২৯ বছর পর অলিম্পিক হকিতে পদক আসবে দক্ষিণ এশিয়ায়?

২৯ বছর পর অলিম্পিক হকিতে পদক আসবে দক্ষিণ এশিয়ায়?
স্পোর্টস ডেস্ক : এক সময় অলিম্পিক হকি মানেই ছিল ভারত আর পাকিস্তান। অলিম্পিক হকির সোনার লড়াই সীমাবদ্ধ ছিল দক্ষিণ এশিয়ার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে।

৪ বছর পর পর অলিম্পিক গেমসের আসর বসতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। আর সেখান থেকে উপমহাদেশে প্রায় একটি পদক নিশ্চিত আসতো, সেটা হকিতে।

এছাড়া এই দুই দেশ রৌপ্য পদক পেয়েছে ৪ বার (পাকিস্তান তিনবার : ১৯৫৬ , ১৯৬৪ ও ১৯৭২ এবং ভারত একবার ১৯৬০ সালে)। এর বাইরে দু’ দেশ দুইবার করে তাম্র পদকও পেয়েছে ।

বিশ্ব অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের হিসেব মতে, টোকিও অলিম্পিক হলো গেমসের ৩২তম আসর। আধুনিক অলিম্পিক শুরু ১৭শ শতাব্দির দিকে। তবে অলিম্পিকে হকির প্রচলন ঘটেছে অনেক পরে, ১৯০৮ সালে।

শুরুর পর এক যুগ অলিম্পিকে ফিল্ড হকি নিয়মিত ছিল না। অলিম্পিক গেমসে হকি নিয়মিত হয়েছে ১৯২৮ সাল থেকে। তারপর শুধু দুই বিশ্বযুদ্ধের কারণে ১৯৪০ আর ১৯৪৪ সালে অলিম্পিক গেমসের আসর বসেনি। তাই গেমসে হকি অনুষ্ঠিত হয়েছে ২৩ বার। যার মধ্যে ১৯ বার অন্তত ব্রোঞ্জ পদক হলেও এসেছে উপমহাদেশে।

আর অলিম্পিক গেমস হকিতে উপমহাদেশে সর্বশেষ পদক এসেছে ১৯৯২ সালে। সেবার বার্সেলোনা গেমস হকিতে পাকিস্তান ব্রোঞ্জ পেয়েছিল। অথচ গ্রুপপর্বের খেলায় নেদারল্যান্ডস আর স্পেনের মত দলকে হারিয়ে ৫ খেলায় শতভাগ সাফল্য নিয়ে ২০ গোল করে সেমির যুদ্ধে জার্মানির কাছে হেরে যায় পাকিস্তান। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে তৃতীয় হয়ে তামার পদক পায় পাকিস্তানিরা।

তারপর কেটে গেছে ২৯ বছর। সাগরে অনেক জল গড়িয়েছে। অলিম্পিকেরও সাত সাতটি আসর বসেছে। কিন্তু পাকিস্তান আর ভারতের কেউ হকিতে পদক পায়নি।

ঘাসের মাঠ আর সিনথেটিক টার্ফের হকির গতি প্রকৃতি, ধরন ও কৌশল সম্পূর্ন ভিন্ন। টার্ফ হকি মানেই বাড়তি স্পিড ও টাফ হকি, যার সামনে দৃষ্টিনন্দন স্টিকওয়ার্ক আর ব্যক্তিগত নৈপুণ্য নির্ভর হকির কুলিয়ে ওঠা কঠিন। তাই দিনকে দিন ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকান হকির তুলনায় পিছিয়ে পড়ছে উপমহাদেশের হকি।

তারপরও ২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিকে পাকিস্তানের সামনে এসেছিল পদক পাবার সুযোগ। নেদারল্যান্ডস, জার্মানি, গ্রেট ব্রিটেন, মালয়েশিয়া আর কানাডাকে পেছনে ফেলে ‘এ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিতে উঠে আসে পাকিস্তান।

এর মধ্যে গ্রেট বৃটেনকে ৮-১ গোলে বিধ্বস্ত করে অলিম্পিক হকি ইতিহাসে নিজেদের অন্যতম সর্ববৃহৎ জয়টি পায় পাকিস্তান। কিন্তু সেমিতে গিয়ে আর পারেনি। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রচন্ড দম, চিতাসম ক্ষিপ্রতার কাছে হার মানতে বাধ্য হয় পাকিস্তানিরা। ১-০ গোলে হারে ফাইনালের স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে যায় তাদের।

তারপর তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচেও আর পারেনি পাকিস্তান। অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৬-৩ গোলে হেরে চতুর্থ হয়ে দেশে ফেরে। সেটাই শেষ। ২০০৪ থেকে ২০১৬ অবধি আর গেমস হকির সেরা চারে জায়গা হয়নি ভারত-পাকিস্তানের কারোরই।

সময়ের প্রবাহতায় পাকিস্তান আকাশ থেকে ভূপাতিত হয়েছে। এখন অলিম্পিক হকির মূলপর্বেই যেতে পারে না পাকিস্তানিরা। তবে অলিম্পিক গেমস হকিতে ভারত সম্ভাবনার প্রদীপ এখও জ্বেলে রেখেছে। দক্ষিণ এশিয়াই শুধু নয়, গেমস হকিতে এখন এশিয়ার একমাত্র প্রতিনিধিই ভারত।

এবারের গেমস হকিতে ভারত শুরু করেছে নিউজিল্যান্ডকে ৩-২ গোলে হারিয়ে। পরের ম্যাচে ধাক্কা খায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৭-১ গোলের হারে। তবে তারপর আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে ভারতীয়রা। স্পেনকে হারিয়েছে ৩-০ গোলে। বৃহস্পতিবার ভারতীয়দের গোছানো হকির কাছে ৩-১ গোলে হার মানতে বাধ্য হয়েছে বর্তমান অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাও।

সিনথেটিক টার্ফে ইউরোপের জার্মানি, স্পেন, নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া আর দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনার সুঠামদেহী ও প্রচন্ড শক্তি সামর্থ্যের হকি খেলোয়াড়দের অফুরান দম আর প্রচণ্ড গতির সাথে তাল মেলানো কঠিন। মাঝে দক্ষিণ কোরিয়া চেষ্টা করেছে। কিন্তু নিজ দেশে ২০০০ সালে সিউল ফাইনাল খেলাই সার।

এবার চিরায়ত স্টিকওয়ার্ক আর ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে ভর করা হকি বাদ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ান কোচ গ্রাহাম রেইডের অধীনে ভারত চেষ্টা করছে হারানো গৌরব পুনরুদ্ধারের। দেখা যাক, ভারতীয়দের সে স্বপ্ন কতটা সফল হয়। দুই যুগ পর অলিম্পিক হকিতে দক্ষিণ এশিয়া তথা উপমহাদেশে পদক আসবে কি?

More News...

সল্টের ‘কালবৈশাখী ঝড়ে’ নববর্ষ বরণ কলকাতার

নেইমার পেলেন বড় সুখবর