রোগীতে ভরে যাচ্ছে হাসপাতাল, বিকল্প প্রস্তুতির পরামর্শ

রোগীতে ভরে যাচ্ছে হাসপাতাল, বিকল্প প্রস্তুতির পরামর্শ

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের করোনা সংক্রমণের গ্রাফ চিত্রের ঊর্ধ্বমুখী রেখা ক্রমান্বয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতিতে অগ্রসর হওয়ায় হাসপাতালগুলোতে রোগী চাপ বাড়ছে।

এরইমধ্যে নির্ধারিত শয্যার বেশি রোগী ভর্তির পাশাপাশি বিভিন্ন হাসপাতালে সংকট দেখা দিয়েছে আইসিইউ শয্যার। দেশের অন্তত ৭ টি হাসপাতালে নির্ধারিত বেডের বিপরীতে অতিরিক্ত রোগী ভর্তি আছেন। এছাড়া ৯ টি হাসপাতালের কোন আইসিইউ বেড খালি নেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ পরিসংখ্যান (৩০ জুন) বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে যেসব নির্ধারিত শয্যা রয়েছে তার ৪৭ শতাংশ পূর্ণ হয়েছে। সর্বমোট ১২ হাজার ৯৭৩ টি বেডের মধ্যে এখন ফাঁকা আছে ৬৮৯০টি শয্যা।

অন্যদিকে, সারা দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত আইসিইউ শয্যা ৫৬.৫৬ শতাংশ পূর্ণ হয়ে গেছে। মোট ১১৫১ টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ৫০৫ টি ফাঁকা আছে।

পরিসংখ্যান বলছে, রাজধানীতে ক্রমান্বয়ে করোনা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কার হয়ে উঠছে। রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ তিনটি সরকারি হাসপাতালে কোন আইসিইউ বেড খালি নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বিএসএমএমইউ) বেশ কয়েকটি হাসপাতালে আইসিইউ বেডের সংকট দেখা দিয়েছে। মহানগরীর সব হাপাতালেই করোনা রোগীর চাপ বাড়ছে।

বিশ্লেষণ বলছে, ঢাকা মহানগরীর ৬৪ শতাংশ আইসিইউ বেড পূর্ণ হয়ে গেছে। ৩৮৪ টি আইসিইউ বেডের মধ্যে এখন ফাঁকা আছে মাত্র ১৩৯টি। এছাড়া ঢাকা মহানগরীর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ৫ হাজার ৩১৮ টি শয্যার বিপরীতে খালি আছে ৩ হাজার ৯৮ টি শয্যা। সরকারি-বেসরকারি মিলে ৮২৫টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ৪০০ টি খালি আছে। অর্থাৎ ৫১ শতাংশে বেশি আইসিইউ বেড করোনা রোগীতে ভরে গেছে।

এদিকে সারা দেশে সরকারি ও বেসরকারি হাসপালেরর অক্সিজেন সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ২৪ হাজার ২৮০টি। হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুল সংখ্যা ১ হাজার ৬৩৪ টি। আর অক্সিজেন কনসেনট্রেটর সংখ্যা ১ হাজার ৬৪২টি। যদিও করোনা রোগীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অক্সিজেন যন্ত্রপাতির কতটি ব্যবহার হচ্ছে বা ফাঁকা আছে সেই হিসেব নেই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের করোনা পরিস্থিতি যেদিকে ধাপিত হচ্ছে তাতে প্রস্তুত রাখা শয্যাগুলো দিয়ে রোগী সামাল দেয়া কঠিন হবে। শিগিগিরই হাসপাতালগুলোতে শয্যার ঘাটতি দেখা দেবে। তাই শয্যা সংখ্যা, আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর পাশাপাশি ফিল্ড হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, সাধারণ শয্যা সংখ্যা, আইসিইউ বেড বাড়ানোর পরেও বিএসএমএমইউতে করোনা ইউনিটের প্রায় সব বেডেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন। এ অবস্থায় ফিল্ড হাসপাতাল তৈরির যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। অন্যান্য হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা প্রদানের জন্য শয্যা সংখ্যা বাড়াতে হবে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সুলতানা শাহানা বানু বলেন, করোনা রোগীদের জন্য প্রস্তুত রাখা শয্যাগুলো যতেষ্ট নয়। হাসপাতালগুলোতে শয্যার সংখ্যা বাড়ালেও পরিস্থিতি যেভাবে অবনতি হচ্ছে তাতে রোগী সামাল দেয়া কঠিন হবে। বিশেষ করে অক্সিজেন, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল। অক্সিজেনের ব্যাপক সংকট দেখা দেবে বলেও আাশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

বিভাগীয় পরিস্থিতি:

মহানগরসহ ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৬ হাজার ২৯৭টি সাধারণ শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। এরমধ্যে ৩ হাজার ৫৭৫টি শয্যা ফাঁকা আছে। এ বিভাগে মোট ৮৮৫টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে, যার মধ্যে ৪২৩টি শয্যা ফাঁকা আছে। বিভাগটিতে হাই ফ্লো নেজালসহ আইসিইউ সমতুল্য শয্যর সংখ্যা ৯২২টি ও অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেরসহ এইচডিইউ সমতুল্য শয্যা ৪৭১টি।

ময়মনসিংহ বিভাগে ৪৪৬টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ২৮২ টি ফাঁকা আছে। ১৫টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ৮টি ফাঁকা আছে। এছাড়া বিভাগটিতে হাই ফ্লো নেজালসহ আইসিইউ সমতুল্য শয্যর সংখ্যা ৩৬টি ও অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেরসহ এইচডিইউ সমতুল্য শয্যা ৩৩টি।

মহানগরসহ চট্রগ্রাম বিভাগে মোট ২ হাজার ৪২৮টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ১ হাজার ৬৭৯টি খালি আছে। ৯১টি আইসিইউ’র মধ্যে ২৯টি ফাকা আছে। এছাড়া বিভাগটিতে হাই ফ্লো নেজালসহ আইসিইউ সমতুল্য শয্যর সংখ্যা ১৫২টি ও অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেরসহ এইচডিইউ সমতুল্য শয্যা ৫১১টি।

রাজশাহী বিভাগে ১১৮৬টির মধ্যে মাত্র ১৭১টি সাধারণ শয্যা ফাকা আছে। অন্যদিকে ৪৬টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ১৪টি ফাকা আছে। এছাড়া বিভাগটিতে হাই ফ্লো নেজালসহ আইসিইউ সমতুল্য শয্যর সংখ্যা ১০৪টি ও অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেরসহ এইচডিইউ সমতুল্য শয্যা ৩০২টি।

রংপুরের ৬৪০টি সাধারণ বেডের মধ্য ৩৬০টি খালি আছে। ৩৮টি আইসিইউ বেডের মধ্যে ১৩টি ফাকা আছে। এছাড়া বিভাগটিতে হাই ফ্লো নেজালসহ আইসিইউ সমতুল্য শয্যর সংখ্যা ৫১টি ও অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেরসহ এইচডিইউ সমতুল্য শয্যা ৭০টি।

খুলনা বিভাগের ১১০৫টি মধ্যে সাধারণ শয্যা খালি আছে মাত্র ২৭৯টি। আইসিইউ শয্যার ৪০টির মধ্যে ৮টি ফাকা আছে। এছাড়া বিভাগটিতে হাই ফ্লো নেজালসহ আইসিইউ সমতুল্য শয্যর সংখ্যা ৩০২টি ও অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেরসহ এইচডিইউ সমতুল্য শয্যা ১৭৫টি।

বরিশাল বিভাগের ৪৪৫টি সাধারণ বেডের মধ্যে ২২৪টি ফাকা আছে। ১৫টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ৪টি খালি আছে। এছাড়া বিভাগটিতে হাই ফ্লো নেজালসহ আইসিইউ সমতুল্য শয্যর সংখ্যা ৪৬টি ও অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেরসহ এইচডিইউ সমতুল্য শয্যা ৪৮টি।

সিলেটে ৪২৬টি সাধারণ বেডের মধ্যে ৩২০টি খালি আছে। আইসিইউ শয্যার ২১ টির মধ্য ৬ টি ফাকা আছে। এছাড়া বিভাগটিতে হাই ফ্লো নেজালসহ আইসিইউ সমতুল্য শয্যর সংখ্যা ২১ টি ও অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেরসহ এইচডিইউ সমতুল্য শয্যা ৩২টি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে আজ বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) করোনা শনাক্ত হয়েছে ৮ হাজার ৮২২ জনের, যা এখন পর্যআন্ত সর্বোচ্চ রোগী শনাক্তের রেকর্ড।

অন্যদিকে, করোনায় মারা গেছেন ১১৫ জন, যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। দেশে এ পর্যন্ত করোনা সংক্রমিত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে মোট ৯ লাখ ১৩ হাজার ২৫৮। মোট মৃত্যু হয়েছে ১৪ হাজার ৫০৩ জনের। নতুন ৪ হাজার ৫৫০ জনসহ সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ১৬ হাজার ২৫০ জন। বাংলাদেশ জার্নাল

 

More News...

পৃথিবীর বৃহত্তম দুর্নীতিতে বিজেপি: ভারতের অর্থমন্ত্রীর স্বামীর মন্তব্য

খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ: মির্জা ফখরুল