তদন্ত প্রতিবেদন : স্পিডবোট দুর্ঘটনার পেছনে ৮ কারণ

তদন্ত প্রতিবেদন : স্পিডবোট দুর্ঘটনার পেছনে ৮ কারণ

মাদারীপুর প্রতিনিধি : মাদারীপুরের শিবচরে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় ২৭ জন নিহত হওয়ার পর ঘটিত জেলা প্রশাসনের তদন্ত দল পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করেছে। দুর্ঘটনার পেছনে আটটি কারণ দেখানো হয়েছে প্রতিবেদনে।

এছাড়াও চালক নেশাগ্রস্ত অবস্থায় অতিরিক্ত গতিতে বোট চালানোসহ ঘাটের ১৬টি অব্যবস্থাপনা আর ২৩ দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

রোববার বিকেলের দিকে তদন্ত দলের প্রধান মো. আজাহারুল ইসলাম মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার পেছনে যেসব কারণ উল্লেখ করা হয়েছে তা নিচে দেয়া হলো-

১. কোভিড-১৯ এর বিস্তার রোধকল্পে চলমান সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইজারাদার কর্তৃক স্পিডবোটটি শিমুলিয়া ঘাট থেকে কাঁঠালবাড়ী ঘাটে আসার সুযোগ করে দেয়

২. স্পিডবোট চালকের অসর্তকতা

৩. চালকের কোনো প্রশিক্ষণ না থাকা

৪. চালক নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বোট চালানো

৫. অতিরিক্ত স্পিডে বোটটি চালানো

৬. নৌ-চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকায় চালক কর্তৃক স্পিডবোডটি ঘাটে না ভেড়া

৭. বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ-পুলিশ কর্তৃক কোভিট-১৯ বিস্তার রোধকল্পে সরকারি নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা রাখতে না পারা

৮. ঘাটের অব্যবস্থাপনা। এছাড়া ঘাটের ১৬টি অব্যবস্থাপনার কথাও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে।

তদন্ত দলের প্রধান ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, আমরা তদন্ত দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। নৌ দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, উদ্ধারকৃত যাত্রী, বোট মালিক সমিতির প্রতিনিধি, ঘাটের বোট চালক, ট্রলার চালক ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। এছাড়া স্পিডবোট চালকের ডোপটেস্টের ফলাফল সংগ্রহ করে আটটি দুর্ঘটনার কারণ দেখিয়েছি। ঘাটের অব্যবস্থাপনার ১৬টি তথ্য তুলে ধরে সেসব বাস্তবায়নের জন্যে ২৩ দফা সুপারিশমালাও দিয়েছি।

এ ব্যাপারে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, তদন্ত দলের কারণগুলো খতিয়ে দেখে ঘাটের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া যেসব সুপারিশমালা দিয়েছেন, সেসব সরকারের উচ্চ মহলে পাঠানো হবে। যদি ঘাটের শৃঙ্খলা আনতে এসব সুপারিশ কাজে লাগে, তাহলে অবশ্যই বাস্তবায়ন করা হবে।

মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিরাজ হোসেইন, চরজানাজাত নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক, শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপনা বিভাগের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিকের সহকারী পরিচালক শাহাদাত হোসেন ও নারায়ণগঞ্জের কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার আসমাদুল ইসলাম।

এদিকে মাদারীপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বলা হয়েছে, স্পিডবোটের চালক শাহ-আলমের ডোপ টেস্টের মাধ্যমে গাঁজা ও ইয়াবা সেবনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তিনি দুর্ঘটনার দিনও মাদকসেবন করেন। নেশাগ্রস্ত থাকলে হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। এই কারণে দুর্ঘটনার কথাও তারা বলেন।

গত ৩ মে সোমবার ভোরে ঘাটে নোঙর করে রাখা বালুবোঝাই বাল্কহেডের সঙ্গে শিমুলিয়া থেকে আসা একটি দ্রুতগতির স্পিডবোটের ধাক্কা লাগলে ঘটনাস্থলেই ২৬ জনের মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তিন কার্যদিবসের পর রবিবার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দাখিল করে সেই কমিটি। এছাড়া নৌ-মন্ত্রণালয় থেকেও আরেকটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে।

এদিকে রোববার সকালে স্পিডবোটের মালিক চান্দু মোল্লাকে কেরানীগঞ্জ থেকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া শিবচর থানায় বোট মালিক, চালক ও ইজারাদারসহ চারজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে নৌ-পুলিশ।

More News...

পৃথিবীর বৃহত্তম দুর্নীতিতে বিজেপি: ভারতের অর্থমন্ত্রীর স্বামীর মন্তব্য

খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ: মির্জা ফখরুল