বাড়তি টাকা ছাড়া পাটুরিয়ায় মিলছে না ফেরি পারাপরের টিকিট

বাড়তি টাকা ছাড়া পাটুরিয়ায় মিলছে না ফেরি পারাপরের টিকিট

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি : পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে বাড়তি টাকা না দিলে ফেরির টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। বিআইডব্লিউটিসির টিকিট কাউন্টারে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও দালালরা প্রতি যানবাহন থেকে ৫০০-১৫০০ টাকা বাড়তি আদায় করছেন বলে অভিযোগ।

সোমবার সরেজমিনে সারাদিন পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, কোনো যানবাহনই বাড়তি টাকা ছাড়া টিকিট কাটতে পারেনি। টাকা না দিলে ৬-৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও টিকিট মেলে না। বাধ্য হয়ে ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস, ছোট যানবাহন, ব্যক্তিগত যানবাহনের চালক বাড়তি টাকা দিয়ে টিকিট কেনেন।

দুপুর ১২টার দিকে পাটুরিয়া প্রান্তের ট্রাকের টিকিট কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, টিকিট বিক্রি বন্ধ রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। কাউন্টারের সামনে তখন ২০০- ২৫০ ট্রাকচালক ও সহযোগীরা টিকিটের জন্য চেঁচামেচি করছেন।

আলাল নামে ট্রাকচালক বলেন, সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখে। আমি শনিবার রাত ২টার দিকে ঘাটে আসছি। সকাল ৯টায় ট্রাকের ওজন মাপিয়েছি। আমি টিকিট পাচ্ছি না। অথচ দালালদের মাধ্যমে ১৫০০ টাকা দিলেই ফেরির টিকিট মিলছে।

যশোরগামী আরেক ট্রাকচালক বলেন, ‘আমার ট্রাকের টিকিটের দাম ১০৬০ টাকা, ১৮০০ টাকা দিচ্ছি, তারপরও টিকিট দিচ্ছে না। ২ হাজার টাকা চাইতেছে। বাড়তি টাকা আমি কই পাব! গাড়ির মহাজন তো আমাকে ১৮০০ টাকাই দিছে’।

আবুল কালাম যাবেন ফরিদপুর, তিনি বলেন, ‘১৫ ঘণ্টা হয় ঘাটে আসছি। ফেরির টিকেট পাচ্ছি না। আবার ফেরিতে উঠব কখন! ১৪৬০ টাকার টিকেটের দাম। ২ হাজার টাকা দিচ্ছি তাও টিকেট দিচ্ছে না। অথচ ৩০ মিনিট আগে ওজন মাপিয়ে বড় ট্রাকের জন্য ২৫০০ টাকা দিল, কাউন্টার থেকে টিকেট দিয়ে দিল’।

সিরাজ হোসেন নামে আরেক ট্রাকচালক অভিযোগ করে বলেন, ‘সোমবার বিকাল ৫টা বাজে, ঘাটে এখন কোনো বাস নেই। শুধু ট্রাক আছে। ১৭টা ফেরি চলতেছে, ঠিকমতো আমাদের টানলে দ্রুত টার্মিনাল খালি হয়ে যাবে। কিন্তু বিআইডব্লিউটিসি সিন্ডিকেট করে, টিকিটে বাড়তি টাকা নিচ্ছে। পরিবহন থাকলে কিছু ট্রাক পার করে, কিন্তু বাস না থাকলে, ফেরি ধোয়ামোছা করে, ধীরে ফেরি চালিয়ে সময় নষ্ট করে। এতে টার্মিনালে যানজট তৈরি হয়, তাদের বাড়তি টাকা আদায় হয়’।

খুলনাগামী যাত্রীবাহী বাসচালক রফিক বলেন, ‘বাড়তি ৫০০- ৬০০ টাকা না দিলে টিকিট দেয় না। বাড়তি টাকা না দিলে ঝামেলা করে। তাই ৫০০ টাকা অতিরিক্ত টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছি’।

সোমবার দুপুর ১টার দিকে পাটুরিয়া টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, দুই টার্মিনাল ও সড়ক মিলে ৬ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক ও শতাধিক যাত্রীবাহী বাস ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় আছে। ব্যক্তিগত যানবাহন তখন চলছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে যানবাহনের সংখ্যা। আবার তা বিকেল থেকে কমতে থাকে।

সন্ধ্যা ৬টার দিকে দেখা যায় যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত যানবাহন ঘাটে আসামাত্র ফেরিতে উঠতে পারছে। কিন্তু তখনো পাটুরিয়া প্রান্তে আড়াই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় আছে।

বিআইডব্লিউটিসির পাটুরিয়া ঘাটের টিকিট কাউন্টার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহআলম বলেন, গত শনিবার (২৮ আগস্ট) পাটুরিয়া থেকে দৌলতদিয়া প্রান্তে ছেড়ে গেছে ৫৫০টি যাত্রীবাহী বাস, ৮৫০ পণবাহী ট্রাক, ছোট যানবাহন ১৭৫০, মোটরসাইকেল গেছে ১৫০টি। রবিবার (২৯ আগস্ট) যাত্রীবাহী বাস পার হয়েছে ৬০৫টি, ১ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক, ছোট যানবাহন ১৮৫০ এবং মোটরসাইকেল ৯৫টি। দু’দিনে মোট ৬৮৫০টি যানবাহন পার হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সরকার নির্ধারিত টিকিট মূল্য হচ্ছে, বাস ৯০০- ১৯৩০ টাকা, ট্রাক ১০৬০ থেকে ১১৪৬০ এবং ছোট গাড়ি ৭০০- ৮০০ টাকা।

গেল দুই দিনে ৬ হাজার ৮ শত ৫০ টি যানবাহন পাটুরিয়া – দৌলতদিয়া নৌরুটে পারা পার হয়েছে। এ হিসেবে গড়ে ৬০০ টাকা বেশি নিলেও টাকার পরিমাণ হয় ৪১ লাখ ১০ হাজার টাকা। তা ছাড়া বিভিন্ন উৎসব, সরকারি বন্ধের দিন যানবাহনের সংখ্যা আরো বেড়ে যায়।

তবে বাড়তি টাকা আদায় বিষয়ে টিকিট কাউন্টারে থাকা শাহআলম কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ট্রাকের বাড়তি ওজন হলে, প্রতি টন প্রতি ১২০ টাকা করে নেওয়া হয়।

যেসব ট্রাকের বাড়তি ওজন নেই, সেই ট্রাকের টিকিটেও ৫০০-১০০০ হাজার টাকা ছাড়া টিকিট দেয় না এমন ভিডিও রেকর্ড আছে দাবি করলে ওই কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে আমার কোনো তথ্য জানা নাই।

More News...

বিড়ির শুল্ক প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে পাবনায় মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে পাওয়া গেল পৌনে ৮ কোটি টাকা