নিজস্ব প্রতিবেদক : রাজধানীর শের ই বাংলা নগরের চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ‘হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার বিএনপির উদ্যোগে ‘২১ আগস্টের চক্রান্তমূলক গ্রেনেড হামলা’ শীর্ষক ‘ইতিহাস কথা কয়’ ব্যানারে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ যে নেই, তা খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নেতারাও ভালো করে জানেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিএনপি মহাসচিব তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘নিশিরাতের ভোটের মাধ্যমে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুক্তিযুদ্ধ ও জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে যে কথা বলেছেন তা হাস্যকর’।
ফখরুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে, এরা কতটা প্রতিহিংসা পরায়ণ যে তারা যিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন তার ন্যূনতম যে স্বীকৃতি সেই স্বীকৃতি দিতেও তারা নারাজ। আজকে এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য, দিবালোকের মতো সত্য যে, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান তিনি রণাঙ্গনের থেকেই যুদ্ধ করেছেন, রণাঙ্গনে থেকেই যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। এটা দিবালোকের মতো সত্য যে আজকে তিনি (জিয়াউর রহমান) যেদিন শাহাদাত বরণ করে সেদিন এ দেশের লাখ লাখ মানুষ তার জন্য কেঁদেছিল এবং মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে লাখ লাখ মানুষের তার জানাজায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তিনি যে কত জনপ্রিয় নেতা ছিলেন সেটা প্রমাণিত হয়েছে।’
২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘২১ আগস্ট একটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের প্রথম সোপান ছিল। প্রকৃতপক্ষে ২১ আগস্ট একটি সুদূরপ্রসারী চক্রান্ত বাংলাদেশকে আবার গণতন্ত্রহীন করার জন্য, বাংলাদেশের মানুষের স্বপ্নগুলোকে ভেঙে চুরমার করে দেওয়ার জন্য, বাংলাদেশ যে একটি সত্যিকার অর্থে সুখী-সমৃদ্ধ রাষ্ট্র নির্মিত হবে সেই স্বপ্নকে পুরোপুরি ভেঙে দেওয়ার জন্য ২১ আগস্ট। একুশে আগস্ট এবং ১/১১ সে জন্য কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ওয়ান-ইলেভেনের জন্য একুশে আগস্ট ছিল একটা প্রাথমিক চক্রান্ত।’
তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের শপথ নিতে হবে, আজকে ২১ আগস্টের ঘটনাই বলুন, ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলার, অসংখ্য যে হত্যা হচ্ছে, খুন হচ্ছে, গুম হচ্ছে- এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আজকে জনগণের ইস্পাত কঠিন ঐক্য দরকার। এর নেতৃত্ব দেবেন আমরা বিশ্বাস করি আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দেশে সেই গণঐক্য গড়ে উঠবে, জনতার ঐক্য গড়ে উঠবে, সেই ঐক্যের মধ্য আমরা বাধ্য করব এই ফ্যাসিস্ট, গণবিরোধী যে সরকার রয়েছে তাদের পদত্যাগ করিয়ে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার করা। এ লক্ষ্যে আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ভার্চুয়াল সভায় দেওয়া বক্তব্যে বক্তারা যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন এটাতে প্রমাণিত হয়েছে যে, ২১ আগস্ট ছিল সম্পূর্ণভাবে একটা সাজানো নাটক এবং সাজানো নাটকের ফলেই আওয়ামী লীগ আজকে ক্ষমতায় বসে আছে। সে জন্য আমরা খুব পরিষ্কার করে বলতে পারি-ওই ঘটনার বেনিফিশিয়ারি হচ্ছে আওয়ামী লীগ। সে কারণে আজকে তারা এটাকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে চায়।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘২১ আগস্টের ঘটনাটি ছিল একটা চক্রান্ত। এটা কোনোক্রমে এ ধরনের ঘটনা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল, কখনো এটাকে সমর্থন করতে পারে না।’
বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরীর পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান প্রমুখ।
