পার্বত্য জেলায় ভোটের রাজনীতিতে পাহাড়ি-বাঙালি ভাই ভাই

পার্বত্য জেলায় ভোটের রাজনীতিতে পাহাড়ি-বাঙালি ভাই ভাই

কামাল পারভেজ
খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান এই তিন জেলা নিয়ে পার্বত্য জেলা হিসেবে পরিচিত। তবে চট্টগ্রামের অংশবিশেষ হিসেবেও পার্বত্য চট্টগ্রামও বলা হয়। বাংলাদেশের ভৌগলিক খন্ড হিসেবে পার্বত্য জেলা হচ্ছে অন্যতম। দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭৩ সালে ৭ জানুয়ারী মাসে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ইতছড়ি মৌজাতেই গঠন করা হয় শান্তিবাহিনী নামক দেশের ভিতর আরেকটি বিদ্রোহী দল। দুই ভাই-ইয়ের নেতৃত্বে গড়ে উঠতে থাকে এই দলটি। মানবেন্দ্র লারমার ছোট ভাই জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ডাক নাম সন্তু লারমা। সন্তু লারমার নামের সাথে মিল রেখে করা হয় শান্তি বাহিনী যাকে পার্বত্য জেলার গেরিলা বাহিনীও বলা হতো।

১৩ টি উপজাতি (আদিবাসী জনগোষ্ঠী) কে নিয়ে নিজস্বতার স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলার লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর সাথে কয়েক দফা বৈঠকের ফলপ্রসূ কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে না পারায় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উক্তি সবাই বাংলাদেশী ও বাঙালি শব্দকে মেনে নিতে অপারগতার প্রকাশের মধ্য দিয়ে শান্তিবাহিনী গঠনের প্রস্তুতি নেয়। এটাও একটা নীলনকশা বলা যেতে পারে। কারণ চাকমা সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠী তাঁরা চেয়েছিলো তাদের একক নেতৃত্বে ও অধিনস্হ বজায় রেখে অন্যান্য সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধীন অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। যখনই এই চেষ্টা বিফলে যায়, ঠিক তখনই আরেকটি ভিন্ন মতের পথ তৈরি করতে সকল সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীকে ঐক্য করে তুলতে তিন পার্বত্য জেলাকে নিজস্ব আদিবাসী দাবিদার বলে সকল ভূমির ও একক রাষ্ট্রের স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যমতে সচেষ্টায় গড়ে তুলে গেরিলা বাহিনী। আর এই সশস্ত্র শাখা /গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণ দাতা এবং অস্ত্র সশস্ত্র সরবরাহ যোগানকারী হিসেবে ছিলো পার্শ্ববর্তী বন্ধু প্রিতম রাষ্ট্রের একটা কৌশলগত ভূমিকা।

উপরস্থ বিষয় গুলো একটু তুলে ধরার চেষ্টা করলাম এই কারণে বর্তমান পার্বত্য জেলার রাজনীতি কোনধারা চলছে সেটা একটু উপলব্ধি করার জন্য। ১৯৭৩ –১৯৯৭ বিগত ২৪ বছরের বিদ্রোহীর অবসান ঘটাতে ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ ইং সালে সরকারের সাথে শান্তিচুক্তিতে আবদ্ধ হন। এখানে একটু বলে রাখা দরকার আওয়ামীলীগ ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর শান্তিবাহিনীর সাথে শান্তিচুক্তি করার জন্য ভারতের কংগ্রেস একটা বৃহত ভূমিকা পালন করে। ৭৩ সালে যখন শান্তিবাহিনী গঠন হয় তখনও ক্ষমতায় ছিলো কংগ্রেস। যাইহোক, পার্বত্য জেলার বাসিন্দারা মনে করেছিলো শান্তিচুক্তিতে বিপ্লবী পরিবর্তন আসবে, আর কেউ গুম- খুন হবে না, নিরব চাঁদাবাজি বন্ধ হবে। শান্তিবাহিনী ২৪ বছরে পার্বত্য জেলার আধিপত্যতা চালানো কালিন ব্যবসায়ী মহল থেকে টোকেন মাধ্যমে ৬ মাস থেকে ১ বছরের চাঁদা নিয়ে যেতো।

এখানে আর কোন গেরিলা বাহিনী ছিলোনা। কিন্তু চুক্তি হওয়ার পর পার্বত্য বাসিন্দাদের উপর খড়গ নেমে আসলো। শান্তিবাহিনীর সাথে চুক্তি হয়েছে বটে, গা-ছাড়া দিয়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি উপজাতিয়ও পাহাড়ি সংগঠন। শান্তিবাহিনী তথা পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি সমতি ( পিসেজেএসএস) চুক্তি বিরোধী তথা ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাট ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এই দুইটা সংগঠন চুক্তির পরবর্তী সময় কার্যক্রম শুরু করেলও বর্তমানে তিন পার্বত্য জেলায় নামে বে-নামে ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের নামেও চাঁদা আদায় করে নিচ্ছে। এখন চাঁদা আদায় করতে পাহাড়ি -বাঙালি বলতে কোন শব্দ নেই কাউকেই ছাড় দেবার রক্ষা কবজ নেই। মাঝে মধ্যে পাহাড়ি -বাঙালির সংঘাতের মতো ঘটনা ঘটে, একে অপরের উপর আক্রামন্তেক হয়ে উঠে।

বাঙালিদেরকে বহিরাগত বলে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বিতারিত করে দেওয়ার মত মানববন্ধন, আন্দোলন, স্লোগানও হয়ে থাকে। এই হচ্ছে বর্তমান সময়ের পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি। তবে অভিন্নতায় একটা বিষয় হচ্ছে পাহাড়ি সংগঠনের বাহিরে জাতীয় রাজনৈতিক দল ও স্হানীয় উভয় রাজনীতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সমষ্টিগত ভাবে ভোটের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়ে উঠে এক টেবিলে। নির্বাচনকে ঘিরে খাওয়া দাওয়া মিছিল মিটিংও চলে এক সাথে।

ভোটের রাজনীতিতে একটাই স্লোগান ধরা হয় “পাহাড়ি -বাঙালি ভাই ভাই তমুক মার্কায় ভোট চাই” তখন কিন্তু সাম্প্রদায়িক হিসাবটা গাণিতিক ভাবে যোগ বিয়োগ মেলানো বড়ই হাস্যকর। উপজাতি জনগোষ্ঠীরাও তাদের প্রার্থী বিজয়ের মালা ছিনিয়ে আনুক সেইদিকটাই কৌশলগত ভাবে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা। তবে এটাও সত্য যে জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। আদি জনগোষ্ঠীরা এখন বিভিন্ন দলের সাথে সম্পৃক্ততায় রাজনীতি করে আসছে।
লেখক :- সাংবাদিক ও কলামিস্ট।

More News...

আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ মিয়ানমার সম্পর্ক উন্নয়ন আবশ্যক

বেঁচে থাকার জন্য খাদ্যের কোনো বিকল্প নেই, কর্মব্যস্ত সুখী জীবন গড়তে খাদ্য সুরক্ষা নিশ্চিতকরণ সর্বাগ্রে জরুরি