মায়ের স্বপ্ন পূরণেই এত দূর!

মায়ের স্বপ্ন পূরণেই এত দূর!

বিনোদন প্রতিবেদক : ৩২ বছর আগে একটি শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপনচিত্রের মাধ্যমে মডেলিংয়ে অভিষেক হয় সাদিয়া ইসলাম মৌর। তখন তিনি সপ্তম-অষ্টম শ্রেণিতে পড়েন। আর নাচের মঞ্চে অভিষেক মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে। পরবর্তী সময়ে নাচই হয়ে যায় মৌর ধ্যানজ্ঞান। এত বছর পর এখনো সমান জনপ্রিয় মৌ। একসময় প্রায় সব মডেলের আইডল বা আদর্শ হয়ে ওঠেন মৌ। সময়ের পরিক্রমায় ১৯৯৫ সালের ৩ জুলাই ‘অভিমানে অনুভবে’ নাটকের মাধ্যমে অভিনয়েও যাত্রা শুরু হয় তাঁর। মৌয়ের এত্ত গুণ! কিন্তু হাতে গোনা সংবাদ। অল্পস্বল্প ব্যস্ততা।

নাচটা নিয়মিতই করা হয়। এই সপ্তাহে কবিরুল ইসলাম রতনের কোরিওগ্রাফিতে বিটিভির একটা অনুষ্ঠানের জন্য নেচেছেন। অনুষ্ঠানটা নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিতও মৌ। ‘প্রথমত, রতন ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় ছোটবেলা থেকে। তাঁর সঙ্গে কাজ করার অনুভূতিও তাই সব সময় আনন্দের। এবারের অনুষ্ঠানটি পূজার বিশেষ কোনো এক অনুষ্ঠানের জন্য। বেশ সুন্দর অ্যারেঞ্জমেন্ট ছিল। অনুষ্ঠানের প্রযোজক এল রুমা। উনি আমাকে পার্সোনালি ফোন করে অনুষ্ঠানটার জন্য বলেছেন। বেশ যত্ন নিয়েই অনুষ্ঠান বানিয়েছেন। আর বিটিভি আমাদের খুবই পছন্দের একটা জায়গা। ওখানেই তো বড় হয়েছি। বিটিভি যখন ডাকে, সেটাই প্রয়োরিটি পায় সব সময়। শুধু আমার ক্ষেত্রে নয়, আমার ধারণা সব শিল্পীর বেলায়ও তা-ই।’

লকডাউনে তো নাচের শিল্পীদের কাজ খুবই কমে এসেছে। বলতে গেলে কাজই হচ্ছে না। কারণ নৃত্যশিল্পীদের কাজটাই তো স্টেজভিত্তিক। প্রণোদনা বা সাহায্য পাওয়া হয়েছে অসচ্ছল নৃত্যশিল্পীদের? মৌ বলেন,‘আমাদের নাচের সংস্থা আছে। সেখানে সরকার থেকে অনেক কিছুই পাওয়া গেছে। ছোট বাচ্চাদের সরকার প্রচুর সাহায্য করেছে। খামোখা এই দাবি ওই দাবি করে লাভ নেই। প্রথম থেকেই শিল্পীদের সাহায্য করেছে সরকার। সবটা তো সরকারের পক্ষ থেকে করা সম্ভব নয়। তবে যতটুকু করেছে, আমরা সন্তুষ্ট। চেষ্টা যে ছিল তাতেই আমি খুশি।’

‘সিক্স’ নামের একটি সিরিজের মধ্য দিয়ে প্রথমবার ওয়েবে অভিনয় করছেন মৌ। প্রোডাকশন হাউস রেড প্যাড স্টুডিওর ব্যানারে তৈরি হয়েছে ওয়েব সিরিজটি। তানিম পারভেজের পরিচালনায় এই ওয়েব সিরিজে আরও অভিনয় করছেন তারিক আনাম খান, ফাহমি, অপর্ণা ঘোষ, সোহেল মণ্ডল, ইয়াশ রোহান ও অশোক ব্যাপারী। সিরিজটি প্রচারিত হবে এলবিসি ওটিটি প্ল্যাটফর্মে।

মাসখানেক আগে ওয়েব সিরিজটির ডাবিং কমপ্লিট হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে একদমই কাজ করিনি। দু-একটা কাজ করতে হয়েছে। সেপনিল-এর একটা বিজ্ঞাপন করেছি। সেটা এখন প্রচার হচ্ছে।’

কাজের ব্যস্ততা নিয়ে কথা উঠলে মৌ বলেন, ‘আমি কখনোই কিন্তু খুব ব্যস্ত ছিলাম না। যখন টেলিভিশন খুললেই মৌয়ের বিজ্ঞাপন দেখা যেত, তখনো কিন্তু আমি খুব ব্যস্ত ছিলাম না। হয়তো আমার বিজ্ঞাপনটাই বারবার দেখানো হতো বলে মনে হতো আমি অনেক কাজ করছি। আমি হোমলি একজন মানুষ। নাচ নিয়েই তুলনামূলক বেশি ব্যস্ততা ছিল আমার। নাচের শিল্পীদের ব্যস্ততা কিন্তু সারা দিন থাকে না। দিনে একবার রিহার্সেল কিংবা অনুষ্ঠান থাকলে অনুষ্ঠানে সময় দেওয়া, ব্যস। বাকি সময়টা পরিবারের জন্য বা নিজের জন্য ব্যয় করা যায়। তাই নাটকের চেয়ে নাচে সময় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি আমি।’

অনেকেই মডেলিংয়ে মৌকে আইডল ভাবেন। নতুন যাঁরা মডেলিং করতে চান, তাদের জন্য কী পরামর্শ হতে পারে? মৌ বলেন, ‘এখনকার ছেলেমেয়েরা যে আমাকে চেনে, আমাকে আইডল মনে করে, এই বিষয়টাই আমাকে ভীষণ আবেগাপ্লূত করে। মনে হয়, আমি হয়তো কিছু করতে পেরেছি। একটা কথাই বলব, সবকিছু করতে হবে না। যে যেটাই করতে চাও, মন দিয়ে করো। সৎ থাকো। লেগে থাকলে সফলতা আসবে। সেটা অল্প দিনে হোক কিংবা বেশি দিনে। আমি কখনোই কিছু হতে চাইনি। আমার মা চেয়েছিলেন আমি মডেল হই কিংবা অভিনেত্রী। স্বপ্নটা আমার মা (নাউজিয়া ইসলাম রাশা) দেখেছেন। সৃষ্টিকর্তা আমার মায়ের কথাটাই শুনেছেন। মায়ের স্বপ্ন পূরণেই আমার এতটা পথচলা। সে জন্যই হয়তো আমি এত ভালোবাসা পেয়েছি।’

মৌয়ের মা নাউজিয়া ইসলাম রাশা গত বছর মারা গিয়েছেন। মৃত্যকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। নাউজিয়া ইসলাম রাশা ছিলেন বাংলাদেশের ‘স্টিল অ্যাড মডেলিংয়ের’ পথিকৃৎ এবং বাংলাদেশের প্রথম মডেল ও নৃত্যশিল্পী। ‘রাশা ইসলাম’ নামেই সর্বমহলে পরিচিত ছিলেন তিনি। রাশা ইসলামের পিতা আজফার হাসান মাহমুদ ছিলেন শান্তিনিকেতনের শিক্ষার্থী এবং রবীন্দ্রনাথের ছাত্র।

More News...

‘সোনার চর’ হাউসফুল, উচ্ছ্বসিত জায়েদ খান

‘রাজকুমার’র দর্শক সাড়ায় আমি অভিভূত : আরশাদ আদনান