বড়দের দখলে আটা-ময়দার বাজার

বড়দের দখলে আটা-ময়দার বাজার

অর্থনীতি ডেস্ক : দুই দশক আগেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের আটা-ময়দার চাহিদা মেটাত স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা মিলগুলো। কিন্তু গত দুই দশকে করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসা সম্প্রসারণের ফলে এ বাজারের নিয়ন্ত্রণ এখন তাদের হাতে চলে গেছে। বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে ৬০ শতাংশ ক্ষুদ্র ও মাঝারি মিল। যেগুলো টিকে আছে, সেগুলোর অবস্থাও ভালো নেই।

মিল মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, একসময় সারা দেশে পাঁচ শতাধিক আটা-ময়দা তৈরির মিল ছিল। এসব মিল মালিকেরা রাজধানী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন স্থানে আটা-ময়দা সরবরাহ করতেন। যখন থেকে এ খাতে বড় করপোরেটরা বিনিয়োগ শুরু করে, তখন থেকে ছোট মিল মালিকেরা ব্যবসা হারাতে থাকেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে সিটি, মেঘনা, টিকে, বসুন্ধরা, আকিজ, এস আলম, নূরহাজান, এসিআইসহ বিভিন্ন বড় শিল্প গ্রুপের আটা-ময়দার মিল রয়েছে। এসব মিল মালিকেরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিদেশ থেকে গম আমদানি করছেন। নিজস্ব মিলে তা ভেঙে নিজস্ব পরিবহনে বাজারজাত করছেন। বর্তমানে তাঁদের দখলে রয়েছে দেশের ৯০ শতাংশের বেশি বাজার। তাঁরা নিজস্ব ব্যান্ডে এক ও দুই কেজির প্যাকেট করে তা বাজারজাত করছেন। বাজারে প্রতিযোগিতা থাকায় অনেক সময়ই তাঁরা লোকসানেও আটা-ময়দা বিক্রি করছেন।

করপোরেটদের প্রভাবে কীভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মিলগুলো টিকে আছে, তা জানতে ঢাকার মৌলভীবাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখানকার ব্যবসায়ীরা এখন আটা-ময়দা বিক্রির পাশাপাশি বেকারিতে ব্যবহৃত নানা ধরনের উপকরণও বিক্রি করছেন। ছোট ও মাঝারি মানের বেকারিতে একসঙ্গে সব ধরনের উপকরণ সরবরাহ দিয়ে কোনো রকমে ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছেন তাঁরা।

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি ও আটা-ময়দার মিল মালিক আবদুর রাজ্জাক বলেন, বড় কোম্পানিগুলো নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ গম আমদানি এবং তা ভাঙাতে খরচ পড়ছে অনেক কম। এ কারণে বড় মিলগুলো কম দামে বাজারে আটা-ময়দা বিক্রি করতে পারছে। ফলে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা ছোটদের পক্ষে সম্ভব নয়।

মৌলভীবাজারের আরেক আটা-ময়দা মিল ও মেসার্স আইবি ট্রেডার্সের মালিক বাবুল মিয়া জানান, বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন ও ধারণক্ষমতা অনেক বেশি। তারা নিজস্ব বাহনে গ্রামগঞ্জে পণ্য পৌঁছে দিচ্ছ। এতে আমরা ক্রেতা হারাচ্ছি। তাদের পুঁজির কাছে ছোটরা টিকতে পারছে না। এতে লোকসানে পড়ছে তাদের মতো অনেক মিল। একপর্যায়ে তা বন্ধ করা ছাড়া উপায় থাকছে না।

নারায়ণগঞ্জে একসময় ৭২টি আটা-ময়দার মিল ছিল। বড়দের সঙ্গে পাল্লা দিতে না পারায় বর্তমানে ৬০ শতাংশই বন্ধ হয়ে গেছে। নারায়ণগঞ্জের নিতাইগঞ্জ এলাকার ময়দার মিল মালিক জসিম উদ্দিন জানান, ছোট ও মাঝারি মিল মালিকেরা বড়দের সঙ্গে টিকতে না পারায় অনেকই ঋণে জর্জরিত হয়ে পড়েছেন। ঋণের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় অনেকেই মিল বিক্রি করে দিচ্ছেন।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ এলাকার আটা-ময়দার মিল মালিকেরা বলেন, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লাসহ এ বিভাগে ৮০ থেকে ৯০টি আটা-ময়দা তৈরির মিল ছিল। বর্তমানে ৩০টির মতো মিল চালু রয়েছে। খাতুনগঞ্জের বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের সব মিল একত্রে যে পরিমাণ আটা-ময়দা উৎপাদন করতে পারে, তা দেশের সিটি বা বসুন্ধরা গ্রুপ একাই করতে সক্ষম। বড় মিলারদের ঋণ সুবিধা কম এবং উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় তাদের মুনাফাও বেশি। কিন্তু ছোট ও মাঝারি মিল মালিকেরা ঋণ সুবিধা বেশি পাচ্ছেন না। তাঁদের গুদাম সুবিধাও বড়দের মতো নেই। এসব কারণে একে একে বন্ধ হয় পড়ছে ছোট ও মাঝারি মিল।

More News...

রোববার থেকে চালের বস্তায় তথ্য দেওয়া বাধ্যতামূলক

রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ছাড়াল