করোনার টিকাদানে দক্ষিণ এশিয়ায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

করোনার টিকাদানে দক্ষিণ এশিয়ায় পিছিয়ে বাংলাদেশ

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে করোনাভাইরাসের টিকাদানে পেছনের সারিতে আছে বাংলাদেশ। উন্নয়নশীল বিশ্বে টিকাদান পর্যবেক্ষণে আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাংক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে এই চিত্র পাওয়া গেছে।

শুক্রবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশের ৪০ শতাংশ নাগরিককে টিকার দুটি ডোজ দেওয়া সম্পন্ন করতে যে হারে টিকা প্রয়োগের প্রয়োজন, তা থেকে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। ফলে ২০২২ সালের মধ্যে দেশের ৬০ শতাংশ নাগরিককে টিকাদানের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।

টাস্কফোর্সের তথ্যে দেখা যায়, গড়ে দৈনিক টিকাদানের হার ০.১১ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০০ জনে টিকা পাচ্ছে ০.১১ জন। এই হার ভারতে ০.৩১ শতাংশ, পাকিস্তানে ০.১৯ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কায় ১.৬৩ শতাংশ। এই দেশগুলো টিকাদানে বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে আছে। ভুটান টিকাদানে এ দেশগুলোর চেয়েও অনেক এগিয়ে রয়েছে। দেশটির প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ৮৫ ভাগের বেশি লোককে টিকা দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে মালদ্বীপের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশিকে টিকার পূর্ণ ডোজ দেওয়া হয়েছে।

টাস্কফোর্স বলছে, চলতি বছরের মধ্যে ৪০ শতাংশ মানুষকে টিকাদান সম্পন্ন করতে হলে বাংলাদেশকে দিনে ০.৪৯ শতাংশ হারে টিকা দিতে হবে। আর ২০২০ সালের মাঝামাঝি ৬০ শতাংশকে টিকা দিতে হলে দিনে ০.৩৫ শতাংশ হারে টিকা দিতে হবে।

সাড়ে ১৬ কোটি জনসংখ্যার বাংলাদেশে ৪০ শতাংশ নাগরিককে টিকা দিতে ১৩ কোটি ১৮ লাখ ডোজ টিকা লাগবে। আর ৬০ শতাংশকে টিকা দিতে লাগবে প্রায় ২০ কোটি ডোজ। টাস্কফোর্সের অনুমান, বাংলাদেশ এখন যে হারে টিকা দিচ্ছে তাতে এ বছর নাগাদ ১৯ দশমিক ৬৪ শতাংশকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। তবে সরকার বলছে, আগামী বছরের মধ্যে ৮০ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে টিকাদানের লক্ষ্য তাদের।

দেশে ২৯ জুলাই পর্যন্ত ৮৫ লাখ ২১ জনকে টিকার একটি ডোজ আর ৪২ লাখের বেশি মানুষকে দুটি ডোজ দেওয়া হয়েছে। তবে দেশে সম্প্রতি বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় সরকার আরও বেশি হারে এটি প্রয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কেনা অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে বাংলাদেশে বিনামূল্যে গণটিকাদান শুরু হয়েছিল গত ৭ ফেব্রুয়ারি। সেরাম থেকে সাড়ে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি বাংলাদেশ করলেও তারা দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ পাঠানোর পর ভারত রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলে আর টিকা আসেনি।

সেরাম থেকে ৭০ লাখ ডোজ আসার পাশাপাশি ভারত সরকার উপহার হিসেবে আরও ৩২ লাখ ডোজ একই টিকা দিয়েছিল। ভারত থেকে টিকা আসা বন্ধের পর এপ্রিলে দেশে টিকাদান গতি হারায়। পরে চীন থেকে টিকা কেনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। টিকার বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্স থেকেও টিকা আসতে থাকে মে মাসের শেষ দিকে।

চীনের সিনোফার্মের টিকার দেড় কোটি ডোজ কিনতে চুক্তি হয়েছে। কেনা টিকাসহ উপহার মিলিয়ে সিনোফার্মের ৮১ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া কোভ্যাক্স থেকে মডার্নার ৫৫ লাখ এবং ফাইজারের এক লাখ ডোজ টিকাও এসেছে দেশে। পাশাপাশি জাপান থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার ১০ লাখ ডোজ টিকাও পাওয়া গেছে। সরকারের হাতে বর্তমানে এক কোটির বেশি ডোজ টিকা মজুদ আছে। ফলে টিকাদান ব্যাপকভাবে বিস্তৃত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

চারটি আন্তর্জাতিক সংস্থার ওই টাস্কফোর্স জানিয়েছে, গরিব দেশগুলো এখন পর্যন্ত মাত্র ৫ শতাংশ টিকা কিনতে পেরেছে বা ক্রয়াদেশ দিতে পেরেছে। অন্যদিকে ধনী দেশগুলো মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বেশিকে টিকাদান শেষ করেছে। এ পরিস্থিতিতে টিকা উৎপাদন বাড়াতে উপাদনকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টাস্কফোর্স।

More News...

র‍্যাবের নতুন মুখপাত্র হলেন কমান্ডার আরাফাত

৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া