বেশি ভাড়ায় মুরগিবাহী পিকআপেও ছুটছে মানুষ

বেশি ভাড়ায় মুরগিবাহী পিকআপেও ছুটছে মানুষ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : সিরাজগঞ্জের সব মহাসড়কে ঈদে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। তারা প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে তিন গুণ বেশি ভাড়ায় মুরগিবাহী পিকআপ, ভ্যান, ট্রাক, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স ও মোটরসাইকেলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ছুটছে। প্রশাসনের কড়া নজরদারি থাকলেও বাঁধভাঙা মানুষের চাপে তারা নাকাল হয়ে পড়েছে।

বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত হাটিকুমরুল গোলচত্বর, পাচিলা, ফুলজোড় কলেজ এলাকা, নলকা ব্রিজ, নলকা মোড় ও কড্ডার মোড় ঘুরে এ দৃশ্য দেখা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলা ও সলঙ্গা থানার নলকা ইউনিয়নের নলকা মোড়ে বুধবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ঘরমুখো মানুষ মুরগীবাহী পিকআপ, ভ্যান ও মোটরসাইকেলে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছে। এ ছাড়া হাটিকুমরুল গোলচত্বর ও উল্লাপাড়া উপজেলার হটিকুমরুল ইউনিয়নের পাচিলা ওভারব্রিজ এলাকা ও কড্ডার মোড় ঘুরে দেখা যায়, মানুষ গাদাগাদি করে পণ্যবাহী ট্রাক, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্সে করে বেশি ভাড়ায় গ্রামে যাচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা থেকে নওগাঁগামী পিকআপভ্যান যাত্রী মাহমুদুল্লাহ বলেন, গার্মেন্টস দুই সপ্তাহের জন্য ছুটি হয়ে গেছে। এদিকে লকডাউনে দূরপাল্লার বাস-কোচ বন্ধ। তাই নিরূপায় হয়ে ছয় হাজার টাকা ভাড়ায় পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে নওগাঁ যাচ্ছি। গাবতলি থেকে নলকা পর্যন্ত আসতে প্রায় নয় ঘণ্টা সময় লেগেছে। গাড়ি মাঝে মাঝে থেমে থেমে চলছে।

তিনি আরো বলেন, শিশুদের নিয়ে এই গরমে সিদ্ধ হয়ে গেছি। পারলে আমাদের কষ্টের কথা একটু সরকারের কাছে তুলে ধরেন। যাতে ফিরতি সময়ে এমন ভোগান্তি না হয়।

শাহজাদপুর উপজেলার টেকুয়াপাড়া গ্রামের চাকরিজীবি সাইদুল ইসলাম বলেন, সাত হাজার টাকায় মাইক্রোবাস ভাড়া করে পরিবারের সবাইকে বাড়ি পাঠিয়েছি। রাত ৯টায় রওনা দিয়ে রাত ৩টার দিকে বাড়ি পৌঁছেছি।

পাবনার আতাইকুলা এলাকার গার্মেন্টসকর্মী শাকিল আহমেদ বলেন, মাসে মাত্র আট হাজার টাকা বেতন পাই। এ দিয়ে নিজেরই চলে না। হঠাৎ গার্মেন্টস ছুটি হয়ে যাওয়ায় মেস বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিয়েছি। মঙ্গলবার বিকেলে চন্দ্রা থেকে ভ্যানে ৮০০ টাকা ভাড়ায় রাত ৮টার দিকে কড্ডার মোড়ে এসেছি। সিরাজগঞ্জ শহরে এক আত্মীয়ের বাসায় রাত থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পাবনার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। কখন বাড়ি পৌঁছাব জানিনা।

তিনি বলেন, বাড়ি গিয়ে ছোট ভাইয়ের জন্য ঈদের নতুন জামা কিনে দিতে হবে। তা না হলে তার ঈদ হবে না।

অপরদিকে ট্রাক যাত্রী সোবহান আলী, আহম্মদ আলী ও নয়ন মিয়া বলেন, নিরূপায় হয়ে ১ হাজার টাকা ভাড়ায় বগুড়া যাচ্ছি। ধীরগতিতে চলতে থাকায় রোদে পুড়ে চরম অসুস্থ্য বোধ করছি। মোটরসাইকেল আরোহী ওমর আলী জানান, ২৫ শ টাকা ভাড়ায় ঢাকা থেকে শেরপুর যাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, ১২ শ টাকা থেকে ২৫ শ টাকা ভাড়া গুণতে হচ্ছে মোটরসাইকেল আরোহীদের।

এ বিষয়ে হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ওসি শাহজাহান আলী বলেন, ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে। তবে দীর্ঘ যানজট নেই। নলকা ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ও কড্ডায় ওভার ব্রিজের কাজ চলতে থাকায় এখানে একটু চাপ আছে। তবে আমাদের কর্মীরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখেছে। আর গোলচত্বরে কোনো গাড়ি দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে এখানে যানজট নেই। কোথাও কোন সমস্যা হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে তা সমাধান করা হচ্ছে।

বেশি ভাড়া বিষয়ে তিনি বলেন, বাস চলাচল বন্ধ থাকার সুযোগে পুলিশের নজর ফাঁকি দিয়ে অসাধু ড্রাইভার-হেলপাররা এ কাজ করছে। আমাদের নজরে এলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।

More News...

ট্রেনে ঢাকায় ফিরছেন অনেকে, স্টেশনে ভিড়

দ্বীপ উন্নয়ন-কৃষি জমি সুরক্ষা আইন করতে সংসদকে হাইকোর্টের পরামর্শ