পাহাড়ে বৃষ্টি আতঙ্ক

পাহাড়ে বৃষ্টি আতঙ্ক

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি : খাগড়াছড়ি জেলা সদরের দয়ানগর এলাকার বাসিন্দা পলি আক্তার। স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে রাতে ঘুমাচ্ছিলেন।
হঠাৎ আনুমানিক ২টার দিকে ঘরের পেছনে পাহাড় ধসে ঘর ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। এসময় তারা দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে রক্ষা পান। টানা বৃষ্টিতে একই এলাকার নুরুল ইসলাম, এডিসি হিল এলাকার আব্দুল মজিদসহ স্থানীয় অনেকের বসতঘর পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত।
গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে খাগড়াছড়ির নদ-নদীর পানি যেমন বেড়েছে তেমনি বেড়েছে পাহাড় ধসের আশঙ্কা। জেলা সদরের অনেক গ্রামীণ সড়কে পাহাড় ধসে পড়েছে। এতে আতঙ্কিত স্থানীয়রা। পাহাড়জুড়ে এমন শত শত পরিবার পাহাড় ধসের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন বছরের পর বছর। বিগত বছরগুলোতে পাহাড় ধসে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। জেলা সদরের সবুজবাগ, শালবন, মোহাম্মদপুর, এডিসি হিল, কুমিল্লাটিলাসহ কয়েকটি এলাকা এবং জেলার মানিকছড়ি, দীঘিনালা, রামগড়, মহালছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি উপজেলায় অনেকগুলো পাহাড়ি ও বাঙালি পরিবার পাহাড়ের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাস করছেন। বিশেষত জেলা সদরের শালবন, সবুজবাগ, কলাবাগান এলাকায় পাহাড়ের চূড়ায় বা পাদদেশে ঘরবাড়ি করে রয়েছেন ভয়াবহ ঝুঁকির মধ্যে।
কিছু ভূমিহীন পরিবার বাধ্য হয়ে বসবাস করলেও অধিকাংশ পরিবার পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তুলছেন। তারা বর্ষার শুরুতে পাহাড়ের ঢালুতে মাটি কেটে রাখেন। পরবর্তীসময়ে বৃষ্টি হলে পাহাড় ধসে পড়ে। এরপর সেখানে বসতি সম্প্রসারণ করেন। শহরের সবুজবাগ এলাকা পাহাড়বেষ্টিত হলেও বর্তমানে সেখানে পাহাড় কেটে কেটে বসতি নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকে প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই পাহাড় কেটে ইট কংক্রিটের ঘর তুলছেন।
এদিকে জেলা শহরের শালবনে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের অধিকাংশই নিরীহ ও ভূমিহীন। যাদের অনেকে সরকার পুনর্বাসিত করলেও তারা নিজেদের ভূমি থেকে ১৯৮৬ সালে বিরাজমান পরিস্থিতির কারণে উচ্ছেদ হয়েছিলেন। ওসব পরিবারগুলোকে তৎকালীন প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে পুনর্বাসিত জমি থেকে তুলে এনে শালবনসহ বিভিন্ন উপজেলা সদরের আশপাশে বসানো হয়।
মধ্য শালবনের বাসিন্দা আব্দুল সালাম ক্ষোভের সঙ্গে জানান, পুনর্বাসন সূত্রে পাওয়া ৫ একর ভূমি থেকে তুলে এনে এখানে (শালবন) বসানো হয়েছে। পাহাড় কেটে বসতি করা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাসে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছি।
খাগড়াছড়ি পরিবেশ সুরক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আবু দাউদ জানান, একতো বালু পাহাড়, বৃষ্টি হলেই ধসে পড়ার ঝুঁকি থাকে। তাছাড়া কেউ জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে পাহাড় কেটে বসতি নির্মাণ করছে। এছাড়াও খাগড়াছড়ি জেলায় প্রভাবশালী ও ভূমিখেকোরাও অনেক পাহাড় দখল ও কাটায় জড়িত। খোদ জেলা শহরের সবুজবাগ, মোহাম্মদপুরসহ কয়েকটি এলাকায় বড় বড় পাহাড় কেটে বসতি গড়ে তুলেছেন। এক্ষত্রে প্রশাসনকে কঠোর ভূমিকা নিতে হবে। প্রশাসনের তথ্যমতে, বর্তমানে জেলায় ৮৯৭টি পরিবার পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে খাগড়াছড়ি পৌর শহরের এই সংখ্যা প্রায় ২শ। ইতোমধ্যে স্থানীয় জেলা প্রশাসক, পুলিশ প্রশাসন ও পৌর প্রশাসন মিলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জেলায় পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, শহরে পাহাড়ের উপর বসবাস করে এমন ৯০টি পরিবারকে আমরা ঝুকিঁপূর্ণ বসতি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছি। একই সঙ্গে ওই পাহাড়ের নিচে বসবাসরত পরিবারগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি হিসেবে গণ্য করছি। ইতোমধ্যে ৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে কীভাবে স্থায়ীভাবে অন্যত্র পুনর্বাসন করা যায় তা আমরা ভাবছি।
২০১১ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে পরের বছর হাইকোর্ট খাগড়াছড়িসহ তিন পার্বত্য জেলা, চট্টগ্রাম মহানগর ও কক্সবাজার এলাকায় পাহাড় কাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে কিছু নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা এত বছরেও কার্যকর করা হয়নি।

More News...

ওবায়দুল কাদেরের মস্তিষ্ক অলস-হৃদয় দুর্বল : রিজভী

ট্রেনে ঢাকায় ফিরছেন অনেকে, স্টেশনে ভিড়