টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে শূন্যেই গড়াগড়ি মুমিনুলদের

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে শূন্যেই গড়াগড়ি মুমিনুলদের

স্পোর্টস ডেস্ক : টেস্ট ক্রিকেটে ২০ বছর পেরিয়ে গেলেও একই বৃত্তে থেকে গেছে বাংলাদেশ। টার্নিং উইকেট বানিয়ে মাঝে মধ্যে সাফল্য পেলেও আদতে সাদা পোশাকে উন্নতি এখনও দূরের বাতিঘর! টেস্টের খেলা দেখলে বাংলাদেশকে এখনও নবাগত দলই মনে হতে পারে। যেমনটা ঘটেছে চট্টগ্রাম টেস্টে! পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮ উইকেটের হার মুমিনুলদের গায়ে ফের ব্যর্থতার চিহ্নই এঁকে দিয়েছে। তাতে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে যাত্রা শুরু হলো পয়েন্ট ছাড়া। অথচ এই ফরম্যাটে তারা দুই দশক পার করে ফেলেছে।

টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম মৌসুমেও মুমিনুলদের স্থান হয় তলানিতে। অর্জন ছিল মাত্র ২০ পয়েন্ট। গত মৌসুমে বাংলাদেশের কিছু সুযোগ থাকলেও এবার মুমিনুলের জন্য সাফল্য পাওয়াটা বেশ কঠিন। ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ শেষে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের। উপমহাদেশের দলগুলোর বিপক্ষে নিজেদের মূল শক্তি স্পিন আক্রমণ নিয়ে লড়াই করতে নামলে উল্টো বিপদে পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। যেহেতু প্রতিপক্ষ দলগুলো স্পিন খুব ভালো সামলাতে জানে।

এর বাইরে নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলতে হবে ভিন্ন কন্ডিশনে। সবমিলিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চলতি মৌসুমে কঠিন সংগ্রামের মুখে পড়তে হবে। তবে চট্টগ্রামে পাকিস্তানের বিপক্ষে ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে সুযোগ ছিল ম্যাচটি ড্র করে পয়েন্ট তুলে নেওয়ার। কিন্তু ব্যাটিং-ব্যর্থতায় জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সেই পুরনো গল্পই মঞ্চস্থ হয়েছে।

খুব বেশি ম্যাচ জিততে না পারলেও চট্টগ্রামের এই ভেন্যুতে বাংলাদেশ বেশ কিছু ম্যাচ ড্র করেছিল। তাই জহুর আহেমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামকে পয়মন্ত ভেন্যুর খেতাবও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাগরিকার স্টেডিয়াম এক সময় দুই হাতভরে দিলেও, গত দুই বছরে এখানে কোনও টেস্ট জেতাতো দূরের কথা, ড্র পর্যন্ত করতে পারেনি স্বাগতিকরা। টেস্ট আঙিনায় মাত্রই পা রাখা নবীন দল আফগানিস্তানের বিপক্ষেও বাংলাদেশ হেরেছে ২০১৯ সালে। চলতি বছর তো অভাবনীয় এক জয় তুলে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফেব্রুয়ারিতে নিশ্চিত জয়ের ম্যাচ ক্যারিবীয়রা জিতে যায় ৩ উইকেটে। এবার পাকিস্তানের কাছে ৮ উইকেটের হারে টেস্ট দলের হতশ্রী অবস্থার কথাই প্রমাণিত হলো।

অথচ পয়মন্ত এই ভেন্যুতে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচটি ড্র করার সূবর্ণ সুযোগ ছিল। ওই চিন্তা থেকে তৈরি করা হয়েছিল ব্যাটিং সহায়ক উইকেট। মূলত টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচ বলে মুমিনুলরা কোনোভাবেই হারতে চায়নি। টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে যেভাবে চাওয়া হয়েছিল, সেই ধরনের উইকেটেই ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েছিলেন ব্যাটাররা। পাকিস্তান নিজেদের সহজাত ক্রিকেট খেললেও বাংলাদেশ নিজেদের চেনা পরিবেশে তাদের ধারেকাছেও যেতে পারেনি। দুই ইনিংসেই টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় বড় সংগ্রহ দাঁড় করানো যায়নি। অবশ্য প্রতি টেস্টেই বাংলাদেশের হারের কারণ হিসেবে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায়ই সামনে এসেছে। বিশেষ করে টপ অর্ডারের দায়টাই থাকে বেশি।

পাকিস্তানের বিপক্ষে বলতে গেলে রসদের ভাণ্ডারও অপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ দুই টপ অর্ডার ব্যাটারকে পায়নি বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসান ইনজুরি ও ফিটনেস জটিলতায় চট্টগ্রাম টেস্টে ছিলেন না। অন্যদিকে পেসার তাসকিন আহমেদও ছিটকে গেছেন। সবমিলিয়ে তাই পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণের সামনে অনেকটাই অনভিজ্ঞ দল হয়ে উঠেছিল স্বাগতিকদের টপ অর্ডার। সাইফ-সাদমান-শান্তরা কেউ কোনও ইনিংসে মাথা তুলে দাঁড়াননি। অধিনায়ক মুমিনুল হককে নিয়ে বড় প্রত্যাশা থাকলেও সেই প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি। দুই ইনিংসে তার রান ছিল ৬।

সবচেয়ে বাজে অবস্থা বলতেই হবে সাইফ হাসানের। নিজেকে প্রমাণে বার বার ব্যর্থ হচ্ছেন। দুই ইনিংসে হাস্যকরভাবে আউট হয়ে ফিরেছেন তিনি। সাদমান দুই ইনিংসে ১৫ রানে ফিরেছেন। তিন নম্বরে নামা শান্তর রানও আহামরি ছিল না, করেছেন ১৪। অথচ টপের এই ব্যাটাররা জ্বলে উঠলেই বাকিদের ওপর চাপটা কমে যেত। স্কোরবোর্ডও কাঙ্ক্ষিত জায়গায় পৌঁছে যেত।

ব্যর্থতার এই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে প্রতি টেস্ট সিরিজেই। কিন্তু প্রতিটি সিরিজের আগে প্রত্যাশার বেলুন ফুলিয়ে মাঠে নামেন ক্রিকেটাররা। মাঠে নামতেই সেই বেলুন যায় চুপসে, তখন নতুন করে ভুল শুধরে মাঠে নামার স্বপ্ন দেখা। ঠিক এভাবেই ব্যর্থতার বৃত্ত আবর্তিত হচ্ছে। কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না এই ফরম্যাটে মানসিকতা বদলানোর মাধ্যমেই সাফল্য আসা সম্ভব। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে, পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে ব্যর্থতার চক্র থেকে কীভাবে বেরিয়ে আসে মুমিনুলরা।

More News...

ওবায়দুল কাদেরের মস্তিষ্ক অলস-হৃদয় দুর্বল : রিজভী

ট্রেনে ঢাকায় ফিরছেন অনেকে, স্টেশনে ভিড়