পুঁজিবাজারে বড় পতনের কারণ ব্যাংক

পুঁজিবাজারে বড় পতনের কারণ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক : হিসাব বছর শেষ হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসায় সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক বেড়েছে। এখন প্রতিদিনের লেনদেনের বড় অংশই আসছে এ খাতের শেয়ার কেনাবেচা থেকে। তবে পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাংক শেয়ারের প্রতি অতিমাত্রায় ঝোঁক সূচকের পতন ত্বরান্বিত করছে। ব্যাংকের শেয়ার কিনতে গিয়ে অন্য শেয়ার বিক্রি করছেন বিনিয়োগকারীরা। ফলে উৎপাদনমুখী খাতগুলোর অধিকাংশ শেয়ারে বিক্রিচাপ বাড়ায় সূচকে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আবার কয়েক দিন বাড়ার পর গতকাল ব্যাংকের শেয়ার থেকে মুনাফা তুলে নেওয়ায়ও সূচকের পতন হয়েছে।

গতকাল দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কেনাবেচা হওয়া ৬০ শতাংশ শেয়ারের দরপতনে প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৬৩ পয়েন্ট। সূচকের এ বড় পতনেও ব্যাংক শেয়ারের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে বেশি। গতকাল ডিএসইতে কেনাবেচা হওয়া ৩২ ব্যাংকের মধ্যে ওয়ান ব্যাংক, ট্রাস্ট ও এসআইবিএল ছাড়া অপর ২৯ ব্যাংকের দর কমেছে। এতে করে পুরো খাতের বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৩ শতাংশ। ডিএসইর সবচেয়ে বড় বাজার মূলধনী খাত ও ফ্রি-ফ্লোট বেশি হওয়ায় সূচকের ওঠানামায় সবচেয়ে বেশি প্রভাব রাখে ব্যাংক খাত।

ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বীমার হিসাব বছর শেষ হয় ডিসেম্বরে। হিসাব বছর শেষ হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসায় ও ব্যাংক-বীমার মুনাফা বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ গত এক সপ্তাহ ধরে বিনিয়োগ কৌশল পরিবর্তন করে এসব খাতে বিনিয়োগ করছেন। তবে বীমার শেয়ার দর অতিমূল্যায়িত হওয়ায় ব্যাংক শেয়ারের প্রতি তাদের ঝোঁক বেড়েছে। বাজার সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, শেয়ার দরের নিম্নমুখী অবস্থান ও সর্বনিম্ন পিই রেশিওর কারণেও সাম্প্রতিক সময়ে কারসাজিকারকদের একটি অংশ বিভিন্ন ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগ করছে। এর বাইরে ব্যাংকগুলোর সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠান ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোও এই খাতে বিনিয়োগ করছে। এ তথ্য সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ায় তারাও ব্যাংকে ঝোঁক বাড়িয়েছেন। ফলে গত ১১ নভেম্বর থেকে নিয়মিতভাবে খাতটির বিভিন্ন ব্যাংকের শেয়ারের দর বাড়ছে। এ সময় অন্য শেয়ারে বিনিয়োগ তুলে নিয়ে ব্যাংকে বিনিয়োগ করায় উৎপাদনমুখী খাতগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়। তবে গতকাল মুনাফা তুলে নেওয়ায় ব্যাংক খাতটিতে সংশোধন হয়েছে। আর উৎপাদনমুখী খাতগুলো পূর্বের ধারাবাহিকতায় পর্যাপ্ত ক্রেতার অভাবে গতকালও অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার দর হারায়।

অবশ্য দর সংশোধনের পরও গতকাল ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। ডিএসইর মোট লেনদেনের ৪৫ শতাংশই এসেছে এ খাতটি থেকে। যদিও আগের দিনের চেয়ে খাতটিতে কেনাবেচা ৩৩ শতাংশ কমেছে। তবে শুধু ব্যাংক নয়, বীমা ও ট্যানারি ছাড়া অন্যসব খাতের লেনদেনই কমেছে। সূচক পতনের দিনে গতকাল ডিএসইতে কেনাবেচা হয়েছে ১ হাজার ২২৬ কোটি টাকার শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ড, যা আগের দিনের চেয়ে ৩১ শতাংশ কম।

একক কোম্পানি হিসেবে গতকাল লেনদেনের শীর্ষে ছিল ওয়ান ব্যাংক। এ ব্যাংকটিতে গতকাল কেনাবেচা হয়েছে ১৪২ কোটি টাকা। লেনদেনের পরবর্তী অবস্থানে ছিল আইএফআইসি, এনআরবিসি ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। এর বাইরে ফরচুন সুজ, প্রাইম টেক্সটাইল, ওরিয়ন ফার্মা ও ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে।

খাতওয়ারি পর্যালোচনায় দেখা যায়, গতকাল ব্যাংক ছাড়াও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত দর হারিয়েছে। এ খাতের ২৩ কোম্পানির মধ্যে ১৯টির দরই কমেছে। তিনটি ছিল অপরিবর্তিত। ব্যাংকের বাইরে সবচেয়ে বেশি বাজার মূলধন হারিয়েছে সিমেন্ট খাত। এ খাতের বড় মূলধনী কোম্পানি লাফার্জহোলসিমসহ আরও ৫ কোম্পানির দরপতনে সিমেন্ট খাতের বাজার মূলধন কমেছে প্রায় আড়াই শতাংশ। এছাড়া ফার্মাসিউটিক্যালস, খাদ্য ও অনুষঙ্গ এবং প্রকৌশল খাতের পতন সূচক কমাতে ভূমিকা রেখেছে। একক কোম্পানি হিসেবে সূচক কমাতে সবচেয়ে বেশি প্রভাব রেখেছে বিএটি বাংলাদেশ, আইএফআইসি ব্যাংক, লাফার্জহোলসিম, সিটি ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক। এসব কোম্পানি সম্মিলিতভাবে ডিএসইর প্রধান সূচক কমিয়েছে ৩৪ পয়েন্ট।

গতকালের দরপতনের দিনে বাজার মূলধন কিছুটা বাড়াতে পেরেছে ভ্রমণ ও অবকাশ, সেবা ও নির্মাণ, বিবিধ, জ¦ালানি, বস্ত্র, সিরামিক ও টেলিযোগাযোগ খাত।

More News...

৮ দিনে প্রবাসী আয় ৫৬২৪ কোটি টাকা

আগামী বাজেট হবে বেসরকারি খাতের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক : অর্থমন্ত্রী