সব বাধা পেরিয়ে ঢাকা ফিরছে মানুষ

সব বাধা পেরিয়ে ঢাকা ফিরছে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : উত্তরবঙ্গের মানুষের জন্য রাজধানীর প্রবেশপথ টঙ্গী সেতুর ওপারে যাত্রীবোঝাই বাস, মাইক্রোবাসগুলো ঘুরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। যাত্রীরা সেখানে নেমে জ্যেষ্ঠের খরতাপে ব্যাগ-বোচকা নিয়ে পৌনে এক কিলোমিটার হেঁটে সেতু পার হচ্ছেন। এমন দুর্ভোগে তারা ক্লান্ত, বিধ্বস্ত। সোমবার দুপুর ২টার দিকে ঢাকা ও গাজীপুর জেলার সীমানায় টঙ্গী সেতুর দুই পাড়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।

লকডাউনের বিধিনিষেধ অমান্য করে যাত্রী পরিবহন করা ট্রাক ও পিকআপ চালকরা পুলিশ চেকপোস্টের আগেই যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছেন। যাত্রীরা চেকপোস্ট ও সেতু পেরিয়ে ঢাকায় ঢুকে আবার ট্রাকে, পিকআপে উঠে যে যার গন্তব্যে যাচ্ছেন। তবে প্রাইভেটকারের যাত্রীদের এ কষ্ট নেই। তারা যেমন স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদের আগে ঢাকা ছেড়েছিলেন, ফিরছেনও সেভাবেই। পুলিশি বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি।

করোনা সংক্রমণে রোধে গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া লকডাউনে দূরপাল্লার বাস, লঞ্চ ও ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। কিন্তু বিধিনিষেধ অমান্য করে ঈদের আগে গ্রামমুখী মানুষের ঢল নামে। মোবাইল অপারেটরদের হিসাবে প্রায় এক কোটি মানুষ ঢাকা ছাড়েন ঈদের আগের ১০ দিনে। দূরপাল্লার যান বন্ধ থাকায় মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, ট্রাক, পিকআপ, অটোরিকশায় গাদাগাদি করে যে যেভাবে পেরেছেন গ্রামে গিয়েছেন ঈদ উদযাপন করতে। শেষ বেলায় দূরপাল্লার বাসও চলেছে। ঈদের পর কর্মস্থলে ফেরার তাগিদে একই প্রক্রিয়ায় রাজধানীতে ফিরছেন মানুষ।

সড়কের মতো গতকাল যাত্রীর চাপ ছিল পদ্মা পারাপারের ফেরিতেও। তবে ঈদের আগের মতো ভিড় ছিল না। ফেরি চলাচল সীমিত এবং লঞ্চ-স্পিডবোট না চলায় হাজার হাজার যাত্রী পুলিশ পাহারা ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পদ্মা পার হয়েছেন।

সোমবার দুপুরে টঙ্গীর বাটা ফ্যাক্টরির সামনে দেখা যায়, পুলিশের কড়া পাহারা। ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর, জামালপুরসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা বাস ও মাইক্রোবাসগুলোকে ঘুরিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। লকডাউন চলাকালে এক জেলার গণপরিবহন অন্য জেলায় প্রবেশ করতে পারবে না- সরকারি এ নির্দেশনার কারণেই গাড়িগুলোকে ঢাকার দিকে যেতে দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার জাকির হাসান।

গাড়ি ঘুরিয়ে দেওয়ায় যাত্রীরা পড়েন বিপাকে। গাড়ি থেকে নেমে ঢাকার দিকে হাঁটা ধরেন তারা। কথা হয় ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া থেকে আসা আনোয়ার কবিরের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ঈদের আগে ১০ মে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন ভেঙে ভেঙে। বুধবার থেকে তার অফিস খোলা। তাই চলে আসতে হয়েছে। ‘আলম এশিয়া’ বাসে ফুলবাড়িয়া থেকে জনপ্রতি ৪০০ টাকা ভাড়ায় এসেছেন জয়দেবপুর চৌরাস্তা পর্যন্ত। সেখান থেকে লোকাল বাসে এসেছেন টঙ্গী পর্যন্ত। পুলিশ গাড়ি আটকে নামিয়ে দিয়েছেন। তীব্র রোদ আর গরমে শিশুসন্তান অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এখন হেঁটে আবদুল্লাহপুর যাবেন। তারপর কিছু একটা দিয়ে রামপুরার বাসায় যাবেন।

টঙ্গী সেতুতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় দেখা যায় হাজার হাজার মানুষ হেঁটে সেতুর এপার-ওপার যাচ্ছেন। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের কর্মস্থল গাজীপুরে। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকা হয়ে গাজীপুর ফিরছেন। গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার জাকির হাসান বলেছেন, হেঁটে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় প্রবেশে কোনো বাধা নেই। এমন কাউকে ঠেকানোর নির্দেশনাও নেই।

আবদুল্লাহপুরে খন্দকার সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে অপেক্ষমাণ একটি হলুদ পিকআপে দুপুর ৩টার দিকে হুড়োহুড়ি করে যাত্রী উঠতে দেখা গেলো। পিকআপটি এসেছে নেত্রকোনা থেকে যাত্রী নিয়ে। ময়মনসিংহের সীমানা ছেড়ে গাজীপুরে প্রবেশের আগে ভালুকা সেতুতে একবার পুলিশ তল্লাশিতে পড়তে হয়েছিল। চেকপোস্টের আগে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে খালি অবস্থায় সেতু পার হয় পিকআপটি। যাত্রীরা হেঁটে সেতু পার হয়ে আবার পিকআপে চড়েন। টঙ্গীতে একই পদ্ধতিতে পুলিশকে ফাঁকি দিয়েছে পিকআপটি। এবার চেকপোস্টের আগে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে খালি অবস্থায় সেতু পার হয়ে আবদুল্লাহপুরে অপেক্ষায় ছিল। যাত্রীরা হেঁটে সেতু পার হয়ে ঢাকায় ঢুকে আবার পিকআপে ওঠেন।

পিকআপের যাত্রী কাওসার হোসেন ‘চোর-পুলিশ খেলার’ এ ধারা বিবরণী দিয়ে বললেন, দূরপাল্লার বাস চালু থাকলে বরং ভালো হতো। এভাবে গাদাগাদি করে আসতে হতো না। ব্যাগপত্র নিয়ে বারবার নামা ও হাঁটার দুর্ভোগে পড়তে হতো না। ভিড়ও এড়ানো যেতো। তাতে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কমত। বাড়ি যাওয়া ও কর্মস্থলে ফিরতে বাড়তি ভাড়াও লাগত না। যাদের টাকা আছে, তারা প্রাইভেটকারে আসছেন। তাদের কোনো ভোগান্তি নেই।

সড়কের মতো পাটুরিয়া ঘাটেও জনস্রোত রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিবালয় (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি। ফেরিগুলোতে যাত্রীর চাপ আগের দিনের চেয়ে বেড়েছে। ফেরিতে প্রাইভেটকার ও যাত্রীর সংখ্যাই বেশি ছিল। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) উপমহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান জানান, সোমবার সকাল থেকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌ-রুটে আটটি রো রো এবং সাতটি ছোট ফেরি যাত্রী ও যানবাহন পারাপার করেছে।

দূরপাল্লার বাস না চলায় পদ্মা পেরিয়ে আসা যাত্রীরা পড়েছেন বিপাকে। তারা পাটুরিয়া ঘাট থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার হেঁটে উথলী, টেপড়া বাসস্ট্যান্ড গিয়ে জনপ্রতি ছয় থেকে সাতশ’ টাকা ভাড়ায় সিএনজি অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, পিকআপ, ট্রাক, প্রাইভেটকারে ঢাকায় যাচ্ছেন। তবে ঢাকায় প্রবেশপথ গাবতলী সেতুর আগেই হেমায়েতপুরে গাড়ি আটকে দেওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে হেঁটে যেতে হচ্ছে যাত্রীদের।

পদ্মা পার হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে ঢাকার গাড়ির অপেক্ষমাণ নার্গিস আক্তার, লিপি আক্তার ও সেলিম শেখ জানান, তাদের বাড়ি রাজবাড়ী। গার্মেন্টসে চাকরি করেন। মঙ্গলবার থেকে কাজ শুরু করতে হবে। পাটুরিয়ায় চার ঘণ্টা অপেক্ষা করেও গাড়ি পাননি।

গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দৌলতদিয়া ঘাটে ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ বেড়েছে। তবে যানবাহনের চাপ নেই। নদী পারাপারের যাত্রীর চাপই বেশি। কিন্তু যানবাহন না থাকায়, নির্দিষ্ট ‘লোড না হওয়ায়’ যাত্রী বোঝাই ফেরি ছাড়তে বিলম্ব হয়েছে। আগেভাগে নদী পার হতে যাত্রী এক ফেরি থেকে অন্য ফেরিতে হুড়োহুড়ি করেন।

More News...

কুড়িগ্রামের খাবারে বেজায় খুশি ভুটানের রাজা

বিড়ি শিল্পে ট্যাক্স প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে রংপুর শ্রমিকদের মানববন্ধন