টিকার বৈষম্যই ডেকে এনেছে ওমিক্রন?

টিকার বৈষম্যই ডেকে এনেছে ওমিক্রন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনাভাইরাসের অতি সংক্রামক রূপান্তরিত ধরন ডেল্টাকে সামাল দিতে গোটা বিশ্ব যখন ব্যতিব্যস্ত, সেই সময় আগমন ঘটেছে ভাইরাসটির নতুন আরেক রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রন। ইতোমধ্যে এই ধরনকে ‘উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে বিশ্বকে এটি মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।

কিন্তু কী কারণে মহামারির দ্বিতীয় বছরের এই সময়ে উদ্ভব হলো ভাইরাসের এই নতুন রূপান্তরিত ধরনটির? বিবর্তনের সাধারণ নিয়মেই কি আগমন ঘটেছে ওমিক্রনের নাকি বিশ্বজুড়ে টিকা বিতরণের বৈষম্যই এজন্য দায়ী? এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে ফরাসি বার্তাসংস্থা এএফপি।

গত বছরের অক্টোবরে যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনা টিকা আবিষ্কারের জোর প্রচেষ্টা শুরু হয়, তখন ‘টিকা জাতীয়তাবাদ’ বা ‘অসাম্যে’র বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছিলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসুস।

তিনি বলেছিলেন, ‘কেবল কার্যকর টিকা থাকাই গুরুত্বপূর্ণ নয়; বরং কার্যকরভাবে ব্যবহার করাও সমান গুরুত্ব বহন করে। আর এই কার্যকর ব্যবহার তখনই নিশ্চিত হবে, যখন অল্পকিছু দেশের সবাইকে টিকা দেওয়ার পরিবর্তে সব দেশের অল্পকিছু মানুষকে টিকা দেওয়া যাবে।’

টিকা আবিষ্কারের আগেই তিনি যে শঙ্কা করেছিলেন, এক বছর পর ২০২১ সালে এসে তার শঙ্কাই সত্যি হয়ে দেখা দিল। জাপান, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের মতো উন্নত দেশে যেখানে ৭৫ শতাংশেরও বেশি মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে, সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকায় টিকার ডোজ সম্পূর্ণ করেছেন মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষ।

অবশ্য পরিসংখ্যান বলছে, আফ্রিকার দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার এই হার অন্যতম সর্বোচ্চ। কারণ টিকার ডোজের স্বল্পতা ও ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কারণে এই মহাদেশের অনেক দেশে এখন পর্যন্ত ১০ শতাংশ মানুষও টিকার প্রথম ডোজ নিতে পারেননি।

ফ্রান্সের কোভিড-১৯ মহামারি টাস্কফোর্সের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ওমিক্রন ধরনটি বিশ্লেষণ করে তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, প্রথমবার এই ধরনটির জন্ম ও বিকাশ এমন কোনো রোগীর দেহে ঘটেছে, ‍যিনি দীর্ঘদিন ধরে কোভিডে ভুগেছেন এবং শরীরে করোনা প্রতিরোধী শক্তি বা অ্যান্টিবডির উপস্থিতি কম ছিল।

ফরাসি জীববিজ্ঞান, অণুজীববিদ্যা, রোগতত্ত্ব ও টিকা গবেষণাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান পাস্তুর ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য ও মহামারি বিশেষজ্ঞ আর্নাউড ফনটানেট বলেন, ‘বিজ্ঞানের ভাষ্য অনুযায়ী, যেসব এলাকায় টিকাদান কম হয়েছে, সেসব অঞ্চল ভাইরাসের নতুন প্রজাতি বা ধরনের আগমনের জন্য অনেক বেশি উপযোগী।’

‘আমার বিশ্বাস, বৈশ্বিকভাবে টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনার গুরুত্ব এবার উপলব্ধি করতে পারবে উন্নত দেশগুলো এবং স্বীকার করতে বাধ্য হবে—এই গ্রহ তখনই বিপদমুক্ত হবে, যখন আমরা বৈশ্বিক ইমিউনিটি অর্জন করতে পারব।’

বিশ্বের দরিদ্র ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে টিকা সহায়তা প্রদানের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আন্তর্জাতিক টিকা বিতরণ জোট গ্যাভি ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স ২০২০ সালে ‘কোভ্যাক্স’ নামে একটি প্রকল্প শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ১৪৪টি দেশে এই প্রকল্পের আওতায় ৫০ কোটি ডোজ টিকা সরবরাহ করা হয়েছে।

তবে সোমবার আফ্রিকান ভ্যাকসিন অ্যাকুইজিশন ট্রাস্ট, আফ্রিকা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এবং কোভ্যাক্সের এক যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, টিকা বিতরণের ব্যাপারটি আরও সুশৃঙ্খলভাবে হওয়া প্রয়োজন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশেই স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভঙ্গুর। প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যাপক অভাব রয়েছে এসব দেশে।

‘এ কারণে তাৎক্ষণিকভাবে টিকার চালান এলে এই দেশগুলো সমস্যায় পড়ে। টিকাদানের ব্যাপারে প্রচারের জন্য তারা যথেষ্ট সময় পায় না এবং বেশিরভাগ দেশের টিকা সংরক্ষণের মতো অবকাঠামোগত সুযোগও নেই।’

বিষয়টি স্বীকার করেছেন আর্নাউড ফনটানেটও। তিনি বলেন, ‘অনুন্নত দেশগুলোকে টিকা সহায়তা দেওয়ার অর্থ কেবল টিকার ডোজ প্রদান করা নয়, বরং সেসব দেশের লোকজনের টিকার ডোজ গ্রহণের জন্য যা যা প্রয়োজন, সেগুলো সরবরাহ করাও টিকা সহায়তার অন্তর্ভুক্ত।’

More News...

কোন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল?

সোনার দাম আবার বাড়লো, ভরি ১ লাখ ১৯ হাজার ৪২৮ টাকা