খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ বন্ধে টিআইপিস প্রযুক্তি দরকার : ড্যাব

খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ বন্ধে টিআইপিস প্রযুক্তি দরকার : ড্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে হলে টিআইপিএস প্রযুক্তিতে চিকিৎসা প্রয়োজন, এ জন্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানীর কোনো হাসপাতালে নিতে হবে। আজ বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) এ কথা জানান।

সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, ড্যাবের মহাসচিব ডা. আব্দুস সালাম, উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হালিম ডোনার, ডা. সিরাজউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. এমএ সেলিম, ডা. মো. মোসাদ্দেক হোসেন বিশ্বাস ডাম্বেল, ডা. শহীদ হাসান, ডা. এরফানুল হক সিদ্দিকী, অধ্যাপক ডা. জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা. মেহেদী হাসান, ডা. মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, ডা. পারভেজ রেজা কাকন, ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, ডা. শেখ ফরহাদ, ডা. খালেকুজ্জামান দীপু, ডা. নিলোফা ইয়াসমিন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ড্যাবের দপ্তর সম্পাদক ডা. ফখরুজ্জামান ফখরুল।

ড্যাবের মহাসচিব ডা. আব্দুস সালাম বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রক্তক্ষরণ বন্ধের জন্য আমাদের দেশে যে প্রযুক্তি আছে তা ইতিমধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারে প্রয়োগ করা হয়েছে (Band Ligation), এছাড়া যে সমস্ত আধুনিক পদ্ধতি যেমন TIPS প্রযুক্তি আমাদের দেশে নেই, এমনকি উপমহাদেশের বা এশিয়ার অন্য কোন দেশেও নেই। এই প্রযুক্তিটি শুধুমাত্র মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানীর সুনির্দিষ্ট কয়েকটি হাসপাতালে রয়েছে।’

ডা. আব্দুস সালাম বলেন, খালেদা জিয়া এখন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। গত ২৮ নভেম্বর খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড সর্বশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা জানিয়েছেন এবং তার পরবর্তী চিকিৎসার জন্য কিছু সুপারিশও উপস্থাপন করেছেন।

ডা. সালাম বলেন, খালেদা জিয়াকে লিভারের সমস্যার কথা বিবেচনা নিয়েই ১৩ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি করনো হয়। ওইদিন রাতে খুবই রক্ত বমি হয়। তার খাদ্যনালীতে ব্যাপক রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাকে জীবন রক্ষার উদ্দেশ্যে দ্রুত রক্ত ও প্লাজমা ফ্লুইড দেওয়া হয়। অধ্যাপক ডাঃ শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে দ্রুত এন্ডোসকোপির মাধ্যমে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা শুরু হয় এবং ৬ টি জায়গায় ব্যান্ড লাইগেশনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক রক্তক্ষরণ বন্ধ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। সেই মুহূর্তে তিনি শক এ চলে গিয়েছিলেন এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে সেই যাত্রায় জীবন রক্ষা পায়। খালেদা জিয়া ডায়াবেটিস ও হার্ট ফেইলিউরের রোগী। উনার হার্ট ফেইলিউর এমন পর্যায়ে থাকে যে কোনো ডিকম্পেসেশন হলে হার্ট ফেইলিউর হয়। তবুও দীর্ঘ সময় প্রচেষ্টার ফলে পরিপাকতন্ত্রের রক্তক্ষরণ বন্ধ করা সম্ভব হয়।

তিনি বলেন, তবে এ সকল রোগীর পুনরায় রক্তক্ষরণ খুবই স্বাভাবিক (প্রথম সপ্তাহে শতকরা ৫০ ভাগ এবং ৬ সপ্তাহের মধ্যে যা শতকরা ৭০ ভাগ)। পরবর্তীতে ফের রক্তক্ষরণে খালেদা জিয়ার মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। কারণ রক্তক্ষরণ বন্ধের জন্য আমাদের দেশে যে প্রযুক্তি আছে তা ইতিমধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার ব্যাপারে প্রয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া যে সমস্ত আধুনিক পদ্ধতি যেমন TIPS প্রযুক্তি আমাদের দেশে নেই, এমনকি উপমহাদেশের বা এশিয়ার অন্য কোনো দেশেও নেই। এই প্রযুক্তিটি শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও জার্মানির সুনির্দিষ্ট কয়েকটি হাসপাতালে রয়েছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাকে উল্লিখিত দেশের উন্নত হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে নতুবা পরবর্তীতে স্থানান্তর করাও মুশকিল হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় চিকিৎসক হিসেবে আমরা জরুরি ভিত্তিতে খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক বিদেশে সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। আশা করি মানবিক বিবেচনায় স্বল্পতম সময়ের মধ্যে বর্তমান সরকার তাকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিবেন।

বিএমএ’র নেতৃবৃন্দ যা বলেছেন তা সরকারেরই বক্তব্য

খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশেই সম্ভব’ বিএমএ নেতাদের এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ডা. হারুন আল রশিদ বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সমাজকে বিভক্ত করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ এবং বিপক্ষ। খালেদা জিয়া তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। আজ তিনি গুরুতর অসুস্থ। তার মেডিকেল বোর্ড বলেছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসা দেশে তো নয় বরং উপমহাদেশেও সম্ভব না। সুতরাং বিএমএ’র নেতৃবৃন্দ যা বলেছেন তা সরকারেরই বক্তব্য। তারা সরকারের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আশা ছিল খালেদা জিয়ার এই দুঃসময়ে তারা সঠিক কথা বলবেন এবং মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করবেন।

বিদেশে থেকে চিকিৎসক আনার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশে হৃদরোগের সব চিকিৎসা হয়। তারপরও আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হলে তাকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করানো হয়েছে। বিদেশ থেকে একজন চিকিৎসক আনলেই হবে না। এটা টিমওয়ার্ক। সুতরাং এই কথার মানে হচ্ছে সময় ক্ষেপণ করা।

More News...

ওবায়দুল কাদেরের মস্তিষ্ক অলস-হৃদয় দুর্বল : রিজভী

বিএনপি বাঙালি সংস্কৃতিকে সহ্য করতে পারে না: কাদের