দেড় কিলোমিটার হেঁটে চাচাকে মাথায় করে হাসপাতালে নিলেন ভাতিজা

দেড় কিলোমিটার হেঁটে চাচাকে মাথায় করে হাসপাতালে নিলেন ভাতিজা

মুরাদনগর প্রতিনিধি : বয়স ৭৫ বছর। এই বয়সে আব্দুল জলিলের শরীরে বেধেঁছে নানা রোগের বাসা। এর মধ্যে আজ বুধবার নতুন করে শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় ভাতিজা জয়নাল আবেদীনের মাথায় করে যাচ্ছেন ডাক্তার দেখাতে। রাস্তার বেহাল দশা হওয়ায় গাড়ির পরিবর্তে ভাতিজার দুই পা’ই এখন তার ভরসা। বাড়ি থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে গিয়ে ফার্মেসীতে নেবুলাইজার দিলে তবেই কিছুটা আরাম লাগে আব্দুল জলিলের।

রাস্তাটি শুধু আব্দুল জলিলের কাছেই নয়, ৪ গ্রামের প্রায় ৯ হাজার মানুষের ঘারের উপর বিষফোঁড়া। ৪ কিলোমিটার ভোগান্তির এ রাস্তাটি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ধামঘর ইউনিয়নের পরমতলা গ্রামের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বুধবার সকাল ১০টায় আব্দুল জলিলের শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে ভাতিজা জয়নাল আবেদীন চাচাকে মাথায় করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন। আগে যে রাস্তাটি দিয়ে হরহামেশাই ৩ চাকার গাড়ি চলতো সেখানে এখন বড় বড় গর্ত হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ। পরমতলা পশ্চিমপাড়া হাজী বাড়ি থেকে লক্ষীপুর চরখখোলা হয়ে দারোরা বাজার পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার রাস্তাটি ৪ গ্রামের প্রায় ৯ হাজার মানুষের আসা-যাওয়ার পথ। বর্তমানে রাস্তাটির বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় গর্ত হওয়ায় পায়ে হেঁটে যেতেও দুর্ভোগে পড়তে হয় স্থানীয়দের। বৃদ্ধ ও গর্ভবতী মায়েদের চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বাড়তি বিড়ম্বনায় পড়েন পরিবারের লোকজন।

মুগসাইর গ্রামের আব্দুস ছালাম মাস্টার বলেন, গর্ভবতী মায়েদের এবং বয়স্ক কেউ অসুস্থ্য হয়ে পড়লে পরিবারের অন্য সদস্যদের ঘুম হারাম হয়ে যায়। কারণ মসজিদের খাটিয়ায় করে এই দুর্ভোগের রাস্তা পাড়ি দিতে হয়। যাদের পরিবারে সদস্য সংখ্যা কম, তাদের আরও বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। কারণ লোক ভাড়া করে চিকিৎসার জন্য স্বজনদের হাসপাতালে নিতে হয়।

জানতে চাইলে পরমতলা গ্রামের অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, ‘৪ কিলোমিটার এই রাস্তাটি দিয়ে পরমতলা, লক্ষীপুর, মুগসাইর ও দারোরা গ্রামের কয়েকশ’ শিক্ষার্থীসহ প্রায় ৯ হাজার লোক দুর্ভোগ সহ্য করে আসা-যাওয়া করে। রাস্তাটি পাকা করা হলে শিক্ষার্থীসহ সর্ব সাধারণের বহুদিনের ভোগান্তি লাগব হবে। আমরা হাজার হাজার টাকা খরচ করে একাধিকবার মেরামত করলেও সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাটি আবার আগের মতো হয়ে যায়।’

লক্ষীপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মজিদ, পরমতলা গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী ও খোরশেদ আলম বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই এ রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, মানুষকে হেঁটে যেতেও মারাত্বক অসুবিধায় পড়তে হয়।

এ ব্যাপারে মুকসাইর গ্রামের মাস্টার নূরে আলম সিদ্দিক বলেন, ‌’এ রাস্তাটি পাকা করার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ চেষ্টা করে যাচ্ছি। সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৯ জুলাই স্থানীয় সরকার বিভাগে নিজ উদ্যোগে আবেদনও করেছি। ‘

জানতে চাইলে মুরাদনগর এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির বলেন, সরেজমিনে গিয়ে দুর্ভোগের চিত্র প্রত্যক্ষ করেছি। এ রাস্তাটি বৃহত্তর কুমিল্লা উন্নয়ন প্রকল্পে অর্ন্তভূক্ত করা হয়েছে (আইডি নম্বর- ৪১৯৮১৫০৭৯)। রাস্তাটি দ্রুত বাস্তবায়ন করার কাজ এগিয়ে চলছে।

More News...

১৭৩ জন বাংলাদেশী মিয়ানমার কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন

কোন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল?