৬ মাস সময় চায় ইভ্যালি

৬ মাস সময় চায় ইভ্যালি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার জবাব দিতে ৬ মাস সময় চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেল।

রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে তিনি এ সময় চেয়েছেন।

ইভ্যালির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার চিঠিতে বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তের ক্ষেত্রে সময় স্বল্পতার কারণে সব তথ্য সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। ফলে প্রতিষ্ঠানের প্রকৃত চিত্র ওই তদন্তে উঠে আসেনি।

এখন তিনি একটি নিরপেক্ষ নিরীক্ষকের মাধ্যমে কোম্পানির আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত ও ভ্যালুয়েশন করে উপস্থাপন করতে চান। এজন্য ৬ মাস সময় প্রয়োজন। ওই আর্থিক বিবরণীতে কোম্পানির মোট সম্পদ, দেনার পরিমানসহ যাবতীয় তথ্য থাকবে।

রাসেল জানান, এ সময়ের মধ্যে ইভ্যালি আগে প্রতিশ্রুতি দেওয়া পণ্যের সরবরাহ শেষ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবে এবং প্রতি ১৫ দিন অন্তর সরবরাহের অগ্রগতি সম্পর্কে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানাবে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে মোহাম্মদ রাসেল জানিয়েছেন, তাদের ৫ হাজার মার্চেন্ট রয়েছে। বিপুল সংখ্যক মার্চেন্টদের কাছে দেনা তথ্য দেওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কারণ প্রতিটি মার্চেন্টের অর্ডারের বিপরীতে সরবরাহ, গ্রাহক পেয়েছে কিনা, ত্রুটিপূর্ন পণ্য আছে কিনা এবং আগের বিলের সমন্বয় হয়েছে কিনা এসব হিসাব করা সময়সাপেক্ষ।

চিঠিতে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে তার কোম্পানি এক হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ চুক্তি করেছে। নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে ইভ্যালির যে ঘাটতি আছে, তা দূর হবে।

গত ১৯ জুলাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইভ্যালিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়। নোটিশের জবাব দেওয়ার শেষ সময় ছিল ১ আগষ্ট। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সুনির্দিষ্ট ৬টি বিষয় সম্পর্কে ব্যাখা চায় ওই নোটিশে।

ইভ্যালির বিরুদ্ধে ক্রেতার থেকে আগাম টাকা নিয়ে সময়মত পণ্য সরবরাহ না করা এবং মার্চেন্টদের পাওনা পরিশোধ না করার অভিযোগ ওঠে।

এ কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ইভ্যালিতে তদন্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদন্ত করে গত ১৬ জুন প্রতিবেদন জমা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে দেখা গেছে, গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত ক্রেতাদের থেকে ২১৪ কোটি এবং মার্চেন্টদের কাছে ১৯০ কোটি টাকা দায় রয়েছে। ওই সময়ে ইভ্যালির কাছে সম্পদ ছিল প্রায় ৯২ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬৫ কোটি টাকা চলতি মূলধন।

ক্রেতা ও মার্চেন্টদের বিপুল পরিমাণ টাকা তাহলে কোথায় গেল এ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।

প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক পরিস্থিতির এ চিত্র উঠে আসার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ক্রেতা ও মার্চেন্টদের সুরক্ষার কথা বিবেচনা করে ইভ্যালির কাছে গ্রাহকের বকেয়া পাওনার তথ্য এবং ভবিষ্যতে কীভাবে এসব দেনা পরিশোধ করা হবে তার পরিকল্পনা জানতে চায়।

একইসঙ্গে গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সুরক্ষা এবং ডিজিটাল কমার্স খাতের নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধের লক্ষ্য ইভ্যালির বিরুদ্ধে কেন আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়।

ইভ্যালিকে জবাব দিতে সময় দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে, ইভ্যালি বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন, গ্রাহকদের অভিযোগ, ইভ্যালির সময়ের আবেদনসহ সকল বিষয় পর্যালোচনা করে যে সুপারিশ করবে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ‘ইভ্যালি একটি আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন প্রতিষ্ঠান। তাদের যথেষ্ট জনবল আছে বলেও জানা গেছে। ফলে নিজেদের ব্যবসার তথ্য দিতে ছয় মাস কেন লাগবে তা পরিস্কার নয়। কারণ কত টাকা আগাম নেওয়া হচ্ছে, কত পণ্য কেনা হচ্ছে, কত সরবরাহ হচ্ছে, কত মজুদ আছে, এগুলো তাদের নিয়মিত হিসাবের অংশ।’

নিরীক্ষকের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ইভ্যালির তো প্রতি বছর শেষেই নিজস্ব অডিট রিপোর্ট থাকার কথা। এসব তথ্য তারা না দিয়ে সময় চাইছে কেন সেটা পর্যালোচনা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটি কোনো তথ্য গোপন করা বা সার্ভার থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে কিনা তা দেখতে হবে। দরকার হলে ইভ্যালির কর্তৃপক্ষকে ডাকা হবে।’

More News...

সল্টের ‘কালবৈশাখী ঝড়ে’ নববর্ষ বরণ কলকাতার

রোববার থেকে চালের বস্তায় তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক