বিভিন্ন জাতির ধ্বংসের কারণ

বিভিন্ন জাতির ধ্বংসের কারণ

মুফতি মাহফূযুল হক
চলতি রমজান মাসের ষষ্ঠ তারাবি আজ অনুষ্ঠিত হবে। আজকের খতমে তারাবিতে তিলাওয়াত করা হবে সুরা আরাফের ১২ নম্বর আয়াত থেকে সুরা আনফালের ৪০ নম্বর আয়াত পর্যন্ত। আজকের তারাবিতে পঠিত কোরআনের অংশে থাকবে বিভিন্ন অবাধ্য, খোদাদ্রোহী সম্প্রদায়ের ওপর আল্লাহর আজাব ও গজব পাঠানোর আলোচনা ও আমাদের জন্য কঠিন সতর্কবার্তা। নবীরা নিজ নিজ সম্প্রদায়কে কী বলেছিলেন, জবাবে সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় লোকরা কী বলেছিলেন, ফলে আল্লাহ কী করেছেন, কীভাবে তাদের সমূলে নির্মূল করেছেন, কীভাবে তাদের শাস্তি দিয়েছেন সেসব বর্ণনাই আজকের তারাবির প্রধান পাঠ। বর্তমান সময়ে চলমান কভিড-১৯ নামক মহামারীর সময়ে এ আয়াতের শিক্ষা, তাৎপর্য ও করণীয় বিষয়ের প্রতি গভীর মনোনিবেশ দেওয়া দরকার।

সুরা আরাফের ৬৫ থেকে ৮৭ নম্বর আয়াতগুলোয় পূর্ববর্তী আদ, সামুদ, কওমে লুত ও মাদায়েন এই চার সম্প্রদায়ের অবাধ্যতা এবং গজবে ধ্বংস হওয়ার আলোচনা রয়েছে। আদ জাতির নবী ছিলেন হজরত হুদ (আ.), সামুদ জাতির নবী ছিলেন হজরত সালেহ (আ.), কওমে লুতের নবী ছিলেন হজরত লুত (আ.), আর মাদায়েনের নবী ছিলেন হজরত শোয়াইব (আ.)। আদ জাতিকে আজাব দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে মূর্তিপূজা পরিত্যাগ না করার কারণে। সামুদ জাতিকে ভূমিকম্প দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে আল্লাহর নিদর্শন বিশেষ একটি উট হত্যা করার কারণে। কওমে লুতকে ভূখণ্ড উল্টে পাথর বৃষ্টির দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছে সমকামিতার কারণে। মাদায়েন জাতিকেও ভূমিকম্প দ্বারা ধ্বংস করা হয়েছে। তাদের গুরুতর কয়েকটি অপরাধ হলো এক আল্লাহর আনুগত্য না করা, মাপে কম দেওয়া, সম্পদ আত্মসাৎ করা, মানুষকে ধর্ম পালনে বাধা দেওয়া।

আজাব ও গজব দিয়ে ওইসব জাতিকে ধ্বংস করার বিবরণ দেওয়ার পর মহান আল্লাহ বলছেন, ‘আমি যেকোনো জনপদে নবী পাঠিয়েছি, তার অধিবাসীদের অবশ্যই অর্থ-সংকট ও দুঃখ-কষ্টে আক্রান্ত করেছি, যাতে তারা বিনয় অবলম্বন করে। তারপর আমি অবস্থা পরিবর্তন করেছি। দুরবস্থার স্থানে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দিয়েছি, এমনকি তারা সমৃদ্ধিশালী হয়ে ওঠে এবং বলতে শুরু করে, দুঃখ ও সুখ তো আমাদের বাপ-দাদারাও ভোগ করেছে। অতঃপর আমি অকস্মাৎ তাদের এভাবে পাকড়াও করি যে, তারা (আগে থেকে) কিছুই টের পায়নি। যদি সেসব জনপদবাসী ইমান আনতো ও তাকওয়া অবলম্বন করত তবে আমি তাদের জন্য আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী উভয় দিক থেকে বরকতের দরজাসমূহ খুলে দিতাম। কিন্তু তারা (সত্য) প্রত্যাখ্যান করল। সুতরাং তাদের ক্রমাগত অসৎ কর্মের পরিণামে আমি তাদের পাকড়াও করি। এবার বলো, (অন্যান্য) জনপদবাসী কি এ বিষয় থেকে সম্পূর্ণ নির্ভর হয়ে গেছে যে, কোনো রাতে তাদের ওপর আমার শাস্তি এ অবস্থায় আপতিত হবে, যখন তারা থাকবে ঘুমন্ত? এই জনপদবাসীর কি এ বিষয়ের (ও) কোনো ভয় নেই যে, তাদের ওপর আমার শাস্তি আপতিত হবে পূর্বাহ্ণে, যখন তারা খেলাধুলায় মেতে থাকবে? তবে কি এসব লোক আল্লাহ প্রদত্ত অবকাশ (এর পরিণাম) সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছে? (যদি তাই হয়) তবে (তারা যেন স্মরণ রাখে) আল্লাহ প্রদত্ত অবকাশ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে কেবল তারাই বসে থাকে, যারা শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যারা কোনো ভূখণ্ডের বাসিন্দাদের (ধ্বংসপ্রাপ্তির) পর তার উত্তরাধিকারী হয় তারা কি এই শিক্ষা লাভ করেনি যে, আমি চাইলে তাদেরও তাদের কোনো গুনাহের কারণে কোনো মুসিবতে আক্রান্ত করতে পারি? এবং (যারা হঠকারিতাবশত এ শিক্ষা গ্রহণ করে না) আমি তাদের অন্তরে মোহর করে দিই, ফলে তারা কোনো কথা শুনতে পায় না। এই হচ্ছে সেসব জনপদ, যার ঘটনাবলি তোমাকে শোনাচ্ছি। বস্তুত তাদের কাছে তাদের রাসুলরা স্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে এসেছিল, কিন্তু তারা আগে যা প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাতের ইমান আনার জন্য কখনো প্রস্তুত ছিল না। যারা কুফর অবলম্বন করে আল্লাহ তাদের অন্তরে এভাবেই মোহর করে দেন। আমি তাদের অধিকাংশের ভেতরই অঙ্গীকার রক্ষার মানসিকতা দেখতে পাইনি। প্রকৃতপক্ষে আমি তাদের অধিকাংশকেই পেয়েছি অবাধ্য।’ (সুরা আরাফ : ৮৮-১০২)

More News...

শাওয়ালের ছয় রোজার ফজিলত

চাঁদ দেখা যায়নি, ব্রুনাই-মালয়েশিয়ায় রোজা শুরু মঙ্গলবার