যশোরে ২১ টিতে নৌকা, ১১ টি আওয়ামী লীগের বিদ্রহী সতন্র, বিএনপি ২, ১ টিতে ওয়ার্কার্স পার্টির

যশোরে ২১ টিতে নৌকা, ১১ টি আওয়ামী লীগের বিদ্রহী সতন্র, বিএনপি ২, ১ টিতে ওয়ার্কার্স পার্টির

হাফিজুর শেখ, যশোর : যশোরের তিন উপজেলার ৩৫টি ইউনিয়নের ২১টিতে জয়লাভ করেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। বাকিগুলোর মধ্যে ১১টিতে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থীরা, দু’টিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপি এবং একটিতে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। এর আগে রোববার সকাল থেকে দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শার্শা, বাঘারপাড়া এবং মণিরামপুর উপজেলার এসব ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হয়। রাতে বেসরকারিভাবে ভোটের যে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে তাতে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
শার্শায় যে দশ ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তার মধ্যে পাঁচটিতে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।

অন্য পাঁচটিতে জিতেছেন দল বিদ্রোহীরা। নৌকা মার্কায় বিজয়ীরা হলেন লক্ষণপুরে আনোয়ারা খাতুন, পুটখালীতে আব্দুল গফ্ফার সরদার, উলাশীতে রফিকুল ইসলাম, ডিহিতে আসাদুজ্জামান মুকুল এবং শার্শা সদর ইউনিয়নে কবির উদ্দিন তোতা। দল বিদ্রোহীরা জয়ী হয়েছেন বাহাদুরপুরে মফিজুর রহমান (আনারস), গোগায় তবিবর রহমান (আনারস), কায়বায় আলতাফ হোসেন (আনারস), বাগআঁচড়ায় আব্দুল খালেক (আনারস) এবং নিজামপুরে সেলিম রেজা বিপুল (চশমা)।

বাঘারপাড়ার নয় ইউনিয়ন পরিষদের সাতটিতে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থীরা। বাকি একটিতে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি এবং একটিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। আওয়ামী লীগের জয়ী চেয়ারম্যানরা হলেন জহুরপুর ইউনিয়নে আসাদুজ্জামান মিন্টু, নারিকেলবাড়ীয়ায় বাবলু কুমার সাহা, ধলগ্রামে রবিউল ইসলাম, দোহাকোলায় আবু মোতালেব তরফদার, দরাজহাটে জাকির হোসেন, বাসুয়াড়িতে আমিনুর রহমান সরদার এবং জামদিয়ায় আরিফুল ইসলাম তিব্বত। ওয়ার্কার্স পার্টির সবদুল হোসেন খান দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়েছেন বন্দবিলা ইউনিয়ন থেকে। রায়পুর থেকে নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মঞ্জুর রশিদ স্বপন। স্বপন এই ইউনিয়ন থেকে ষষ্ঠবারের মতো চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন।

মণিরামপুরে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থীরা নয়টিতে, দল বিদ্রোহীরা পাঁচটিতে এবং দু’টিতে স্বতন্ত্র বিএনপি নেতারা চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন। নৌকা মার্কার বিজয়ীরা হলেন রোহিতায় হাফিজ উদ্দীন, কাশিমনগরে তৌহিদুর রহমান, খেদাপাড়ায় আব্দুল আলিম জিন্নাহ, ঝাঁপায় বর্তমান চেয়ারম্যান শামছুল হক মন্টু, মশ্বিমনগরে আবুল হোসেন, শ্যামকুড়ে আলমগীর হোসেন (বিনা প্রতিদ্বন্দ্বী), দূর্বাডাঙ্গায় মাযহারুল আনোয়ার, কুলটিয়ায় শেখর চন্দ্র রায়, নেহালপুরে হুসাইন ফারুক হোসেন। দল বিদ্রোহীরা জয়ী হয়েছেন ভোজগাতীতে আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকুরিয়ায় আইয়ুব হোসেন গাজী, হরিদাসকাটিতে আলমগীর হোসেন লিটন, চালুয়াহাটিতে আব্দুল হামিদ সরদার, খানপুরে সিরাজুল ইসলাম। স্বতন্ত্র হিসেবে বিএনপির জয়ী হয়েছেন মণিরামপুর সদরে নিস্তার ফারুক এবং মনোহরপুরে আকতার ফারুক মিন্টু।

এদিকে, রোববার সকাল থেকে দু’ একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া যশোরের তিন উপজেলার ৩৫ ইউনিয়নে শান্তিপূর্ণ ভোট গ্রহণ শুরু হয়। নির্বাচন চলাকালে প্রায় প্রতিটি কেন্দ্রে ছিলো ভোটারদের উপচেপড়া ভীড়। মানুষ নির্বিঘ্নে ভোট দিয়েছেন। সকালের দিকে কেন্দ্রগুলোতে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো বেশি, পুরুষ ভোটারদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে দুপুরের পর থেকে। কেন্দ্রগুলোতে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যরা কড়া দায়িত্ব পালন করেন। এর বাইরে সকাল থেকেই র‌্যাব, বিজিবিসহ স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্যরা কেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত টহল দেন। ছিলেন জুডিশিয়ারি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে বিশেষ টিমও। এছাড়া, সাদা পোষাকে পুলিশের বিশেষ বাহিনীর সদস্যদেরকেও কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান নিতে দেখা যায়।

নির্বাচন চলাকালে কেন্দ্রের বাইরে মানুষের উপচেপড়া ভীড় ও উল্লাস লক্ষ্য করা গেলেও কেন্দ্রে ছিলো নিñিদ্র নিরাপত্তা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভোটারদের বাইরে আর কাউকে অহেতুক কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেননি। এমনকি অনেক কেন্দ্রে কোনো প্রার্থীর প্রতীক সংবলিত ব্যাজ, ফ্যাটা, টুপি নিয়ে কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে চাইলেও তাদেরকে তা খুলে যেতে হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে কোনো জটলা দেখা দিলেই পুলিশ তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

এদিকে, বাঘারপাড়ার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের পশ্চিম বলরামপুর সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রে রনি ও জিয়াউর রহমান নামে দুই যুবককে চাকু নিয়ে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশের সময় আটক করেছে পুলিশ। সকাল ১০টার দিকে দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থী শামছুর রহমানের সমর্থকদের হামলায় অপর মেম্বার প্রার্থী আশরাফুল ইসলামের চার সমর্থক আহত হন।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শার্শা উপজেলার ডিহি ইউনিয়নের শালকোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেম্বার প্রার্থী তরিকুল ইসলাম তোতা ও অপর মেম্বার প্রার্থী শহীদ ইসলামের সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। এতে চারজন আহত হন। দুপুর ১২টার দিকে নিজামপুর গ্রামে চেয়ারম্যান প্রার্থী আনারস প্রতীকের আশরাফুল আলম বাটুলের সমর্থকদের ছুরিকাঘাতে অপর প্রার্থী চশমা প্রতীকের সেলিম রেজা বিপুলের দু’সমর্থক আহত হন।

মণিরামপুর উপজেলার চালুয়াহাটি ইউনিয়নের সয়লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকালে ভোট দেয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে সাইফুল ইসলাম ও জিহাদ হোসেন নামে দুই যুবক প্রতিপক্ষের অস্ত্রের আঘাতে জখম হয়েছেন। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

More News...

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

বিড়ি শিল্পে ট্যাক্স প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে রংপুর শ্রমিকদের মানববন্ধন