ইসতিগফার, দরুদ শরিফ ইত্যাদি রমজানের বিশেষ আমল। আল্লাহতায়ালা আমাদের সব নেক দোয়াগুলো কবুল করুন। আমিন।

লেখক : ইমাম, আমীর উদ্দিন দারোগা ঘাট মসজিদ, বাবুবাজার, ঢাকা

More News...

শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত

চাঁদ দেখা যায়নি, ব্রুনাই-মালয়েশিয়ায় রোজা শুরু মঙ্গলবার