কমিশন করে জিয়ার মরণোত্তর বিচার দাবি মুক্তিযোদ্ধা সৈনিদের স্বজনদের

কমিশন করে জিয়ার মরণোত্তর বিচার দাবি মুক্তিযোদ্ধা সৈনিদের স্বজনদের

নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদ্রোহ দমনের নামে ১৯৭৭ সালে সেনা ও বিমানবাহিনীতে কর্মরত মুক্তিযোদ্ধাদের ফাঁসি, কারাদণ্ড, গুম ও চাকরিচ্যুতির ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন তারা।

রবিবার দুপুরে ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভা থেকে এই দাবি জানানো হয়।

হারানো প্রিয়জনের ছবি সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে এ সভায় যোগ দিয়ে নিহতদের স্বজনরা। নিজেদের দুঃখ-কষ্টের কথা তুলে ধরেন। পরে শহীদ মিনার থেকে ক্যান্টমেন্ট অভিমুখে পদযাত্রায় অংশ নেন তারা।

কর্নেল নাজমুল হুদার মেয়ে নাহিদ এজাহার খান বলেন, “আমরা সেই সকল সন্তান, যাদের কাছে বাবা বলতে রক্তাক্ত স্মৃতি। আমরা সেই সকল সন্তান, যাদের বেঁচে থাকার জন্য সমাজে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হয়েছে। স্কুলে গেলে বলা হত, আমরা নাকি বিদেশি দালালের সন্তান।”

তিনি বলেন, “আমরা আসলে বড় হয়েছি অন্ধকার যুগে। মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে তখন ৭ নভেম্বর পালন করা হত ছুটির দিন। আমরা সেই হতভাগা, যারা বাবা হত্যার বিচারের জন্য আজও লড়ছি, অনেকে বাবার কবরটাও খুঁজে পাইনি।”

নাহিদ এজাহার বলেন, “আমি জেনারেল জিয়ার অবৈধ শাসনামলের সকল হত্যাকাণ্ড তদন্তে একটি কমিশন গঠনের দাবি করছি, যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে জিয়ার ষড়যন্ত্রের রাজনীতির মুখোশ উন্মোচন হয়।”

অনুষ্ঠানে জিয়ার মরণোত্তর বিচারের দাবি জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম বলেন, “এই জিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনি, জেলহত্যার খুনি। এয়ার ফোর্সের ক্যুসহ ১৯টি ক্যুর নায়ক হল জিয়াউর রহমান। তার মরণোত্তরের বিচারের দাবি দীর্ঘদিনের। শুধু জিয়া নয়, এর সঙ্গে যারাই জড়িত ছিল, জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তাদের বিচার হবেই।

তিনি বলেন,“একটা নিরপেক্ষ কমিশন হলে সব বেরিয়ে আসবে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যেহেতু করতে পারছে, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে, এটাও হবে।”

অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, “পৃথিবীতে দুইশ বছরের আগের অন্যায়েরও বিচার হয়েছে। কলম্বাস আমেরিকাতে গিয়ে আদিবাসীদের যে হত্যা করেছে, সেটা যখন প্রকাশ হয়েছে কলম্বাসের মূর্তি সরিয়ে সেখানে এক আদিবাসী নারীর মূর্তি বসানো হয়েছিল। কাজেই বিচার হয়, বিচার হবে।”

স্বাধীন দেশে জিয়াউর রহমানের আমলে ‘গুম-খুনের’ কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “গুম করার মতো নিষ্ঠুরতা আর কিছু হতে পারে না। কারণ কেউ জানতেও পারে না যে, এই মানুষটা কোথায় আছে, কখন ফিরে আসবে সেই আশায় থাকে স্বজনরা। এখনও যদি কোনো গুম হয়, আমি তার বিচার চাই। বাংলাদেশকে কেউ যাতে বলতে না পারে এখানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলছে। অনেক কষ্ট করে এই স্বাধীনতা এসেছে। এদেশের মানুষ যত মূল্য দিয়ে স্বাধীনতা কিনেছে, পৃথিবীর কোনো দেশ এত মূল্য দিয়ে স্বাধীনতা কেনে নাই। এই স্বাধীনতার অবমাননা করা যাবে না।”

সাবেক সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারুন-অর-রশিদ বলেন, “পঁচাত্তরের পর যে সরকার এসেছিল, সেটা ছিল অবৈধ সরকার। তখন দেশে কোনো সংবিধান বা আইন ছিল না। জিয়া যা হুকুম করেছে, তাই ছিল আইন। আসামিকে ফাঁসি দেওয়ার পর ফাঁসির রায় দিয়েছে। হত্যার পর লাশ কী হবে, সেটাও বলে দিয়েছে। কত মানুষ হত্যা করেছে, তার হিসাব নাই । সেই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত সংখ্যা ও রহস্য উদঘাটন করতে হবে।”

অন্যদের মধ্যে আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক, মাহাবুব উদ্দীন আহমদ বীরবিক্রম, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস এবং ১৯৭৭ সালে নিহত বেশ কয়েকজন সেনা ও বিমানবাহিনী সদস্যদের সন্তান অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

More News...

বিড়ি শিল্প নিয়ে ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে জাতীয় প্রেসক্লাবে শ্রমিকদের সংবাদ সম্মেলন

তুরস্কে যেখানে হাত দিয়েছি মৃত-জীবিত উদ্ধার করেছি