নাক, চোখ, মস্তিষ্ক আক্রান্ত করতে সক্ষম ভয়ংকর ‘কালো ছত্রাক’

নাক, চোখ, মস্তিষ্ক আক্রান্ত করতে সক্ষম ভয়ংকর ‘কালো ছত্রাক’

অনলাইন ডেস্ক : করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে নাকাল ভারতে ভাইরাস আক্রান্তদের শরীরে ঘটছে ভয়ংকর ছত্রাকের সংক্রমণ। মারাত্মক এই ছত্রাকটি নাক, চোখ, এমনকি মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করতে পারে।

বিজ্ঞানের পরিভাষায় এ ছত্রাককে বলা হচ্ছে ‘মিউকোরমাইকোসিস’। ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাস’ সংক্রমণ নামেও এর পরিচিতি রয়েছে। মূলত গুজরাট, দিল্লি ও মহারাষ্ট্রে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

দেশটির সংবাদ সংস্থার খবর অনুসারে, এখনো পর্যন্ত আহমেদাবাদের বিজে মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এই রোগে সংক্রমিত ৬৭ জনের সন্ধান পাওয়া গেছে। সর্বশেষ ২০ দিনের মধ্যে এই সংক্রমণ ঘটেছে। এদের মধ্যে ৪৫ জনের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

নাক, চোখ, মস্তিষ্কে আক্রান্ত করতে সক্ষম এই মিউকরমাইকোসিস একটি বিরল কিন্তু বিপজ্জনক ছত্রাক।

করোনা থেকে সুস্থ হয়ে যাওয়া বা সুস্থ হওয়ার পথে থাকা রোগীরা ‘কালো ছত্রাক’ নামে পরিচিত এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

মিউকরমাইকোসিস কী?

মিউকরমাইকোসিস খুবই বিরল একটি সংক্রমণ। মাটি, গাছপালা, সার, পচতে থাকা ফল ও সবজিতে থাকা মিউকর মোল্ডের সংস্পর্শে এলে এ রোগে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এটি সবখানেই পাওয়া যায়। মাটি, বাতাস, এমনকি সুস্থ মানুষের নাক ও কফেও এটি থাকতে পারে।

ভারতীয় চিকিৎসক ডা. নায়ের বিবিসিকে বলেন, সাইনাস, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসের ক্ষতি করে এই কালো ছত্রাক। ডায়াবেটিস, এইডস ও ক্যানসারের মতো জটিল রোগে আক্রান্তদের জন্য প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে এটি। এ রোগে মৃত্যুহার ৫০ শতাংশ।

ডাক্তাররা মনে করছেন, গুরুতর অসুস্থ করোনা রোগীদের জীবন বাঁচাতে যে স্টেরয়েড ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটিই তাদেরকে মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত করছে।

স্টেরয়েড করোনা আক্রান্তদের ফুসফুসের প্রদাহ প্রশমিত করে। শরীরের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা যখন করোনাভাইরাসকে ঠেকাতে অনেক বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন শরীরের কিছু ক্ষতি হয়। সেই ক্ষতি কমাতে সহায়তা করে স্টেরয়েড। কিন্তু একই সঙ্গে এটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং রক্তে শর্করা বাড়িয়ে দেয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত বা আক্রান্ত নন- সবার ক্ষেত্রে এটি ঘটে। আর এ কারণেই রোগীরা মিউকরমাইকোসিসে আক্রান্ত হন বলে চিকিৎসকদের ধারণা।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতের যে কয়টা শহর বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, তার মধ্যে মুম্বাই একটি। ডা. নায়ের এ শহরের তিনটি হাসপাতালে কাজ করেন।

তিনি জানান, এপ্রিলে তিনি অন্তত ৪০ জনকে এই ছত্রাকে আক্রান্ত হতে দেখেছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং বাড়িতে চিকিৎসা নিয়ে করোনা থেকে সেরে উঠেছেন। তাদের ১১ জনের চোখ অস্ত্রোপচার করে ফেলে দিতে হয়েছে।

মুম্বাইয়ের সিওন হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের প্রধান ডা. রেনুকা ব্রাদু বিবিসিকে জানান, গত বছর মাত্র ছয় জন তাদের হাসপাতালে ছত্রাকের সংক্রমণ নিয়ে এলেও, গত দুই মাসে এসেছেন ২৪ জন। এই ২৪ জনের মধ্যে ১১ জন একটি করে চোখ হারিয়েছেন। মারা গেছেন ছয় জন। আক্রান্তদের বেশির ভাগই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, মধ্যবয়সী এবং হাসপাতালে আসার দুই সপ্তাহ আগে কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠেছিলেন।

ডা. রেনুকা বলেন, আমরা এখানে সপ্তাহে দুই থেকে তিনজন রোগী পাচ্ছি। মহামারির মধ্যে এটা একটা দুঃস্বপ্নের মতো।

মিউকরমাইকোসিসের উপসর্গ

নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক থেকে রক্ত পড়া, চোখে ব্যথা ও চোখ ফুলে যাওয়া, চোখের পাতা ঝুলে পড়া, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া এবং দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলা কালো ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার উপসর্গ। এ ছাড়া, নাকের চারপাশে কালো দাগও পড়তে পারে।

চিকিৎসকরা বলছেন, এ রোগে আক্রান্ত বেশির ভাগ রোগীই হাসপাতালে যেতে অনেক দেরি করে ফেলেন। দৃষ্টিশক্তি একেবারেই হারিয়ে ফেলার পর হাসপাতালে যান তারা। ফলে চোখ অপসারণ করা ছাড়া আরও কোনো উপায় থাকে না চিকিৎসকদের। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর দুই চোখই আক্রান্ত হয়। বিরল কিছু ক্ষেত্রে ছত্রাকের ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে রোগীর চোয়ালের হাড়ও ফেলে দিতে হয় চিকিৎসকদের।

সংক্রমণ রোধের উপায়

মুম্বাইয়ের ডায়াবেটিস চিকিৎসক ডা. রাহুল বকশি বিবিসিকে জানান, এ রোগের সংক্রমণ রোধের একটি উপায় হতে পারে, কোভিড আক্রান্ত ও কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীদের সঠিক মাত্রায় ও সঠিক সময়ে স্টেরয়েড দেওয়া। রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রার দিকে খেয়াল রাখা উচিত ডাক্তারদের।

More News...

সাইবার নিরাপত্তা বিল পাস, থাকছে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের বিধান

বাংলাদেশে সুবিধার চেয়ে ঝুঁকি বেশি