নওগাঁ পশুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ

নওগাঁ পশুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ
সেলিম রেজা, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ পশুর হাটে ইজারাদারের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। সরকার নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত টাকা (খাজনা) আদায় করায় হাটে পশু কিনতে আসা ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, উল্লাপাড়া,পাবনার ভাংগুড়া, চাটমোহর, নাটোরের গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলার সিমান্তে করতোয়া নদীর তীরে তাড়াশের প্রসিদ্ধ সাপ্তাহিক নওগাঁ হাট অবস্থিত। আর যোগাযোগ ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতির কারণে এখানে বিভিন্ন উপজেলার হাজার, হাজার মানুষ বৃহস্পতিবার সাপ্তাহিক নওগাঁ হাটে কেনাকাটাও ব্যবসার জন্য আসেন।
এদিকে হাট পেরিফেরির বাহিরে স্থায়ী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে টোল দাবী করায় ব্যবসায়ীরা এর প্রতিকার চেয়ে তাড়াশ ইউএনও মেজবাউল করিম বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন। আর এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত সোমবার তাড়াশ ইউএনও ওই ইজাদারকে কোন আইন বলে হাট পেরিফেরির বাহিরে টোল দাবী করছেন এ বিষয়ে কারণ দর্শানো নোটিশও দিয়েছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। হাটটির গুরুত্ব থাকায় ১৪২৮ বাংলা সনে ভ্যাটসহ ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকায় আকবর আলী নামের এক জনৈক ব্যক্তি এক বছরের জন্য টোল আদায়ের ইজারা নেন। কিন্তু এ হাটের খাজনা আদায় করছে স্থানীয় এমপি আব্দুল আজিজের ছোট ভাই এডভোকেট নুরুল ইসলাম। বৃহত্তর নওগাঁ হাটের তিন বছরের ব্যবধানে ইজারা মূল্য বেড়েছে এক কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে তিন কোটি ৫২ লাখ টাকা। স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে বাড়িয়েছে হাটের ইজারা মূল্য,
উপজেলা হাটবাজার ইজারা বাস্তবায়ন কমিটি সূত্র মোতাবেক জানা যায়, সরকার নির্ধারিত খাজনা গরু ও মহিষের ক্ষেত্রে ২৫০ টাকা, ছাগল ও ভেড়ার ক্ষেত্রে ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী জেলা প্রশাসক কর্তৃক খাজনার তালিকা হাটের টোল উত্তোলনের স্থলে দৃশ্যমান থাকতে হবে। কিন্তু এ ধরনের তালিকা কোথাও নেই।
হাট ঘুরে সরেজমিনে দেখা যায়, ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের নিকট থেকে নেওয়া হচ্ছে খাজনা। হাটে আগত গরু ক্রেতা মোঃ জয়ান আলী আলী এসেছেন চাটমোহর উপজেলার চাটমোহর গ্রাম থেকে। তিনি ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি গরু ক্রয় করেছেন ভাঙ্গুরা উপজেলার করতকান্দি গ্রামের মোঃ জাফর আলী ব্যাপারীর নিকট থেকে। ক্রেতার খাজনার রশিদে টাকার পরিমানে লেখা পরিশোধ। জানতে চাইলে তিনি বলেন ৬শত টাকা দিতে হয়েছে আমাকে আর বিক্রেতাও দিয়েছেন ১শত টাকা।
উল্লাপাড়া থেকে আগত গরু ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন জানান, তিনি ৬টি গরু ক্রয় করেছেন, তাতে খাজনা দিতে হয়েছে ৩ হাজার টাকা। এদিকে ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন প্রতিটি ভেড়া ও ছাগলের ক্রেতার নিকট থেকে ৩শত টাকা এবং বিক্রেতার নিকট থেকে পঞ্চাশ টাকা হারে খাজনা আদায় করা হচ্ছে,
একই অভিযোগ করেন গরু ব্যাপারী আব্দুস সালাম, শাহেদ আলী, কোরবান আলী সহ বেশ কয়েকজন। তারা আরো বলেন, এভাবে মাত্রাতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হলে নওগাঁ হাট ছেড়ে ব্যবসার জন্য অন্য হাট বেছে নেব। সরেজমিনে ১০জুন বৃস্পতিবার হাটে গিয়ে দেখা যায় ইজারাদারের লোকজন হাটের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে টেবিল বসিয়ে খাজনা আদায় করছেন । তারা খাজনা আদায়ের রশিদে টাকার পরিশোধ রেখে শুধুমাত্র ক্রেতা-বিক্রেতার নাম, ঠিকানা ও মোট মূল্য লিখে দিচ্ছেন,
এ বিষয়ে নওগাঁ হাটের ইজারাদার আকবার আলী সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেক বেশী পরিমাণে টাকা মূল্য দিয়ে হাট ইজারা নিয়েছি। প্রতি হাটে ৭ লাখ করে টাকা খাজনা আদায় করতেই হবে। যে কারণে খাজনা আদায়ের ক্ষেত্রে কিছুটা অনিয়ম হচ্ছে। নওগাঁ হাট পরিচালনা কমিটির সভাপতি এডভোকেট নুরুল ইসলাম বলেন, অন্যন্য বছরের ন্যায় এ বছর একই হারে খাজনা আদায় করা হচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও হাটবাজার ইজারা বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি মো. মেজবাউল করিম বলেন, সরকারি বিধি বিধানের বাইরে খাজনা নেওয়ার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে ইজারাদারকে এসবের লিখিত জবাব দিতে বলা হয়েছে
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ মোবারক হোসেন জানান অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের কোন সুযোগ নেই। অতিরিক্ত খাজনা প্রমান পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্তা নেয়া হবে।

More News...

১৭৩ জন বাংলাদেশী মিয়ানমার কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন

বিড়ির শুল্ক প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে পাবনায় মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান