মহাসড়ক নয়, এ যেন ধানের চাতাল

মহাসড়ক নয়, এ যেন ধানের চাতাল

পরেশ গুপ্ত, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি : দিনাজপুরের ফুলবাড়ী-মধ্যপাড়া-রংপুর মহাসড়কটি এখন কৃষকদের ধান-ভূট্টা মাড়াই ও খড় শুকানোর চাতালে পরিণত হয়েছে। সড়কের ওপর সারি সারি ধানের পালা। সারাক্ষণ চলছে ধান ও ভুট্টার মাড়াই। সড়কজুড়ে শুকানো হচ্ছে ভূট্টা, ধান ও খড়। এতে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে টেম্পো, অটো রিকশা, মোটরসাইকেল ও বাইসাইকেল আরোহীরা। চলতি বছরে এই সড়কে ঘটে যাওয়া ১৭টি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন দুইজন, আহত হয়েছেন অন্তত ২৫ জন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বছর ভূট্টা ও বোরো মৌসুম (মে-জুন) এই দুইমাস সড়কটিতে সড়কের আশপাশের গ্রামের কৃষকদের দখলে থাকে। সড়কটির ফুলবাড়ী থেকে মধ্যপাড়া পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে গত বছর ১৫ থেকে ২০ জন দুর্ঘটনায় হতাহতের শিকার হয়েছেন। এ বছর এক মাসে ১৭টি দুর্ঘটনায় দুইজন নিহত ও অন্তত ২৫ জন গুরুতর আহত হয়েছেন।
সরেজমিন, ফুলবাড়ী থেকে মধ্যপাড়া পর্যন্ত অন্তত ১৫ কিলোমিটার সড়কজুড়ে দলদলিয়া ডাঙ্গাপাড়া, মহেষপুর, তেঁতুলিয়া, চিলাপাড়া, ভাগলপুর, ভালকা জয়পুর, মহিষবাতান, রসুলপুরসহ প্রায় ১০ গ্রামের কৃষকেরা পুরো সড়কটি দখলে নিয়ে মাঠ থেকে ধান কেটে সরাসরি মহাসড়কের ওপর পালা করে রাখছেন। এরপর চলছে যন্ত্র দিয়ে ধান মাড়াইয়ের কাজ। ধান মাড়াই শেষে সড়কজুড়ে ধান ও খড় শুকানো হচ্ছে। এতে বিশাল প্রশস্তের মহাসড়কটি এখন সরু সড়কে পরিণত হওয়ায় সেই সরু সড়কের ফাঁক ফোঁকড় দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে ছোটবড় যানবাহন। তবে করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বড় যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল সীমিত হওয়ায় এই হতাহতের সংখ্যা অনেক কমে এসেছে।
ফুলবাড়ী উপজেলার জিয়ার মোড় নামক স্থানের কৃষক নূরল ইসলাম বলেন, আগেরমত বাড়ির সামনে গৃহস্থরা ফাঁকা জায়গা ফেলে রাখেন না বলে ধান মাড়াই ও খড় শুকানোর জায়গার অভাবে বাধ্য হয়েই মহাসড়কের ওপরই ধান-ভূট্টা মাড়াই ও খড় শুকানোর কাজ করতে হচ্ছে।
মধ্যপাড়া পাথরখনির ঠিকাদার শাহিন হোসেন ও বিপুল চৌধুর বলেন, ব্যবসায়ীক কাজে দিনের ৩ থেকে ৪ বার মধ্যপাড়া পাথরখনিতে মোটরসাইকেলে যাতায়াত করতে হয়। মহাসড়কের বর্তমান অবস্থার কারণে বাড়ী থেকে বের হলে মনে হয় না যে, সুস্থ অবস্থায় বাড়ী ফিরতে পারবেন কী না?
কয়েকজন কৃষক, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসের চালকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, আগের মতো মানুষ আর ফাঁকা জায়গায় ধান ফেলে না রেখে সড়কে রাখছে। সড়কটিতে ধান কাটা মাড়াই মৌসুমে ছোট-বড় যানবাহনগুলো প্রচন্ড ঝুঁকিয়ে নিয়ে চলাচল করছে।
মাইক্রোবাস চালক সঞ্জিত প্রসাদ, মো. আলম ও জাকির হোসেন বলেন, এ মহাসড়কটিতে ধানকাটা মাড়াই মৌসুমে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে যানবাহন চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। এসবের কারণে কার ও মাইক্রোসের নিয়ন্ত্রণে রাখা মুশকিল হয়ে পড়ে। ফলে ভয়ে ভয়ে ওই রাস্তায় চলাচল করতে হচ্ছে।
দিনাজপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনিতি চাকমা বলেন, বার বার নিষেধ করার পাশাপাশি এই প্রক্রিয়া বন্ধের জন্য বেশ কয়েকজনকে সড়ক বিভাগ থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

More News...

১৭৩ জন বাংলাদেশী মিয়ানমার কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন

বিড়ির শুল্ক প্রত্যাহারসহ চার দাবিতে পাবনায় মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান