স্বাস্থ্য ডেস্ক : করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়ার পরেও এই ভাইরাস পিছু ছাড়ছে না অনেকেরই। কোভিড নেগেটিভ হবার পরেও অনেককে নানা সমস্যা নিয়ে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন সুস্থ হবার পরেও শরীরে থেকে যাওয়া নানান সমস্যাকে গুরুত্ব না দেওয়ায় ভুগছেন অনেকেই। কোভিড পরবর্তী এইসব সিনড্রোমই লং কোভিড হিসেবে পরিচিত।
ঢাকার বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের করোনা ইউনিটে দায়িত্ব পালন করা চিকিৎসক সাজ্জাদ হোসেন এক সাক্ষাৎকারে বিবিসিকে বলেছেন, পোস্ট কোভিড সিনড্রোমে অনেকেই আক্রান্ত হচ্ছেন এবং এর মধ্যে কারও কারও অবস্থা আরও জটিল হয়ে পড়ছে সময়মতো ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে। সাম্প্রতিক সময়ে করোনায় আক্রান্ত হবার পরে সুস্থ হওয়ার কিছুদিন পর আবার হাসপাতালে আসছেন অনেকে, এমনটাই বলছেন চিকিৎসক সাজ্জাদ হোসেন । তার মতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রায় দেড় বছর ধরে করোনা রোগীদের নিয়ে কাজ করা এই চিকিৎসক বলছেন করোনা থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিরা মূলত কয়েকটি সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এগুলো হলো :
১.কোভিড নিউমোনিয়া
২.হাইপারটেনশন
৩.ফাঙ্গাল ইনফেকশন
৪.ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন
৫.নিউরোজিক্যাল সমস্যা
৬.হৃদরোগ
৭.লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া
৮.কিডনিতে সংক্রমণ
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার কারণে অনেকের ফুসফুস ছোট হয়ে যায়, যথাযথ চিকিৎসা না হলে সুস্থ হওয়ার পরেও এর জটিলতা থেকে যায় বলে জানান ডা. সাজ্জাদ। আবার যারা ডায়াবেটিসে ভুগছেন তারাও যেমন নানা সমস্যায় পড়েন তেমনি হার্ট, লিভার ও কিডনি নিয়েও সুস্থ হওয়ার পরে অনেককে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে,কানাডাভিত্তিক চিকিৎসক এবং সেন্টার ফর রিসার্চ, ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাকশনের ডা. শাহরিয়ার রোজেন বিবিসিকে জানিয়েছেন বাংলাদেশে এবার বয়স্কদের মতো অনেক তরুণের মধ্যে সুস্থ হবার পর লং কোভিডের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে লং কোভিড বলতে ফুসফুস কেন্দ্রিক সমস্যাই বেশি হচ্ছে এবং অনেকের দীর্ঘদিন কাশি থাকছে।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য নির্দেশিকা অনুযায়ী কেউ যদি করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর- তা গুরুতর বা মৃদু যাই হোক না কেন ১২ সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও যদি রোগীর দেহে এমন অসুস্থতার লক্ষণ রয়ে যায়, যার কারণ হিসেবে অন্য কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে না, তাহলে ধরে নিতে হবে তার ‘লং কোভিড’ হয়েছে।
ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবার তথ্য অনুযায়ী লং কোভিডের লক্ষণগুলো হচ্ছে:
১. চরম ক্লান্তি বা অবসন্নতা।
২. শ্বাস নিতে কষ্ট বা হাঁপিয়ে ওঠা, হৃৎপিণ্ডের ঘন ঘন স্পন্দন বা বুক ধড়ফড় করা, বুকে ব্যথা বা টানটান ভাব।
৩. স্মৃতি শক্তি বা মনঃসংযোগের সমস্যা – যাকে বলা হয় ‘ব্রেন ফগ’ বা বোধশক্তি ঝাপসা হয়ে যাওয়া।
৪. স্বাদ ও গন্ধের অনুভূতিতে পরিবর্তন।
৫. হাড়ের জোড়ায় ব্যথা।
তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা প্রতিনিয়তই লং কোভিড থেকে মুক্ত থাকতে করণীয় বা প্রতিরোধ বিষয়ে নানা ধরণের পরামর্শ দিচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছে:
১.করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা গ্রহণ করা
২.ফুসফুসের ব্যায়াম করা
৩.পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ
৪.অক্সিজেনের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করে দরকার হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া।
বাংলাদেশে গত বছরের মার্চে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর শুরুর দিকে বিষয়টি ততটা নজরে না এলেও গত বছরের শেষ দিকে এসে এবং চলতি বছরের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ব্যাপক ছড়িয়ে পড়ার পর লং কোভিডে অনেককেই ভুগতে দেখা যাচ্ছে বলে চিকিৎসকরা বলছেন।
বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসেবে দেশে এখন পর্যন্ত কোভিড-১৯ শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এখন পর্যন্ত মোট ১২ লাখ ৯৬ হাজার ৯৩ জন। আর এ পর্যন্ত মোট মৃত্যু হয়েছে ২১ হাজার ৩৯৭ জনের।অন্যদিকে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১১ লাখ ২৫ হাজার ৪৫ জন। এই সুস্থ হওয়াদের অনেকেই আবার চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হচ্ছেন নানা জটিলতা নিয়ে।