রেলপথে পণ্য আমদানিতে ধস, অর্ধেকে নেমেছে রাজস্ব

রেলপথে পণ্য আমদানিতে ধস, অর্ধেকে নেমেছে রাজস্ব

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : ভারত থেকে রেলপথে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি হ্রাস পেয়েছে। ডলার সংকটের কারণে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলপথ দিয়ে আমদানি এবং রাজস্ব আয় অর্ধেকে নেমেছে। কয়েক মাস আগেও এই রেলপথে মালবাহী ওয়াগনে করে প্রতিদিন চাল, ভুট্টা, গম, পাথর, পেঁয়াজ, ছাই ও ক্লেসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হতো। কিন্তু এখন তা অনেকটাই কমে গেছে। ডলার সংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থার উন্নতি হবে না বলে জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, আমদানি কমে যাওয়ায় দর্শনা স্টেশনের রেল ইয়ার্ডের আগের সেই কর্মব্যস্ততা আর নেই। মালবাহী ওয়াগন কম আসায় শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন। ভাড়া না থাকায় ট্রাকচালক ও হেলপাররা শুয়ে-বসে সময় কাটাচ্ছেন। এ অবস্থায় তাদের সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরে দর্শনা রেলপথ দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি হয়েছে গত অর্থবছরের অর্ধেক। গত জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪২৭ রেকে (মালবাহী ট্রেন) ১৭ হাজার ৭৩৬ ওয়াগন পণ্য আমদানি হয়েছে। এতে আয় হয়েছে ৪৬ কোটি ৮৩ লাখ টাকা।

এর মধ্যে জুলাই মাসে ৫৭ রেকে ২ হাজার ৩৭৮ ওয়াগনে ১ লাখ ৪১ হাজার ২৪৩ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। রাজস্ব আয় হয়েছে ৬ কোটি ২৯ লাখ ৭৭ হাজার ৬৮০ টাকা। আগস্টে ৬২ রেকে ২ হাজার ৫৫৮ ওয়াগনে ১ লাখ ৫১ হাজার ৮৭৪ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। রাজস্ব আয় হয়েছে ৭ কোটি ২৪ লাখ ৮২ হাজার ২১৪ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে ৫৫ রেকে ২ হাজার ২৮৯ ওয়াগনে ১ লাখ ৩৬ হাজার ৪১ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। রাজস্ব আয় হয়েছে ৭ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার ৪৬ টাকা।

 

অক্টোবরে ৪১ রেকে ১ হাজার ৭৩৬ ওয়াগনে ১ লাখ ৩ হাজার ৯৪ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। রাজস্ব আয় হয়েছে ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৬৫ টাকা। নভেম্বর মাসে ৩৬ রেকে ১ হাজার ৫০১ ওয়াগনে ৮৮ হাজার ৯৫২ মেট্রিক টন পণ্য আমমানি হয়েছে। রাজস্ব আয় হয়েছে ৪ কোটি ৭০ লাখ ৬ হাজার ৬৩৩ টাকা। ডিসেম্বরে ৪২ রেকে ১ হাজার ৭৭৮ ওয়াগনে ১ লাখ ৫ হাজার ৭৫৫ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। রাজস্ব আয় হয়েছে ৪ কোটি ৯ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।

 

জানুয়ারি মাসে ৩৭ রেকে ১ হাজার ৫৫৭ ওয়াগনে ৯০ হাজার ৬৮৩ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। রাজস্ব আয় হয়েছে ৪ কোটি ২৩ লাখ ৭৮ হাজার ৭৬২ টাকা। ফেব্রুয়ারিতে ৩৪ রেকে ১ হাজার ৪৫৯ ওয়াগনে ৮৬ হাজার ৫২৩ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। রাজস্ব আয় হয়েছে ৩ কোটি ৯৪ লাখ ১৪ হাজার ৪৯১ টাকা। মার্চে ২৯ রেকে ১ হাজার ২৪৮ ওয়াগনে ৭৩ হাজার ৯১০ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। রাজস্ব আয় হয়েছে ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৩২ হাজার ৯২১ টাকা। এপ্রিলে ৩৪ রেকে ১ হাজার ২৩২ ওয়াগনে ৮৪ হাজার ৯০৮ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়েছে। রাজস্ব আয় হয়েছে ৩ কোটি ৯২ লাখ ৭৩ হাজার ৭২৮ টাকা।

এর আগের ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ৭০৯টি রেকে ৩২ হাজার ৪৭৪ ওয়াগন পণ্য আমদানি হয়েছে। তখন আয় হয়েছিল ৮৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।
দর্শনা রেলকলোনির বাসিন্দা বন্দরের আনলোডের কাজ করা শ্রমিক বিপ্লব আলী বলেন, এই বন্দরের আনলোড পয়েন্টে আগের মতো মাল আসে না। আমদানি কম হওয়ায় আমাদের কাজও কম। এখন সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়েছে।

ট্রাকচালক শাকিল আহমেদ বলেন, মালামাল আমদানি কমে যাওয়ায় আমাদের ট্রাকের ট্রিপও কম। এমনিতেই তেলের দাম বাড়ায় লাভ কম। তার ওপর আমদানি কমে যাওয়ায় ভাড়াও কম পাচ্ছি। ট্রিপ বাড়লে সংসার চালানো সহজ হতো।শ্রমিক মোহাম্মদ আলী বলেন, সকাল থেকে বসে থেকেও সাড়ে তিনশ-চারশ টাকার বেশি রোজগার হয় না।

শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভারত থেকে মালামাল আসলে কাজ থাকে। নয়তো অলস সময় পার করতে হয়। আগে প্রতিদিন মালামাল আসতো। এখন কোনোদিন আসে আবার কোনোদিন আসে না।

ট্রান্সপোর্ট কর্মী সুমন বলেন, রোজার মাস থেকে পণ্য আমদানি নেই বললেই চলে। বেকার বসে আছি। এখন অল্প কিছু মাল আসছে। আমদাকিকারকরা ট্রাকভাড়া একেবারেই নিচ্ছে না।

দর্শনা বন্দরের ব্যবসায়ী ইব্রাহীম পাঠান বলেন, গত অর্থবছরের তুলনায় আমদানি কমে যাওয়ায় আমরা খুব সমস্যা আছি। আমরা যারা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট তাদের কাজ কমেছে। এছাড়া আমদানি কমে যাওয়ার কারণে লেবার-ট্রান্সপোর্টকর্মীসহ অন্যরা বেকার বসে আছেন। এর একটা সমাধান হওয়া উচিত।

 

দর্শনা সিঅ্যান্ডএফের বন্দর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বলেন, ডলার সংকটের কারণে এখন প্রতি মাসে ২৫-৩০ রেক পণ্য আসছে। আগে ৫০-৬০ রেক মালামাল আসতো। প্রতি এলসিতে শতভাগ টাকা জমা রাখতে হয়। ব্যাংকে তিন-চার মাস টাকা পড়ে থাকে। পণ্য আসার পর বাজার দরও কমে যায়। সেক্ষেত্রে লোকসান হয়। লোকসানের কারণে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছি। সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, ডলার সংকট নিরসন করে ১০ শতাংশ মার্জিনে পণ্য আমদানির সুযোগ করে দেওয়া হোক। শত শত মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে।

 

দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলস্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট মির্জা কামরুল হক বলেন, গত বছরের তুলনায় এবছর রাজস্ব আয় অর্ধেকে নেমেছে। মালামাল আমদানি অর্ধেক। যে কারণে রাজস্ব কমেছে। ভারত থেকে চাল, ভুট্টা, গম, পাথর পেঁয়াজ, ছাইসহ বিভিন্ন পণ্য দেশে আমদানি হয়। রেলপথে পণ্য আমদানি করলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হন। সহজে আমদানি ও খালাস করা সম্ভব হয়। খরচ তুলনামূলক কম। পণ্য আমদানি বাড়লে রাজস্ব আয় বাড়বে।

More News...

খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ: মির্জা ফখরুল

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা