কারা মর্যাদাবান মানুষ

কারা মর্যাদাবান মানুষ

মাওলানা ফখরুল ইসলাম
সমাজের একশ্রেণির মানুষের স্বাভাবিক প্রবণতা হচ্ছে, গরিব-মিসকিন ও অসহায়কে অবজ্ঞার চোখে দেখা। অথচ নবী মুহাম্মদ (সা.) এই শ্রেণির লোকদের ভালোবাসার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবু জার (রা.) বলেন, ‘আমার বন্ধু মুহাম্মদ (সা.) আমাকে সাত কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। ১. আমি যেন গরিব-মিসকিনকে ভালোবাসি ও তাদের নৈকট্য লাভ করি। ২. আমি যেন ওই ব্যক্তির দিকে তাকাই, যে আমার চেয়ে নিম্নস্তরের এবং ওই ব্যক্তির দিকে না তাকাই, যে আমার চেয়ে উচ্চপর্যায়ের। ৩. আমি যেন আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করি, যদিও তারা একে ছিন্ন করে। ৪. আমি যেন কারও কাছে কিছু যাচ্ঞা না করি। ৫. আমি যেন সর্বদা ন্যায় ও সত্য কথা বলি, যদিও তা তিক্ত হয়। ৬. আমি যেন আল্লাহর ব্যাপারে কোনো নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় না করি এবং ৭. তিনি আমাকে এই নির্দেশই দিয়েছেন যে, আমি যেন বেশির ভাগ সময় ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহ’ পাঠ করি। কেননা এই শব্দগুলো আরশের নিচের ভাণ্ডার থেকে আগত।’ সহিহ্ ইবনে হিব্বান : ৪৪৯

আল্লাহভীরু গরিব ও দুর্বল শ্রেণির লোকেরা সামাজিকভাবে হেয় হলেও মহান আল্লাহর কাছে মর্যাদাশীল। এ শ্রেণির মানুষের কারণে আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের রিজিক দিয়ে থাকেন। হজরত সাদ (রা.) নিজেকে নিম্নশ্রেণির লোকদের চেয়ে (নিজেকে) অধিক মর্যাদাশীল মনে করলে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দুর্বল লোকদের দোয়ায় তোমাদের সাহায্য করা হয় ও রিজিক দেওয়া হয়।’ সহিহ্ বোখারি : ৫২৩২

হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি কি তোমাদের জান্নাতিদের সম্পর্কে অবহিত করব না? (তারা হলো) প্রত্যেক দুর্বল ব্যক্তি এবং এমন ব্যক্তি, যাকে দুর্বল মনে করা হয়। সে যদি আল্লাহর নামে কসম করে, তাহলে তা তিনি পূর্ণ করে দেন। (তিনি আরও বলেন) আমি কি তোমাদের জাহান্নামিদের সম্পর্কে অবহিত করব না? (তারা হলো) প্রত্যেক রূঢ় স্বভাব, কঠিন হৃদয় ও দাম্ভিক ব্যক্তি।’ সহিহ্ বোখারি : ৫১০৬

অন্য হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমি জান্নাতে উঁকি মেরে দেখলাম যে এর বেশির ভাগ অধিবাসী হলো, গরিব-মিসকিন। আর জাহান্নামে দেখলাম, এর বেশির ভাগ নারী।’ সহিহ্ মুসলিম : ৫২৩৪

দুনিয়া বঞ্চিত গরিব-অসহায়রা ধনীদের আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ প্রসঙ্গে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘দরিদ্র মুহাজিররা তাদের ধনীদের চেয়ে ৫০০ বছর আগে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর তা হলো (আখিরাতের) অর্ধদিনের সমান।’ তিরমিজি : ২৩৫৩

গরিব ও অসহায় মুসলমানদের অবজ্ঞা-অবহেলা না করতে পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তুমি নিজেকে তাদেরই সংসর্গে রাখো, যারা সকাল ও সন্ধ্যায় তাদের রবকে তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আহ্বান করে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা কামনা করে তাদের দিক থেকে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিও না।’ সুরা কাহাফ : ২৮

মুমিনদের উচিত নিজ অবস্থানের চেয়ে উচ্চ স্তরের কোনো ব্যক্তি বা তার সম্পদের দিকে আক্ষেপের দৃষ্টিতে না তাকিয়ে বরং নিম্ন স্তরের মানুষের দিকে তাকিয়ে নিজের অবস্থার জন্য মহান আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ এমন ব্যক্তির দিকে দেখে, যাকে ধন-সম্পদে, স্বাস্থ্য-সামর্থ্যে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা হয়েছে, তখন সে যেন নিজের চেয়ে নিম্নমানের ব্যক্তির দিকে তাকায়।’ সহিহ্ বোখারি : ৫২৪২

মুমিনের করণীয় হচ্ছে অল্পে তুষ্ট থাকা। আল্লাহপ্রদত্ত হালাল জীবিকা যত অল্পই হোক না কেন, তাতে সন্তোষ থেকে শোকরিয়া আদায় করলে দুনিয়ার ধন-সম্পদের মোহ তাকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না। অল্পে তুষ্ট থাকা সম্পর্কে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি সুস্থ দেহে পরিবার-পরিজনসহ নিরাপদে সকালে উপনীত হয় এবং তার কাছে যদি সারা দিনের খোরাকি থাকে, তাহলে তার জন্য যেন গোটা দুনিয়া একত্রিত করা হলো।’ ইবনে মাজাহ : ৪১৪১

More News...

চাঁদ দেখা যায়নি, ব্রুনাই-মালয়েশিয়ায় রোজা শুরু মঙ্গলবার

শবে বরাত কবে, জানাল ইসলামিক ফাউন্ডেশন