করোনা হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থাই নেই

করোনা হাসপাতালে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থাই নেই

নিউজ ডেস্ক : ৫৭ বছর বয়সী নাজমা বেগম ভর্তি আছেন রাজধানীর মহাখালীর করোনা হাসপাতালে। করোনায় আক্রান্ত হওয়া এই নারীর সিটি স্ক্যান পরীক্ষা করাতে হবে। কিন্তু হাসপাতালে নেই সে পরীক্ষার ব্যবস্থা। এখন স্বজনেরা পড়েছেন বিপাকে। নাজমা বেগমকে নিরাপদে এই হাসপাতাল থেকে বের করে অন্য হাসপাতালে নিয়ে সিটি স্ক্যান পরীক্ষার ব্যবস্থা করছেন তাঁরা।

নাজমা বেগমের ভাগনে সিব্বির আহমেদের সঙ্গে সোমবার সকালে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘এটা করোনা চিকিৎসার বিশেষ হাসপাতাল। অথচ এখানে পরীক্ষার সুবিধা এখনো চালুই হয়নি। করোনা রোগীদের এভাবে টানাহেঁচড়া করাটা ভোগান্তির।’

এদিকে ডিএনসিসি ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সোমবারই হাসপাতালটিতে সিটি স্ক্যান যন্ত্র বসানো হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে এই হাসপাতালেই সিটি স্ক্যান পরীক্ষা করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া জরুরি বিভাগের রোগীদের ক্ষেত্রে প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার ব্যবস্থা আছে। তবে ভর্তি রোগীদের জন্য সে ব্যবস্থা নেই।

হাসপাতালের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা চিকিৎসার জন্য বিশেষ এই হাসপাতালে গুরুতর রোগীর জন্য করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। এখানে ইসিজি, সিটি স্ক্যান, ব্লাড টেস্টের জন্য রোগীকে নিয়ে স্বজনদের ছুটতে হয় অন্য হাসপাতালে। এ ছাড়া প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার জন্যও অন্য হাসপাতালে যেতে হয় রোগী ও স্বজনদের।

জানতে চাইলে হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, সিটি স্ক্যান যন্ত্রটি মঙ্গলবার থেকে চালু হবে। সাধারণ রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থাও দ্রুত শুরু হবে। করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থাপনায় যা যা দরকার, তা শুরু হয়েছে এই হাসপাতালে। হাসপাতালের শুরুতে অনেক সংকট থাকলেও এখন দিন দিন সক্ষমতা বাড়ছে।

কমেছে রোগীর চাপ
গত ১৮ এপ্রিল হাসপাতালটি উদ্বোধন করা হয়। রোগী ভর্তি শুরু হয় অবশ্য এর পরদিন। উদ্বোধনের প্রথম সপ্তাহে রোগীর চাপ বেড়েছিল রাজধানীর মহাখালীর ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে। রাজধানীসহ সারা দেশ থেকে জরুরি এবং শ্বাসকষ্ট থাকা রোগীরা এই হাসপাতালে ছুটে আসছিলেন। তবে সেই রোগীর চাপ কমেছে গত সপ্তাহ থেকে।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্বোধনের পর থেকে এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে ৯০০ রোগী চিকিৎসার জন্য এসেছেন। এর মধ্যে এই হাসপাতালে ৩৪৫ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। আর এ পর্যন্ত ১১৫ জন করোনা রোগী মারা গেছেন।
হাসপাতালটির পরিচালক বলেছেন, ৬০ বছরের বেশি ব্যক্তিরা মারা যাচ্ছেন। দুজনের বয়স অবশ্য ৫০-এর নিচে। একজন মারা গেছেন, যার বয়স ৩০–এর নিচে। এ পর্যন্ত এই হাসপাতালে মারা গেছেন ১১৫ জন। গত রোববার এই হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ১২ জন মারা যান।

হাসপাতালের পরিচালক এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, সংক্রমণ কমার কারণে গত কয়েক দিনে রোগীর চাপও হাসপাতালে কমে এসেছে। আইসিইউতে চাপ গত সপ্তাহের তুলনায় কমেছে। জটিল রোগীরা এ হাসপাতালে আসেন, ফলে মৃত্যুর হার সংখ্যাগতভাবে একটু বেশি দেখাচ্ছে।

করোনা চিকিৎসায় বিশেষায়িত বৃহত্তম এ হাসপাতালটির কার্যক্রম বেসামরিক ও সামরিক কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে পরিচালিত হচ্ছে। তবে হাসপাতালটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে থাকছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দেশের যেকোনো অঞ্চলের করোনা আক্রান্ত বা করোনা উপসর্গ রয়েছে, এমন রোগী এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারবেন। এই হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধাসহ ২১২টি শয্যা আছে। এর মধ্যে ১১২টি আইসিইউ এবং ১০০টি এইচডিইউ (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট)। বিশেষ সুবিধাসহ ২৫০টি শয্যা আছে।

এই শয্যাগুলোতে কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেন দেওয়ার এবং হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলার সুবিধা আছে। এখানে ডেডিকেটেড ৪৮৮টি শয্যা আছে। এই শয্যাগুলোতে সিলিন্ডার ও অক্সিজেনের ব্যবস্থা থাকছে। আর ডায়ালাইসিস সুবিধাসহ ৪টি শয্যা আছে। এ ছাড়া জরুরি বিভাগে শয্যা আছে ৫০টি।

ওষুধ না থাকার অভিযোগ
হাসপাতালে রোগীদের স্বজনেরা জানান, রোগীদের জন্য এই হাসপাতাল থেকে সব ওষুধ পাওয়া যায় না। জটিল রোগীদের ওষুধের পাশাপাশি সাধারণ কোনো ওষুধও হাসপাতাল থেকে দেওয়া হয় না। বেলা দেড়টার দিকে স্ত্রীর জন্য একটি ক্যানুলা ও ইনজেকশন কিনতে বের হন মো. লিটন মিঞা। তাঁর স্ত্রী রামেলা বেগমকে সকালেই এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি জানান, ছয়তলার এইচডিইউতে তাঁর স্ত্রী ভর্তি আছেন। সেখানে কর্তব্যরত নার্সরা তাঁকে রক্ত জমাট বাঁধা ঠেকাতে একটি ওষুধ, ইনজেকশন ও ক্যানুলা কিনে আনতে বলেন।

অথচ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত ২৬ এপ্রিল জানায়, ওই হাসপাতালে করোনা চিকিৎসায় সব ধরনের ওষুধ বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য রোগের ওষুধও বিনা মূল্যে হাসপাতালের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়। তবে ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ বা ক্যানসারের মতো জটিল রোগ থাকা রোগীদের বিশেষ ওষুধ সরবরাহে হাসপাতালটির সীমাবদ্ধতা আছে বলে স্বীকার করেন হাসপাতালটির পরিচালক। প্রথম আলো

More News...

র‍্যাবের নতুন মুখপাত্র হলেন কমান্ডার আরাফাত

৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া