শাহাজামান বাদশা, পাইকগাছা (খুলনা) : প্রজনন মৌসুমকে ঘিরে গত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে ৯২ দিন মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা থাকার পর ১ সেপ্টেম্বর থেকে জেলেদের মাছ ধরার অনুমতি মিলেছে। তবে এ বছর নিয়মের বেড়াজালে পিষ্ট হয়ে বিগত বছরের তুলনায় মাছ ধরতে যাওয়ার আগ্রহ অনেক কম দেখা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে কেউ নৌকায় জাল, কাঠ ও বরফ উঠাচ্ছেন, কেউ নৌকার পাটা সংস্কার করছেন। কেউ পাশ না পেয়ে অফিসের আশপাশে ঘুরাঘুরি করছেন। আবার কেউ পাশ নিয়ে সুন্দরবনে মাছ ধরার উদ্যেশ্যে রওনা দিচ্ছেন। এমনও অবস্থা বিরাজ করছে সুন্দরবন সংলগ্ন অঞ্চল গুলোতে ।
সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরা, অভয়ারণ্য প্রবেশ করে বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধের জন্য পাশ ইস্যু করার ক্ষেত্রে এবার নির্দিষ্ট খালের নাম পারমিটে লিখে দেওয়া, স্টেশনের বাহিরে কোন জেলে মাছ ধরতে যেতে পারবেনা এমন শর্ত সহ বেশ কয়েকটি শর্ত আরোপ করা হয়েছে। শর্তের কারণে মাছ ধরা নিয়ে জেলেদের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে। কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের আওতায় শাকবাড়িয়া, বজবজা, খাসিটানা, আন্ধারমানিক এই চারটি ফাঁড়ি রয়েছে। এবার কাশিয়াবাদ স্টেশন থেকে পাশ নেয়া জেলেরা ওই স্টেশনের আওতাধীন সুন্দরবনের বাইরের খালে মাছ ধরতে পারবে না। জেলেদের পাশপারমিটে এবারই প্রথম নির্দিষ্ট করে খালের নাম উল্লেখ করে দেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে গত ২৮ আগস্ট সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন একটি লিখিত নির্দেশনা দিয়েছেন। নির্দিষ্ট খালে মাছ ধরার এই নির্দেশনায় জেলেদের মুখের হাসি বিলীন হয়েছে। ভালো মাছ পাওয়া নিয়ে তারা শঙ্কায় রয়েছেন। খাল বিভাজন নিয়ে সকলের মধ্যে এক চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
কয়েকজন জেলেদের কাছে বর্তমান পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন আমরা সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। অন্য কোন কাজ করতে পারি না। তিনটি মাস পরিবার নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কেটেছে সরকার যে চাল দেয় তাতে কিছু হয়না। ধার দেনা ও সমিতি থেকে লোন করে সংসার চালাতে হয়েছে। তারা আরও বলেন, আমাদের সুন্দরবন খুলে দেওয়ার আনন্দ বিলীন হয়ে গেছে। আগে একটি খালে মাছ না পড়লে অন্য খালে যেতে পারতাম। এবার সে সুযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ জন্য মাছ পাওয়া নিয়ে আমরা চিন্তিত্ব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একধিক বিএলসিধারী জেলে জানান, কাশিয়াবাদের আওতায় সুন্দরবনে মাছ ধরার এলাকা কম। এজন্য এবার এখান থেকে পাশ পারমিট নিয়ে কি করবো। কোবাদক স্টেশন থেকে পাশ নিয়ে মাছ ধরতে যাবো তকে সেখানকার বিএলসি না থাকায় তাহারা বিপাকে রয়েছেন।
কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের স্টেশন কর্মকর্তা শ্যামা প্রসাদ রায় বলেন, এ স্টেশনের আওতায় ৯৪৩ বিএলসি রয়েছে। তবে পাশ দেওয়ার সময় খাল নির্দিষ্ট করতে যেয়ে কিছুটা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। বিএলসির তুলনায় জায়গা কম হওয়ায় জেলেরা এ স্টেশন থেকে পাশ নিতে চাচ্ছেন না। প্রথমদিনে শতাধিক বিএলসিধারী জেলে পাশ নিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছেন। বিগত বছর প্রথম দিনে এ স্টেশনে ৫ শতাধিক জেলে পারমিট গ্রহন করে।
খুলনা রেঞ্জের সহকারি বন সংরক্ষক (এসএিফ) এজেডএম হাছানুর রহমান বলেন, এই সিধান্ত অনুযায়ী জেলেরা এক স্টেশন থেকে পাশ নিয়ে অন্য স্টেশনের আওতাধীন বনে যেতে পারবেনা। এতে অপরাধ প্রবনতা কম হবে।