কুমিল্লায় ক্রেতাশূন্য ব্রোকারেজ হাউজ, বাড়ছে হতাশা

কুমিল্লায় ক্রেতাশূন্য ব্রোকারেজ হাউজ, বাড়ছে হতাশা

কুমিল্লা প্রতিবেদক : দিন দিন শেয়ারবাজারে সংকট বেড়েই চলছে। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। ফলে কুমিল্লার অধিকাংশ ব্রোকারেজ হাউজ এখন ক্রেতাশূন্য। গত ৮ মাস ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে বাজার। অর্থাৎ কৃত্রিম সাপোর্ট দিয়ে বাজার ধরে রাখার চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ। নতুন করে নেই আশার আলোও। অনিশ্চয়তার মধ্যে শেয়ারবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার পরিস্থিতি এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কম হওয়ায় শেয়ারবাজারে এর প্রভাব পড়ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কুমিল্লা নগরীতে ১৪টি ব্রোকারেজ হাউজের শাখা অফিস রয়েছে। অধিকাংশ হাউজে কর্মকর্তা-কর্মচারী ছাড়া বিনিয়োগকারীদের দেখা মেলেনি। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগকারীদের দেখা মিললেও এদের সংখ্যা খুবই কম। হাতেগোনা দু-একজন ক্রেতা। এদের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ। সাংবাদিক পরিচয় জেনে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনেকে। অনেকেই আবার হারানো দুঃখ প্রকাশ করে চোখের পানিও ফেলেছেন। অর্থ ফিরে পাওয়ার আশায় অনেকে এখনও আসেন ব্রোকারেজ হাউজে। নতুন করে বিনিয়োগের অবস্থা নেই এদের অনেকেরই। তাই শেয়ারবাজার আবারও ঘুরে দাঁড়াবে এই স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে আছেন তারা।

সূত্র মতে, ফ্লোর প্রাইস না তুললে বাজার ইতিবাচক হবে না। উল্টো সংকট আরও বাড়বে। তাদের মতে, যারা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেছেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে তাদের সমস্যা সবচেয়ে বেশি। কারণ ঋণের সুদ প্রতিদিন বাড়ছে। এছাড়া যেসব মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউজ ঋণ দিয়েছে তারাও বিপদে পড়েছে। তবে বাজার উন্নয়নে বিকল্প ভাবছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জে কমিশন (বিএসইসি)। এজন্য বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করছে বিএসইসি।

জালাল উদ্দিন নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, শেয়ারবাজারের টানা পতন থামানোর জন্য দ্বিতীয়বারের মতো ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দিয়েছে বিএসইসি। এখন ফ্লোর প্রাইসে নেমে এসেছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার। প্রতিদিনই বাড়ছে ফ্লোর প্রাইসে নামা কোম্পানির সংখ্যা। এতে কমছে সূচক ও লেনদেনের পরিমাণও। তারল্য সংকটের করণেই শেয়ারবাজারে এ পরিস্থিতি বলে মনে করেন তিনি।

রশিদ সিকিউরিটিজ ব্রোকারেজ হাউজের বিনিয়োগকারী মো. জামসেদ ভুইয়া বলেন, ২০১০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এর বেশির ভাগ সময় শেয়ারবাজারে ধস। এ সময়ের মধ্যে যারা বিনিয়োগ করেছেন তাদের ৯০ শতাংশই লুজার হয়েছেন। যে কারণে হাউজ এখন ফাঁকা। বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। ২০১০ সাল থেকে আমি অর্ধকোটি টাকা বিনিয়োগ করেছি। ৮০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। চেষ্টা করছি রিকোভারি করার, তবে বাজারের বর্তমান যে অবস্থা রিকোভারি হবে বলে মনে হয় না।

র‌্যাপিড সিকিউরিটিজ হাউজের কমপ্লাইন্স অফিসার হাসান আহমেদ ভুইয়া বলেন, বিনিয়োগকারীরা রিটার্ন না পাওয়ায় দিন দিন হতাশাগ্রস্ত হচ্ছেন। যে কারণে তারা এখন হাউজবিমুখ। বর্তমান বাজার পরিস্থিতির কারণে নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন না হাউজে। অনিশ্চয়তার কারণে বিনিয়োগে আমরাও উৎসাহ দিচ্ছি না আপাতত। তবে আশা করছি বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতি দূর হলে বাংলাদেশের শেয়ারবাজার আবারও ঘুর দাঁড়াবে। সে পর্যন্ত জেনে বুঝে বিনিয়োগকারীদের ট্রেড করার পরামর্শ দেন তিনি।

More News...

খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ: মির্জা ফখরুল

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা